রাশিয়ার সঙ্গে কি সম্পর্ক শেষ হয়ে যাচ্ছে ভারতের

জো বাইডেন, ভ্লাদিমির পুতিন ও নরেন্দ্র মোদি
ছবি : রয়টার্স

রাশিয়ার ট্যাংক যখন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের মাটিতে সদর্পে এগিয়ে যাচ্ছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে যখন সবচেয়ে বড় যুদ্ধ শুরুর দামামা বাজছিল, তখন বিশ্বব্যাপী একটা চাপ তৈরি হয়েছিল। পশ্চিমা–সমর্থিত কিয়েভ অথবা মস্কো—যেকোনো একটি শক্তিকে বেছে নিতে হবে।

তখন থেকে প্রায় ১৮ মাস নয়াদিল্লি দুই পক্ষের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছিল। ইউক্রেনে হামলার জন্য তারা পুরোনো বন্ধু রাশিয়ার নিন্দা জানায়নি। কিন্তু আগামীকাল শনিবার যখন নয়াদিল্লিতে জি–২০ শীর্ষ সম্মেলন শুরু হবে, তখন হয় তো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একটি পক্ষ নিতে বাধ্য হতে পারেন।

ভারত–রাশিয়া স্নায়ুযুদ্ধ যুগের বন্ধু। ১৯৬৫ সালে ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধে মধ্যস্থতার পর তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৭১ সালে ভারতের প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় ক্রুজ ও ডেস্ট্রয়ার মোতায়েন করেছিল। কারণ, ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গোপসাগরে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছিল।

ঐতিহাসিকভাবে ভারত প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে কূটনৈতিক বোঝাপড়ায় রাশিয়ার ওপর অনেকখানি নির্ভর করেছে। বিনিময়ে ১৯৭৯ সালে রাশিয়ার আফগানিস্তানে আগ্রাসনকে সমর্থন জানিয়েছিল ভারত।

প্রায় চার দশক পর ভারত বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতির শীর্ষ কয়েকটি দেশের কাতারে উঠে এসেছে। এখনো সে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের সমালোচনা করেনি। যুদ্ধ শুরুর পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীনের পর রাশিয়ার তেলের তৃতীয় বৃহত্তম ক্রেতাদেশ ভারত। ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাকে থোড়াই কেয়ার করে তারা তেল কিনছে।

কিন্তু বাতাস বদলে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ভারত এখন খোলামেলা কথা বলতে শুরু করেছে। গত কয়েক বছরে সে রাশিয়া থেকে অস্ত্র কেনা কমিয়ে দিয়েছে। এর বদলে সে এখন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স আর ইসরায়েল থেকে অস্ত্র কিনছে। আবার রাশিয়ার তেলের দামও বাড়ছে। ফলে সেই তেল কেনা তার জন্য এখন আর লোভনীয় নয়। এরই মধ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জি–২০ সম্মেলনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ পশ্চিমা নেতারা এই সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন।

তাহলে কি রাশিয়া থেকে দূরে সরে যাচ্ছে ভারত? বিশ্বব্যবস্থায় এটার কী অর্থ হতে পারে?

যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ট্রানজিশনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দুই পক্ষ আরও ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। কিন্তু সেটা রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক হালকা করার বিনিময়ে নয়। এই সম্পর্ক ঐতিহাসিক
অশোক কান্থ, ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব

সংক্ষিপ্ত উত্তর হচ্ছে, খুব শিগিগরই ভারত পুরোনো বন্ধু রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক চুকে ফেলবে, এমন সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেছেন, মস্কোর সঙ্গে বন্ধুত্ব নয়াদিল্লির ভূরাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিতে পারে। এ ছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তার গ্রহণযোগ্যতাকে ম্লান করে দিতে পারে। সুতরাং রাশিয়া–ভারত বন্ধুত্বের গতিপথ পরিষ্কার, ধীরে ধীরে এই সম্পর্ক আলগা হয়ে যাবে। কারণ, মোদি সরকার পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে বেশি আগ্রহী।

ঐতিহাসিক সম্পর্ক
স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক অব্যাহত ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরও সেই সম্পর্ক সুদৃঢ় আছে। ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে যদি মোদি সরকার ক্রেমলিনের ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাকে প্রত্যাখ্যান করে থাকে, তার একটা ইতিহাস আছে। ১৯৯৮ সালে নয়াদিল্লি পরমাণু পরীক্ষা চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও কিছু দেশ ভারতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিলে রাশিয়া সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছিল।

ভারতের বিমানবাহিনীর ৭০ শতাংশ যুদ্ধবিমান, নৌবাহিনীর ৪৪ শতাংশ যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন এবং সেনাবাহিনীর ৯০ শতাংশ সাঁজোয়া যান ও সামরিক সরঞ্জাম রাশিয়ার তৈরি। ব্রাহমস সুপারসরিন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করেছিল। এই অস্ত্র এখন ফিলিপাইনে রপ্তানি করা হচ্ছে। ২০১২ সালে রাশিয়া থেকে একটি পরমাণু সাবমেরিন ইজারা নিয়েছিল ভারত।

ভারতের বেসামরিক পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণেও অংশীদার ছিল রাশিয়া। কুদানকুলামে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে তারা দিল্লিকে সহায়তা করেছিল। সেই পরমাণু কমপ্লেক্স এখন সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।

অন্যদিকে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে তিন দশক ধরে ভারতের সম্পর্কে নাটকীয়ভাবে শক্তিশালী হচ্ছে। বিশ্বে রাশিয়ার প্রভাবও দুর্বল হয়ে গেছে। তবে মস্কো যাতে ক্ষুব্ধ না হয়, সে ব্যাপারে নয়াদিল্লি খুবই সতর্ক।

ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব অশোক কান্থ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ট্রানজিশনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দুই পক্ষ আরও ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। কিন্তু সেটা রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক হালকা করার বিনিময়ে নয়। এই সম্পর্ক ঐতিহাসিক। একে–অন্যের যে সহায়ক শক্তি, সেটায় কোনো পরিবর্তন হয়নি।’

আসলে রাশিয়া হচ্ছে ভারতের কাছে অতীত। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে ভারতের ভবিষ্যৎ
হ্যাপিমন জ্যাকব, সহযোগী অধ্যাপক, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়

অন্তত ইউক্রেন যুদ্ধ দুই দেশের পুরোনো বন্ধুত্বকে আবারও জোরদার করেছে। যুদ্ধ শুরুর আগে রাশিয়ার কাছ থেকে কোনো তেল কিনত না ভারত। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর যখন রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এল, তখন ভারত হয়ে উঠল তাদের কাছ থেকে শীর্ষ তেল আমদানিকারক দেশ। ভারতের মতো বন্ধুদেশকে তখন রাশিয়া মূল্যছাড়ে তেল সরবরাহ শুরু করে।

সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের তথ্যমতে, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ভারত রাশিয়া থেকে ৩ হাজার ৪০০ কোটি ইউরো (৩ হাজার ৬০৭ কোটি মার্কিন ডলার) মূল্যের তেল আমদানি করেছে। চলতি বছর রাশিয়ার সমুদ্রজাত অপরিশোধিত তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হয়ে ওঠে ভারত।  

নির্ভরতা সরে যাচ্ছে
এসআইপিআরআইয়ের তথ্যমতে, ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী দেশ হচ্ছে রাশিয়া। কিন্তু গত এক দশকে রাশিয়া থেকে ভারতের অস্ত্র আমদানি ৬৫ শতাংশ কমে গেছে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতের অস্ত্র আমদানি ৫৮ শতাংশ বেড়েছে।

একইভাবে ফ্রান্স থেকে ভারতের অস্ত্র কেনা ৬ হাজার শতাংশ বেড়েছে। কেবল ২০২১ সালে এই দেশ থেকে ১৯০ কোটি ডলারের সামরিক সরঞ্জাম কিনেছে ভারত। ইসরায়েল থেকে অস্ত্র আমদানি ২০ শতাংশ বেড়েছে। অবশ্য টাকার অঙ্কে পরিমাণটা কম, ২০ কোটি ডলার।

এটা নিশ্চিত, এখনো ভারতের অস্ত্র সরবরাহে রাশিয়া বড় অংশীদার।
কান্থ বলেন, ‘যেকোনোভাবে হোক, আমরা অল্প সময়ের মধ্যে দুই দেশের সম্পর্ককে নিভিয়ে দিতে পারি না।’

নয়াদিল্লিভিত্তিক চিন্তক প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ভিজিটিং ফেলো হরি সেশাসায়ী বলেন, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স যদি অস্ত্র সরবরাহের ক্ষেত্রে রাশিয়ার ওপর থেকে ভারতের নির্ভরতা কমিয়ে আনে, তবু নয়াদিল্লি নিজেকে পশ্চিমাদের মিত্র বলবে না। এটা এই কারণে যে ভারত কোনো এক পক্ষে যাওয়ার অবস্থায় নেই এবং তারা নিজেদের অভ্যন্তরীণ অগ্রাধিকারকে বিপন্ন করতে চায় না।

শুধু যে সামরিক সরঞ্জামের ক্ষেত্রে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বদলে যাচ্ছে, সেটা নয়। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে শুরুতে কিছু বলতে না চাইলেও গত সেপ্টেম্বরে মোদি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে বলেছিলেন, ‘এখন আর যুদ্ধের দিন নেই।’

তখন থেকেই ভারত নিজেকে যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। মোদি বেশ কয়েক দফা রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জাপানে জি–৭ সম্মেলনের এক ফাঁকে তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

হরি সেশাসায়ী বলেন, তবে মস্কোর সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক এবং রাশিয়া থেকে সাম্প্রতিক তেল আমদানির কারণে ভারত নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিজের ভাবমূর্তি ও আস্থা গড়ে তুলতে এখনো সংগ্রাম করে যাচ্ছে। কারণ, তুরস্ক ও সৌদি আরবও মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নেওয়ার চেষ্টা করছে, যাদের ভাবমূর্তি ভারতের চেয়ে অনেকটা ‘নিরপেক্ষ’ বলা যায়।

‘রাশিয়া হচ্ছে ভারতের অতীত’
ভারতের নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরস্ত্রীকরণ স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হ্যাপিমন জ্যাকব রাশিয়া থেকে ভারতের তেল কেনার ক্ষুধাকে ‘সুবিধাবাদী ক্রয়’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলছিলেন, ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বিভিন্ন উৎস থেকে তেল কিনতে হয়।

জ্যাকব বলেন, তবে এই জ্বালানি ক্রয় দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতির ইঙ্গিত দেয় না। তিনি বলছেন, আসল বিষয়টা হচ্ছে, দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক এবং দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ খুবই কম।

ভারত সরকারের তথ্যই বলছে, ৪ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থীসহ রাশিয়ায় মাত্র ১৪ হাজার ভারতীয় বসবাস করছেন। ভারতে বসবাসরত রুশ নাগরিকদের কোনো সঠিক হিসাব নেই। তবে জ্যাকব বলেন, এই সংখ্যা রাশিয়ায় বসবাসরত ভারতীয়দের চেয়ে কমই হবে। অন্যদিকে প্রায় ৪৯ লাখ ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। এর বাইরে যুক্তরাজ্য ও ইইউভুক্ত দেশগুলোতে প্রায় ২৮ লাখ ভারতীয় আছেন।  

জ্যাকব বলছিলেন, ‘কতজন ভারতীয় রুশ ভাষায় কথা বলেন? সেই সংখ্যা খুবই কম।। তরুণদের জিজ্ঞেস করুন, রাশিয়ার প্রতি তাঁদের কোনো মোহ আছে কি না। উত্তর হবে ‘না’। আসলে রাশিয়া হচ্ছে ভারতের কাছে অতীত। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে ভারতের ভবিষ্যৎ।’

২০২৩ সালের মার্চের সমাপ্ত অর্থবছরে মস্কো ও নয়াদিল্লির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একই সময়ে বাণিজ্য হয়েছে ১২ হাজার ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার। অর্থাৎ রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এক–তৃতীয়াংশ। তা–ও হয়েছে রাশিয়া থেকে অভূতপূর্ব তেল আমদানির পর।

অনুরূপভাবে ২০২৩ সালের মার্চের সমাপ্ত অর্থবছরে মস্কো ও নয়াদিল্লির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একই সময়ে বাণিজ্য হয়েছে ১২ হাজার ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার। অর্থাৎ রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এক–তৃতীয়াংশ। তা–ও হয়েছে রাশিয়া থেকে অভূতপূর্ব তেল আমদানির পর।

ভারত ঐতিহাসিকভাবে একটা বিষয় নিয়ে চিন্তিত ছিল। সেটা হচ্ছে তারা যুক্তরাষ্ট্রের কতটা আস্থা অর্জন করতে পারবে। কারণ, তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের পুরোনো বন্ধুত্ব রয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, অংশীদার হিসেবে রাশিয়ার অবস্থান নাটকীয়ভাবে কমে গেছে।

আরেকটা বড় কারণ আছে। রাশিয়ার সঙ্গে দ্রুত চীনের সম্পর্ক শক্তিশালী হচ্ছে, যা ভারতের জন্য মোটেই স্বস্তিদায়ক নয়। দুই দেশের এই সম্পর্ককে ভারত তার জন্য কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখছে।

রাশিয়া যেসব অস্ত্র ভারতের কাছে বিক্রি করেছে, সেগুলো চীনের কাছেও বিক্রি করছে বা করতে পারে। যেমন রাশিয়া এস–৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভারত ও চীন—দুই দেশের কাছে বিক্রি করেছে।

জ্যাকব বলেন, ভারতের আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে, প্রতিদ্বন্দ্বী চীন যাতে এভাবে রাশিয়ার সামরিক সহায়তা না পায়। অন্যভাবে চিন্তা করলে চীন ও ভারতের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে রাশিয়ার সক্ষমতাও খুব সীমিত।

অধিকন্তু ভূরাজনৈতিকভাবে ইন্দো–প্রশান্ত মহাসগরীয় অঞ্চলে ভারতের স্বার্থ জড়িয়ে গেছে। সেখানে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীন। সেখানে তার সহযোগীদের মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র।  

জ্যাকব বলেন, এসব বিষয় চিন্তা করলে রাশিয়া এখন আর ভারতের জন্য নিরপেক্ষ অংশীদার নয়। এমন নয় যে দুই দেশের মধ্য বিবাদ রয়েছে। তবে দুই দেশের মধ্যে এখন অন্য বাস্তবতা এসে ভর করেছে।