বিরোধীরা আর চার শঙ্করাচার্যের অনুপস্থিতিতে রামমন্দির উদ্বোধন করলেন মোদি

অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে এক পুরোহিতের কাছে আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন নরেন্দ্র মোদি। আজ ২২ জানুয়ারিছবি: এএনআই

ভারতের অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ সময় তিনি বলেন, ‘একদিন যাঁরা বলেছিলেন মন্দির তৈরি হলে দেশে আগুন জ্বলবে, আজ প্রমাণিত, তাঁরা ভুল ছিলেন। রামচন্দ্র বিবাদ নন, তিনি এ দেশের সমাধান। রাম আগুন নন, তিনি শক্তি। রাম শুধু আমাদের নন, তিনি সবার। তিনি শুধু বর্তমানের নন, তিনি চিরকালীন।’

এই অনুষ্ঠানে যোগ দেননি দেশের বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার আমন্ত্রিত সব নেতা। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েও আসেননি চার শঙ্করাচার্যের কেউই। তাঁদের মতে, অসমাপ্ত মন্দিরের উদ্বোধন ও সেখানে রাখা বিগ্রহের প্রাণ প্রতিষ্ঠা হিন্দুমতে অধর্ম। তা ছাড়া তাঁরা প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন, মন্দির উদ্বোধনের নামে যা হচ্ছে, তা ধর্ম নয়, পুরোটাই রাজনীতি।

অনুষ্ঠানে মোদি বলেন, রামমন্দির নিছকই একটি মন্দির নয়, এটাই ভারতের দর্শন। রাম ভারতের আস্থা, দেশের আধার। ভারতের বিচার, বিধান, চেতনা, প্রতিষ্ঠা। রাম নিত্য ও নিরন্তর। হাজার বছর ধরে ব্যাপ্তি তাঁর প্রভাব। ২০২৪ সালের ২২ জানুয়ারি শুধুই একটি তারিখ নয়, এই দিন থেকে শুরু হচ্ছে এক নতুন যুগ।

দেশি-বিদেশি অভ্যাগতদের উপস্থিতিতে আজ সোমবার রামমন্দিরের উদ্বোধন ও বিগ্রহে প্রাণ প্রতিষ্ঠার পর মন্দির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় এই মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা সময় রামচন্দ্রের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু এ দেশের বিচার বিভাগের সহায়তায় আইন মেনে এই মন্দির তৈরি হয়েছে।

বিচার বিভাগকে ধন্যবাদ জানিয়ে নরেন্দ্র মোদি বলেন, এতকাল রামলালাকে (শিশু রাম) তাঁবুতে থাকতে হয়েছে। আজ শুরু দেশের এক নতুন অধ্যায়। যুগ যুগ ধরে দেশবাসী যে স্বপ্ন দেখে এসেছেন, আজ তা সাকার। অনিন্দ্যসুন্দর মন্দিরে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হলো রামচন্দ্রের।

আজ সোমবার ভাষণপর্বে প্রধানমন্ত্রী রামের কাছে ক্ষমাও চেয়ে নেন। আবেগরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘আমাদের তপস্যায় অবশ্যই কিছু ঘাটতি ছিল। তাই এতকাল আমরা রামমন্দির তৈরি করতে পারিনি। সেই অসমাপ্ত কাজ এখন শেষ হয়েছে। আশা করি প্রভু রাম আমাদের ক্ষমা করবেন।’

আজ নির্দিষ্ট সময়েই হেলিকপ্টারে চড়ে অযোধ্যায় আসেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। বেলা ১১টার পর ঘিয়ে রঙের সিল্কের পাঞ্জাবি, ধুতি, জ্যাকেট ও অঙ্গবস্ত্র পরে তিনি মন্দির চত্বরে প্রবেশ করেন। থালাবোঝাই পূজার নৈবেদ্য নিয়ে পুরোহিতদের সঙ্গে ধীর পায়ে এগিয়ে যান নবনির্মিত মন্দিরের গর্ভগৃহে। সঙ্গে ছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবত, উত্তর প্রদেশের রাজ্যপাল আনন্দিবেন প্যাটেল ও মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। শুরু হয় রামলালা (শিশু রাম) বিগ্রহের প্রাণ প্রতিষ্ঠার পূজা–অর্চনা। খুলে দেওয়া হয় বিগ্রহের চোখের বাঁধন। পঞ্চপ্রদীপ জ্বালিয়ে প্রধানমন্ত্রী রামের আরতি করেন।

আজ সোমবার দুপুর ১২টা বেজে ২৯ মিনিট ৩ সেকেন্ড থেকে শুরু হয়ে ১২টা বেজে ৩০ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড পর্যন্ত ছিল হিন্দুশাস্ত্রমতে শুভক্ষণ, যা ‘অভিজিৎ মুহূর্ত’ (বিশেষ মুহূর্ত) বলে পরিচিত। ওই সময়ের মধ্যেই বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণের মধ্য দিয়ে প্রাণ প্রতিষ্ঠা সম্পন্ন হয়।  প্রধানমন্ত্রীই ছিলেন এই অনুষ্ঠানের প্রধান যজমান।

প্রাণ প্রতিষ্ঠা ও মন্দির উদ্বোধনের জন্য ১১ দিন ধরে প্রধানমন্ত্রী মোদি ব্রত পালন ও নানা কৃচ্ছ্রসাধন করছিলেন বলে নিজেই জানিয়েছিলেন। উপবাসও নাকি করছিলেন। মন্দির উদ্বোধন ও প্রাণ প্রতিষ্ঠার পর প্রধানমন্ত্রীকে চরণামৃত খাইয়ে সেই ব্রত ভাঙান শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের গোবিন্দদেব গিরি মহারাজ।

প্রাণ প্রতিষ্ঠা ও মন্দির উদ্বোধনের পর সেখানেই শুরু হয় জনসভা। প্রধানমন্ত্রীর আগে ভাষণ দেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তাঁর ভাষণে ছিল রাজনৈতিক সুর। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সমাজবাদী পার্টির নাম না করে সেই আমলে অযোধ্যার ‘অরাজকতা’র প্রসঙ্গ টেনে আনেন তিনি। বলেন, অযোধ্যায় মন্দির পরিক্রমায় আর কেউ কোনো দিন বাধা দিতে পারবেন না। অলিগলিতে গুলির আওয়াজ শোনা যাবে না। রামনবমী বা দীপাবলিতে কারফিউ জারি হবে না। রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হবে রামরাজ্য।

যোগী আদিত্যনাথই ছিলেন এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোর একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী।