বিজেপির ইশতেহারে মোদি গ্যারান্টির রমরমা

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিফাইল ছবি: এএনআই

সারা দেশের সব প্রচারমাধ্যমে বিজেপির বিজ্ঞাপনে সরকারের সাফল্যের খতিয়ান দেখিয়ে ও শুনিয়ে বলা হচ্ছে, এগুলো সব ট্রেলার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গ্যারান্টির অনেক কিছু এখনো বাকি। আগামী দিনে সেসব পূরণ করা হবে।

সেই ফিরিস্তি; অর্থাৎ তৃতীয়বার ক্ষমতাসীন হয়ে মোদি সরকার কী কী করবে, তা রোববার প্রকাশ করা হলো। বিজেপির নির্বাচনী ইশতেহার, যাকে তারা ‘সংকল্পপত্র’ বলছে, তাতে বকেয়া কাজগুলোর কথা শুনিয়ে বলা হয়েছে, দুর্নীতিগ্রস্তদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার অঙ্গীকার থেকে সরকার পিছু হটবে না। কঠোর সাজা দেওয়া হবে। এটাই মোদির গ্যারান্টি।

সেসব গ্যারান্টির অন্যতম দেশজুড়ে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করা। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ ও বিজেপির আদি অকৃত্রিম তিনটি প্রতিশ্রুতির দুটি ইতিমধ্যেই কার্যকর হয়েছে। অযোধ্যা বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে সেখানে রামমন্দির নির্মাণের কাজ শেষ হতে চলেছে। বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ধুমধামের সঙ্গে। তাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠাও করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতি ছিল জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা দেওয়া সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করার। সেটাও প্রায় পাঁচ বছর আগে করে দিয়েছে মোদি সরকার। তৃতীয়টি অভিন্ন দেওয়ানি বিধির প্রচলন। কয়েক বছর ধরে এই বিধি চালু করার কথা বিজেপি বলে আসছে। তাদের শাসিত রাজ্য উত্তরাখন্ডে ইতিমধ্যে ওই-সংক্রান্ত আইনও পাস হয়েছে। সংকল্পপত্রে বিজেপি বলেছে, তৃতীয় মোদি সরকার সারা দেশেই তা চালু করবে।

এই বিধি চালুর অর্থ, বিয়ে, বিবাহবিচ্ছেদ, উত্তরাধিকার, দত্তক গ্রহণ, সম্পত্তির অধিকারের মতো ক্ষেত্রগুলোয় কোনো ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক রীতিনীতি বা বিধি মানা হবে না। সর্বত্রই এক আইন প্রযোজ্য হবে। ফলে মুসলিম পারসেনাল ল-এর অস্তিত্ব বিলোপ হবে।

মোদি সরকারের আগামী দিনের গ্যারান্টির মধ্যে পড়ছে ‘এক দেশ এক ভোট’নীতিও। মোদি চান, সারা দেশের বিধানসভা ও লোকসভা ভোট একই সঙ্গে করিয়ে ফেলতে। এতে অনাবশ্যক খরচ কমবে। দেশের উন্নতি ও প্রগতির কাজ ব্যাহত হবে না। নাগরিকত্ব আইন নিয়ে দেশ-বিদেশে কম বিতর্ক হয়নি। বিজেপি বলেছে, এবার ক্ষমতায় এসে তারা এই আইনে উপযুক্তদের নাগরিকত্ব দেবে।

সাবেক রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে বিজেপি সরকার গত বছর এই লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করেছিল। সেই কমিটি তার প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে পেশও করেছে। তাতে ‘এক দেশ এক ভোট’-এর পক্ষে জোরালো সওয়াল করা হয়েছে। বিজেপির সংকল্পপত্রে মোদির গ্যারান্টির মধ্যে এটিও রয়েছে।

মোদি অনেকবারই বলেছেন, সারা দেশ তাঁর পরিবার। সেই পরিবারের সদস্যকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করে তিনি চারটি শ্রেণিতে বিভাজন করেছেন। গরিব, যুব, কৃষক বা অন্নদাতা ও নারী। শব্দগুলোর ইংরেজি ও হিন্দি আদ্যক্ষর মিলিয়ে তাঁর ভাষায় সেটি হলো ‘জ্ঞান’। তাঁর গ্যারান্টিতে এই চার শ্রেণিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, পরিবারের সদস্যদের জীবনযাপনের মানোন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিই মোদির লক্ষ্য।

বলা হয়েছে, ক্ষমতায় আরও একবার এসে তাঁরা দরিদ্রদের বিনা মূল্যে রেশন দেওয়া আরও পাঁচ বছর চালু রাখবেন। আয়ুষ্মান ভারত বিমা প্রকল্পের আওতায় আনা হবে ৭০ বছরের বেশি সব মানুষকে এবং জন-ওষুধ কেন্দ্রে ওষুধের দামে ৮০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে। কৃষকদের ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি সময়-সময় বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও তাকে আইনি বৈধতা দেওয়ার প্রশ্নে অবশ্য ইশতেহার নিরুত্তর। কর্মসংস্থানের জন্য শূন্য সরকারি পদে নিযুক্তি নিয়েও কিছু বলা হয়নি।

বিজেপির অন্যান্য প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে গরিবদের জন্য আরও ৩ কোটি পাকা বাড়ি তৈরি। ‘উজ্জ্বল’ প্রকল্পে আগে দেওয়া হয়েছিল সস্তায় রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার। এবার বলা হয়েছে, গরিবদের বাড়ি বাড়ি পাইপলাইন দিয়ে সস্তায় রান্নার গ্যাস পৌঁছে দেওয়া হবে। সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের মধ্য দিয়ে গরিবদের বিদ্যুতের বিল শূন্যে নামিয়ে আনা হবে। ‘মুদ্রা’ যোজনা প্রকল্পে ঋণের সর্বোচ্চ সীমা ১০ থেকে বাড়িয়ে ২০ লাখ রুপি করা হবে, যাতে কোটি কোটি ভারতীয় উদ্যোগপতি হতে পারেন। মুম্বাই ও আহমেদাবাদের মধ্যে বুলেট ট্রেন কবে চালু হবে, তা নিশ্চিত নয়। তবে সংকল্পপত্রে মোদির গ্যারান্টি, উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব ভারতেও একটি করে বুলেট ট্রেন চালানো হবে। এ জন্য সমীক্ষা শুরু হয়েছে।

ইশতেহার বা সংকল্পপত্র প্রকাশ অনুষ্ঠানের মধ্যমণি ছিলেন নরেন্দ্র মোদিই। সঙ্গে ছিলেন দলের সভাপতি জে পি নাড্ডা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণসহ অন্য শীর্ষ নেতারা।