শিক্ষকদের নিয়োগ বাতিল করে কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে কতটা বিপাকে পড়ছে তৃণমূল

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ফাইল ছবি: রয়টার্স

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গত শনিবার বিরোধীদলীয় বিজেপির নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, আগামী সপ্তাহের গোড়ায় একটি বোমা পড়বে, যাতে তৃণমূল বেসামাল হয়ে যাবে। আজ সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও মোহাম্মদ শাব্বার রশিদির বেঞ্চ ২০২৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনে (এসএসসি) নিয়োগপ্রক্রিয়া বাতিল করে ২৫ হাজার ৭৫৩ শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি খারিজ করে দিয়েছেন।

এ ছাড়া কলকাতা হাইকোর্টের ওই ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, অতিরিক্ত পদ তৈরির মাধ্যমে যাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের আগামী এক মাসের মধ্যে বেতনের টাকা সুদসহ ফেরত দিতে হবে।

স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচন চলাকালে এই রায়ের ফলে বিপদে পড়বে তৃণমূল কংগ্রেস। আজ সোমবারই আদালতে যে বিচারপতি এই মামলা প্রথম দিকে শুনছিলেন (তিনি প্রথমেই মামলা শোনেন এবং আট হাজারের বেশি চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন), সেই অভিজিৎ গাঙ্গুলী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করেছেন।

রায় ঘোষণার পর অভিজিৎ গাঙ্গুলী বলেন, যাঁরা যোগ্য প্রার্থী তাঁদের বঞ্চিত করা হয়েছে। তাঁদের ঠকিয়েছেন এই মিথ্যাচারী মুখ্যমন্ত্রী। বঞ্চিতদের মধ্যে হিন্দু–মুসলমান সবাই আছেন, সবার উচিত মমতাকে বর্জন করা।

লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুরের তমলুক আসন থেকে বিজেপি প্রার্থী করেছে অভিজিৎকে। রায় ঘোষণার পর একটু অস্বস্তিকর অবস্থায় থাকা অভিজিতের জেতার সম্ভাবনাও খানিকটা বেড়ে গেল।

সম্ভবত এমন রায় আসছে আন্দাজ করেই শুভেন্দু অধিকারী গত শনিবার বলেছিলেন, আগামী সপ্তাহের শুরুতে এমন একটা বোমা ফাটবে, যাতে তৃণমূল বেসামাল হয়ে যাবে। তারা কূলকিনারা পাবে না। অপেক্ষা করুন।

এখন দেখার বিষয়, এই নির্বাচন চলাকালে পুরো বিষয়টিকে কীভাবে মোকাবিলা করে তৃণমূল কংগ্রেস। এই রায়ের যে একটা নেতিবাচক প্রভাব আছে এবং তা আগামী ৬ দফার নির্বাচনে তৃণমূলকে সামলাতে হবে, সে কথা স্বীকার করে দলের এক সংসদ সদস্য আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দেখতে হবে, শীর্ষ নেতৃত্ব এই বিষয়ে আগামীদিনে কী সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করবেন নাকি অপেক্ষা করবেন এবং নজর রাখবেন, চাকরি হারানো ২৫ হাজার কর্মীরা সুপ্রিম কোর্টে যান কি না। বিষয়টি নিয়ে নির্দিষ্টভাবে তখনই কিছু বলা যাবে, যখন আমাদের শীর্ষ নেতৃত্ব একসঙ্গে বসে একটা সিদ্ধান্ত নেবেন।’

বিষয়টি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছেন, এই বিষয়ে এখনই তিনি কিছু বলবেন না।
পশ্চিমবঙ্গে আরও ছয় দফা নির্বাচন বাকি। ৪২ আসনের মধ্যে বাকি ছয় দফায় ৩৯ আসনে নির্বাচন হবে। অর্থাৎ প্রায় পুরো নির্বাচনপ্রক্রিয়াই পশ্চিমবঙ্গে বাকি। এই অবস্থায় ঘুরে দাঁড়াতে তৃণমূলকে আরও জোরালোভাবে আন্দোলনে নামতে হবে, হয়তো সুপ্রিম কোর্টেও যেতে হবে।

তবে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার আগে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বকে খতিয়ে দেখতে হবে, সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে আদৌ কোনো লাভ হবে কি না। কারণ, সুপ্রিম কোর্টের অতীত নির্দেশের ভিত্তিতেই আজ রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

অতীতে যখন হাইকোর্ট চাকরি বাতিল করেছিলেন, তখন চাকরি হারানো শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। সুপ্রিম কোর্ট তাঁদের চাকরি নিয়ে নেওয়ার ওপর স্থগিতাদেশ দেন। পাশাপাশি কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটি পাঠান। সুপ্রিম কোর্ট বলেছিলেন, কলকাতা হাইকোর্টে মামলাটি ছয় মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। সেই নির্দেশের ভিত্তিতে মামলাটি শেষ করে আজ রায় দিলেন কলকাতা হাইকোর্ট।

এখন দেখার বিষয়, নির্বাচন চলাকালে কত দিনের মধ্যে রাজ্য সরকার আবার সুপ্রিম কোর্টে যায় অথবা যাঁদের চাকরি গেছে, তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন কি না। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর, ভারতের গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে প্রবল চর্চা শুরু হয়েছে। এই চর্চার ক্ষতিকর দিক রোধে তৃণমূল কী ব্যবস্থা নেয়, সেই দিকে তাকিয়ে থাকবে সব পক্ষ।