পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৮২ হাজার কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ হাইকোর্টের
পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ওপর ক্রমশ চাপ বাড়ছে। গতকাল বুধবার কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে বলেছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য রাজ্যে ৮২ হাজার কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই বাহিনী চেয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে আবেদন করার নির্দেশও দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আগামী ৮ জুলাই পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন। এ নিয়ে রাজ্যের নির্বাচন কমিশন যেভাবে কাজ করেছে, তাতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ।
গত মঙ্গলবার রাজ্য নির্বাচন কমিশন পশ্চিমবঙ্গের ২২ জেলার জন্য ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর আবেদন করেছিল। সাধারণভাবে একেকটি কোম্পানিতে ১০০ থেকে ১৩৫ সদস্য থাকেন। তাই ২২ কোম্পানির অর্থ হলো বড়জোর তিন হাজার আধা সামরিক বাহিনী। বিরোধীদের বক্তব্য, মাত্র তিন হাজার আধা সামরিক বাহিনী দিয়ে রাজ্যে ভোট করানো সম্ভব নয়।
১৫ জুন কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন, পুরো রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পঞ্চায়েত ভোট করাতে হবে। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল রাজ্য সরকার। সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন।
বিরোধীদের তরফে রাজ্য বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা ও বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং মালদা জেলার কংগ্রেস নেতা আবু হাসেম খান চৌধুরী মামলা করেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, রাজ্যের নির্বাচন কমিশন আদালত অবমাননা করছে।
বিজেপির অভিযোগে, ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোট করার লক্ষ্যে ৮২ হাজার কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল রাজ্যে। অথচ এবারে চাওয়া হয়েছে মাত্র ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই সংখ্যা একেবারেই যথেষ্ট নয়।
এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম আগামী মাসের পঞ্চায়েত নির্বাচনে নিরাপত্তার স্বার্থে অন্তত ৮২ হাজার কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে বলে রায় দেন। সংখ্যা এর চেয়ে বেশি হলে আদালতের আপত্তি নেই।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি শিবজ্ঞানম। তিনি বলেন, ‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক, কমিশনারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করতে হচ্ছে। আপনারা দয়া করে হাইকোর্টের নির্দেশ পালন করুন।’
বিচারপতি শিবজ্ঞানম আরও বলেন, ‘২০১৩ সালে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের যে ভূমিকা ছিল, এখন তা দেখে আমরা অবাক হচ্ছি। এই আদালত প্রথমে নির্দেশ দিয়েছিলেন, সব স্পর্শকাতর এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। এরপর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সব জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। সেই নির্দেশকে সমর্থন করেছেন সুপ্রিম কোর্ট। তারপরও যেভাবে জেলাপিছু এক কোম্পানি করে বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে, তা দেখে মনে হচ্ছে, কমিশন আদালতের নির্দেশ পালন করতে চাইছে না।’
পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে সিবিআইয়ের তদন্তের নির্দেশ
পঞ্চায়েত ভোট নিয়েও কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা—সিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্ট। সম্ভবত এর আগে কখনো পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে সিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ পশ্চিমবঙ্গে দেওয়া হয়নি। এই তদন্তের নির্দেশও নিঃসন্দেহে চাপ বাড়াবে রাজ্য সরকারের ওপর।
হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়া ফুল মহকুমার একটি ঘটনায় এই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের আরেক বিচারপতি অমৃতা সিনহা। উলুবেড়িয়া-২ ব্লকে কাশ্মীরা বিবি ও ওমজা বিবি নামের দুই সিপিএমকর্মী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, মনোনয়ন খতিয়ে দেখার প্রক্রিয়ায় তাঁদের আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। এ দুই প্রার্থী আদালতে আরও অভিযোগ করেন, তাঁরা মনে করছেন, তাঁদের জমা দেওয়া মনোনয়নপত্র বিকৃত করা হয়েছে। সরকারি ব্লক উন্নয়ন কর্মকর্তা তাঁদের অভিযোগ জমা নেননি।
এ ঘটনায় বিচারপতি অমৃতা সিনহা সিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। আদালত এদিন বলেছেন, আগামী ৭ জুলাইয়ের মধ্যে সিবিআইকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।