হিন্দু-মুসলমান রাজনীতি করি না: নরেন্দ্র মোদি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিফাইল ছবি: এএনআই

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাষণ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নোটিশের জবাবে বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা জানালেন, নির্বাচনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী অন্যায় ও আপত্তিকর কিছু বলেননি। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর হয়ে নাড্ডার চিঠি ইসিতে পৌঁছায়। সেদিনই নরেন্দ্র মোদি জানালেন, ‘হিন্দু–মুসলমান’ রাজনীতি তিনি করেন না। যেদিন করবেন, সেদিনই জনজীবনে (রাজনীতি) থাকার অধিকার হারাবেন।

বারানসি কেন্দ্রে মনোনয়ন জমা দিয়ে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ওই কথা জানিয়ে মোদি বলেন, ‘আমি অবাক! কে বলেছে বেশি সন্তানের কথা বললে বুঝতে হবে তার লক্ষ্য মুসলমান? অন্য গরিব পরিবারেও তো বেশি বাচ্চা হয়? যেখানে দারিদ্র্য, সেখানেই বেশি সন্তান। তা সে যে ধর্মই হোক না কেন। আমি কখনো হিন্দু–মুসলমান উচ্চারণ করিনি। বলেছি, বাচ্চা ততজনই হওয়া উচিত যতজন প্রতিপালন করা সম্ভবপর। এমন হওয়া উচিত নয় যাতে রাষ্ট্রকে ভরণপোষণ করতে হয়।’

মোদি আরও বলেন, ‘আমি কখনো হিন্দু–মুসলমান রাজনীতি করব না। এটা আমার প্রতিজ্ঞা।’

প্রথম দফার ভোটের পরই একাধিক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী মুসলমান–জুজু তুলে ধরেছিলেন। মুসলমানদের ভয় দেখিয়ে প্রকারান্তরে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোট চেয়েছিলেন। কংগ্রেসের নির্বাচনী ইশতেহার ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের দেওয়া এক ভাষণের অংশবিশেষ উল্লেখ করে রাজস্থানের এক জনসভায় বলেছিলেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে সাধারণ মানুষের সম্পত্তি কেড়ে তা বাঁটোয়ারা করবে যারা কাঁড়ি কাঁড়ি সন্তান উৎপাদন করে, যারা অনুপ্রবেশকারী তাদের।

ওই ভাষণে আপত্তি জানিয়ে কংগ্রেসসহ বিভিন্ন বিরোধী দল নির্বাচন কমিশনের কাছে নালিশ জানায়। ইসি বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডাকে চিঠি লিখে তার ব্যাখ্যা চায়। সেই ব্যাখ্যা ইসিকে পাঠানোর দিনেই মোদি বললেন, তিনি হিন্দু–মুসলমানের রাজনীতি করেন না। গঙ্গাবক্ষে নৌবিহারের মধ্যে জানালেন, ঈদের সময় তাঁদের বাড়িতে রান্না হতো না। মুসলমান বন্ধুদের বাড়ি থেকে খাবার আসত। মহররমের সময় তাজিয়া দেখতে দেখতে পথ চলতেন। সাধারণ মুসলমানেরা তাঁকে কত ভালোবাসেন, তিনি তাঁদের কত প্রিয়, সে কথাও জানালেন।

ইসিকে পাঠানো চিঠিতে নাড্ডা লিখেছেন, মোদি কোনো ভাষণেই কখনো অন্যায় কিছু বলেননি। প্রধানমন্ত্রীর সব ভাষণই তথ্যনির্ভর। বিরোধীদের ভাষণ শোনা শুধু গণতান্ত্রিক ধর্ম নয়, তাদের উদ্দেশ্য জানাটাও জরুরি। এই চিঠিতে নাড্ডা বলেছেন, বরং কংগ্রেস ও তার সঙ্গীরা ভোটব্যাংক রাজনীতি করে চলেছে। প্রধানমন্ত্রীর বিরোধিতা করে চলেছে। এবং সেটা করছে হিন্দু বিরোধিতার মধ্য দিয়ে। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, হিন্দু এ দেশের মূল ধর্ম। সেটাই ভারতের মূল ধর্মীয় ভিত। প্রাচীন সংস্কৃতিও।

মোদি ভাষণ দিয়েছিলেন ২১ এপ্রিল। ইসি সেই ভাষণের বিরুদ্ধে নিজে থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। কংগ্রেস ও বামপন্থীরা ওই ভাষণের বিরুদ্ধে আপত্তি জানায়। তারা বলে, মোদি ধর্মীয় আধারে ভোট চেয়েছেন যা আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধির পরিপন্থী। ইসি সঙ্গে সঙ্গেই কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বিজেপিও কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর দেওয়া এক ভাষণের বিরুদ্ধে নালিশ জানায়। ইসি সরাসরি মোদি বা রাহুলকে চিঠি না দিয়ে দুই দলের সভাপতিদের চিঠি পাঠিয়ে অভিযোগসংক্রান্ত জবাব চায়। বিজেপি দুই দফায় ১৫ দিন সময় নেয় উত্তর দেওয়ার।

কংগ্রেস সময় নেয় এক সপ্তাহ। কংগ্রেস সভাপতি আগেই সব অভিযোগ অস্বীকার করে চিঠি পাঠিয়েছেন। নাড্ডা চিঠি দিলেন গত মঙ্গলবার। এর মধ্যে কেটে গেছে দীর্ঘ ২৩টি দিন। হয়ে গেছে চার দফার ভোট। মোদি তাঁর মতো করে ভাষণ দিচ্ছেন, বিরোধীদের মতে যা ‘যথেচ্ছ মিথ্যাচার ও সাম্প্রদায়িক’।

জবাব পাওয়ার পর ইসি তার মতামত কবে জানাবে, কেউ জানে না। যদিও জানা, ধর্মের আধারে ভোট প্রার্থনা করার গুরুতর অভিযোগ থাকলেও গত ১০ বছরে নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে ইসি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়ে জবাব চাওয়ার সাহসও ইসি দেখাতে পারেনি।