ভারতে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মাহুতি

আত্মাহুতি দেওয়া কৃষক এম ভি থাংগাভেল
ছবি: এএফপি

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার হিন্দিকে দেশটির জাতীয় ভাষা করার উদ্যোগ নিয়েছে। হিন্দিভাষী নয়, এমন রাজ্যের লোকজন এর প্রতিবাদ করছেন। মাতৃভাষার পরিবর্তে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে দক্ষিণ ভারতের এক অশীতিপর নিজের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মাহুতি দিয়েছেন। আজ রোববার এ খবর জানিয়েছে পুলিশ।

আত্মাহুতি দেওয়া এম ভি থাংগাভেল দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের একজন কৃষক। তাঁর বয়স ৮৫ বছর। পুলিশ জানিয়েছে, থাংগাভেল নিজের গায়ে আগে কেরোসিন ও পেট্রল ঢেলে দেন। এরপর তাতে আগুন দিয়ে আত্মাহুতি দেন।

আত্মহত্যার আগে কৃষক থাংগাভেলের হাতে ছিল একটি প্ল্যাকার্ড। তামিল ভাষায় তাতে লেখা ছিল, ‘মোদি সরকারের হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা বন্ধ করো। কেন আমরা আমাদের সাহিত্যসমৃদ্ধ তামিল ভাষার পরিবর্তে হিন্দি ভাষা ব্যবহার করব? এতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’

স্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তা রোববার এএফপিকে জানান, কৃষক থাংগাভেল আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশের ওই কর্মকর্তা শুধু সেনথিল নামে নিজের পরিচয় দিয়ে আরও বলেন, আত্মহত্যার সময় তাঁর (কৃষক থাংগাভেল) হাতে কেন্দ্রীয় সরকারবিরোধী একটি ব্যানার ছিল।

থাংগাভেল গতকাল শনিবার তামিলনাড়ুর সালেম এলাকায় রাজ্যের ক্ষমতাসীন ডিএমকে পার্টির একটি কার্যালয়ের বাইরে গায়ে আগুন দেন। তিনিও এই দলের সদস্য ছিলেন।

ভারত একটি বহু ভাষাভাষী মানুষের দেশ। শতাধিক ভাষা ব্যবহার করে দেশটির জনগণ। সেখানে মাতৃভাষা সবার জন্য খুব সংবেদনশীল একটি বিষয়। শুধু উত্তর ভারতের রাজ্যগুলোতে হিন্দির ব্যবহার বেশি। সরকারি ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয় ইংরেজি। তবে রাজ্য সরকারগুলো স্থানীয় ভাষায় কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।  

ভারতে সর্বশেষ জনশুমারি হয়েছে ২০১১ সালে। তাতে দেখা যায়, দেশটির ৪৪ শতাংশের কম মানুষ হিন্দি ভাষায় কথা বলেন। কিন্তু গত মাসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর নেতৃত্বে একদল আইনপ্রণেতা হিন্দিকে জাতীয় ভাষা করার সুপারিশ করেন; এমনকি মেডিসিন ও প্রকৌশলের মতো কারিগরি বিষয়ে শিক্ষা হিন্দি ভাষাতে করার কথাও বলেন তাঁরা।  

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারি ভাষা হিসেবে ইংরেজির ব্যবহারকে ‘দাসত্বের মানসিকতা’ বলে সমালোচনা করে থাকেন। এর বদলে ভারতীয় ভাষার ব্যবহারে জোর দেন তিনি। কিন্তু বিরোধীরা মোদি সরকারের বিরুদ্ধে হিন্দি চাপিয়ে দিয়ে, বিশেষত দক্ষিণ ভারতকে খেপিয়ে তোলার অভিযোগ তুলেছেন।

দক্ষিণ ভারতের মানুষেরা প্রধানত দ্রাবিড় জাতিগোষ্ঠীর ভাষায় কথা বলে। ইন্দো-ইউরোপীয় জাতিগোষ্ঠীর ভাষাগুলোর চেয়ে এ ভাষা একেবারে আলাদা। হিন্দি ভাষা ইন্দো-ইউরোপীয় জাতিগোষ্ঠীর ভাষা। তাই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের হিন্দিকে জাতীয় ভাষা করার চেষ্টার তুমুল সমালোচনা চলছে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোয়।  

ভারত সরকারের ভাষানীতি নিয়ে যাঁরা সমালোচনা করে থাকেন, তাঁদের একজন ডিএমকের প্রধান ও তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন। এ ঘটনার পর তিনি থাংগাভেলের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে সরকারের ভাষানীতির প্রতিবাদ করতে গিয়ে চরমপন্থা অবলম্বন করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।  

মোদি সরকারের আধিপত্যবাদী আচরণের সমালোচনা করে এম কে স্ট্যালিন বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই আর একটি প্রাণও হারাতে দেওয়া যাবে না। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিকভাবে আমাদের লড়াই করতে হবে। বৈচিত্র্যময় এই সুন্দর দেশকে সংকীর্ণ মানসিকতা দিয়ে নষ্ট করতে দেব না।’