বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইয়ে অবশেষে কংগ্রেসের শরণাপন্ন হলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। আজ শুক্রবার নিজেই টুইট করে সে কথা জানিয়ে তিনি বলেন, অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক অর্ডিন্যান্সের (অধ্যাদেশ) বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য তিনি কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ও রাহুল গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছেন।
কেজরিওয়াল টুইটে লিখেছেন, বিজেপি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো নষ্ট করে দিতে চাইছে। ক্রমাগত আঘাত হানছে। এসবের পাশাপাশি দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করতে চান। আজ শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত কংগ্রেস অবশ্য এই বিষয়ে কিছু বলেনি।
দিল্লির নির্বাচিত সরকারের হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিতে কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি একটি অধ্যাদেশ জারি করে। সেই অধ্যাদেশ অনুসারে, রাজধানী রাজ্যের সরকারি আমলাদের নিযুক্তি ও বদলির ক্ষমতা কেন্দ্র নিজের হাতে রাখবে। সুপ্রিম কোর্টের রায় অকার্যকর করতে কেন্দ্রীয় সরকার এই সিদ্ধান্ত নেয়। রাজ্যের নির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা কার হাতে থাকবে, সে–সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিসহ পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের সর্বসম্মত রায় ছিল, পুলিশ, জমি ও আইনশৃঙ্খলা ছাড়া বাকি সব ক্ষমতা থাকবে দিল্লির নির্বাচিত সরকারের হাতে। কেন্দ্র নিযুক্ত উপরাজ্যপালের হাতে নয়।
সুপ্রিম কোর্ট এ কথাও বলেছিলেন, এটাই গণতন্ত্রের চাহিদা। সংবিধানের কাঠামোও এই যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পক্ষে কথা বলে।
সুপ্রিম কোর্টের এই রায় অকার্যকর করতে কেন্দ্রীয় সরকার প্রথমে রায় পর্যালোচনার আরজি জানায়। তারপর সুপ্রিম কোর্টে গরমের ছুটি পড়ে গেলে রাতে অধ্যাদেশ জারি করে। এর বিরুদ্ধে দিল্লি সরকার আইনি ব্যবস্থা ছাড়াও রাজনৈতিক মোকাবিলার পথে নামে।
মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল একে একে সব বিজেপিবিরোধী নেতা ও মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। প্রথমে তিনি বৈঠক করেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার ও উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবের সঙ্গে। তারপর চলে যান কলকাতায়। বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। মুম্বাই গিয়ে দেখা করেন শিবসেনা নেতা উদ্ধব ঠাকরে ও এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ারের সঙ্গে।
কেজরিওয়াল চান, ওই অধ্যাদেশ আইনে পরিণত করতে কেন্দ্র যে বিল আনবে তা যেন রাজ্যসভায় খারিজ হয়। সে জন্যই তিনি অন্যদের সঙ্গে কংগ্রেসেরও সমর্থন প্রত্যাশী।
রাজ্যসভায় বিজেপির গরিষ্ঠতা নেই। তবে বিজু জনতা দল, ওয়াইএসআর কংগ্রেস বা তেলুগু দেশমের মতো দলের সমর্থন পেলে সরকার যেকোনো বিল পাস করাতে পারে। সেটা যাতে না হয়, সে জন্য কেজরিওয়াল সচেষ্ট। পাশাপাশি গ্রীষ্মকালীন অবকাশের পর আইনি লড়াই তারা লড়বে সুপ্রিম কোর্টে।
কেজরিওয়ালের ডাকে কংগ্রেস কতটা সাড়া দেবে, এখনো সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। দলের পক্ষ থেকে আগেই বলা হয়েছে, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে দিল্লি ও পাঞ্জাব রাজ্যের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এই দুই রাজ্যের নেতৃত্ব আম আদমি পার্টির নানা কাজের কঠোর সমালোচক। আম আদমি পার্টিকে কংগ্রেসের একাংশ বিজেপির ‘বি টিম’ বলেও কিছুদিন আগে মনে করত। এই দল কংগ্রেসের ভোট কাটতে হিমাচল প্রদেশ, গোয়ায় ভোটে লড়েছে।
সম্প্রতি কর্ণাটকেও আম আদমি পার্টি ২০০ আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। এটা যেমন একটা বিষয়, তেমনই বিজেপির বিরুদ্ধে সার্বিক জোট গড়তে গেলে আম আদমি পার্টিকে উপেক্ষা করাও কঠিন। এই দুইয়ের মধ্যে কংগ্রেসকে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে হবে লোকসভা ভোটে বিজেপিবিরোধী বৃহৎ জোট গড়ার সম্ভাবনার ছবি সামনে রেখে।