দিল্লির আকাশে কৃত্রিম মেঘ, অপেক্ষা বৃষ্টির
না কমানো গেল বাজির ব্যবহার, না বোঝানো গেল ভারতের পাঞ্জাব–হরিয়ানা–পশ্চিম উত্তর প্রদেশের কৃষকদের। খেতে উৎপাদিত ফসলের গোড়া জ্বালানো বন্ধ করা গেল না। ফলে হেমন্তের শুরু থেকে রাজধানী দিল্লির ভয়ংকর দূষণের মোকাবিলায় শেষ পর্যন্ত কৃত্রিম বৃষ্টির আয়োজন করেছে দিল্লির বিজেপি সরকার।
আজ মঙ্গলবার দিল্লির বিস্তীর্ণ এলাকায় দফায় দফায় ‘ক্লাউড সিডিং’ বা মেঘ বোনা হয়েছে। শুরু হয়েছে বৃষ্টির প্রতীক্ষা। আজ মঙ্গল ও আগামীকাল বুধবার সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, দিল্লিজুড়ে বৃষ্টির।
কৃত্রিম বৃষ্টির এই দায়িত্ব নিয়েছে উত্তর প্রদেশের কানপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি)। মঙ্গলবার দুপুরে কানপুর থেকে দিল্লি উড়ে আসে বিশেষভাবে ডিজাইন করা সেসনা উড়োজাহাজ। দিল্লির বুরারি, উত্তর করোলবাগ, ভোজপুর, ময়ুর বিহার ও সড়কপুর এলাকার আকাশে উড়ে উড়ে মেঘের মধ্যে মেশানো হয় ‘সিলভার আয়োডাইড’ ও ‘সোডিয়াম ক্লোরাইড’–এর মতো রাসায়নিক। এই রাসায়নিক মেঘে মিশে বৃষ্টিকণা তৈরিতে সাহায্য করে। আশা, সেই বৃষ্টিই ঝরতে ঝরতে কমিয়ে দেবে বাতাসের দূষণ।
দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী মনজিন্দর সিং সিরসা গণমাধ্যমকে বলেন, কিছুটা কৃত্রিম বৃষ্টি হলেও বাতাসের দূষণমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেবে। এভাবে তিন–চারবার ‘ক্লাউড সিডিং’ বা মেঘ তৈরি করা হবে বিভিন্ন জায়গায়। সেই মেঘ ঝরে স্থানীয়ভাবে যে বৃষ্টি হবে, তাতে সেই অঞ্চলের দূষণ কমবে।
কয়েক বছর ধরেই শীতের প্রাক্কালে এভাবে দিল্লির দূষণ কমানোর চেষ্টা চলছিল। আম আদমি পার্টির (আপ) সরকার প্রথম এই বিষয়ে উদ্যোগী হয়। গত বছর বিজেপি তাদের হারিয়ে দিল্লি দখল করে। এত বছর ধরে দূষণ রোধে ব্যর্থতার জন্য আপ সরকারের তুমুল সমালোচনা করা বিজেপিও এবার দীপাবলিতে বাজি পোড়ানো বন্ধে ব্যর্থ হয়।
সুপ্রিম কোর্ট হিন্দুত্ববাদী প্রতিরোধের দরুন শেষ পর্যন্ত ‘গ্রিন ক্র্যাকার’ বা দূষণমুক্ত ‘সবুজ বাজি’ পোড়ানোর অনুমতি দিতে বাধ্য হন। বিজেপি ও অন্যান্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠন প্রচার চালায়, দীপাবলিতে বাজি পোড়ানোর বিরোধিতা করা সনাতন ধর্মের বিরোধিতার শামিল।
‘গ্রিন ক্র্যাকারের’ আড়ালে এবারও দিল্লিতে দেদার পোড়ে দূষণযুক্ত বাজি। দিল্লির আকাশ আজও দূষণাচ্ছন্ন। বাতাসে ‘একিউআই’ বা দূষণের পরিমাণ মঙ্গলবারেও বিপজ্জনক। কৃত্রিম বৃষ্টি তা কতটা কাটাতে পারবে, সেদিকে দিল্লিবাসীর দৃষ্টি নিবদ্ধ।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই দিল্লি মেঘাচ্ছন্ন। এই মেঘ আসলে দূষণের আস্তরণ। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের তথ্য দেখাচ্ছে, রাজধানীর মোট ৩৮টি এলাকার মধ্যে ২৭টিতে দূষণ মাত্রাছাড়া।
দিল্লি সরকার কানপুর আইআইটিকে কৃত্রিম বৃষ্টি বর্ষণের যে দায়িত্ব দিয়েছে, তাতে খরচ হবে ৩ কোটি ২১ লাখ রুপি। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাভাবিক ও অনুকূল পরিস্থিতিতে ‘ক্লাউড সিডিং’–এর ১৫ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে বৃষ্টি হয়। ঠান্ডা ও শুষ্ক মেঘে বৃষ্টি ঝরতে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
তবে বাতাসের বেগ যদি বেশি থাকে, আর্দ্রতার পরিমাণ ২০ শতাংশের কম হয় অথবা পরিস্থিতি অনুকূল না থাকে, বৃষ্টি না–ও হতে পারে।
এবার কানপুর আইআইটির এই আয়োজন সফল হয় না ব্যর্থ, বৃষ্টি ঝরে কি না, কিংবা ঝরলেও দূষণ কমে কি না, তা দেখতে দিল্লিবাসী আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে।