মণিপুর হাইকোর্টে আদিবাসীদের নিয়ে বিতর্কিত অনুচ্ছেদ বাতিল

মেইতেই সম্প্রদায় তফসিলি আদিবাসী হিসেবে সংরক্ষণ পেতে পারে কি না, তা খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন মণিপুর হাইকোর্ট। এরপরই বিক্ষোভ শুরু করেন উপজাতিরা। শুরু হয় সংঘাত-সহিংসতাফাইল ছবি: এএনআই

ভারতের মণিপুরে গত বছরের মার্চের একটি আদেশের বিতর্কিত অনুচ্ছেদ বাদ দিয়ে নতুন আদেশ জারি করেছেন রাজ্য হাইকোর্ট। গতকাল বুধবার নতুন ওই আদেশটি জারি করা হয়। বিষয়টি আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যে এসেছে।

২০২৩ সালের মার্চে আদালতের একটি আদেশের এক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, তফসিলি আদিবাসীদের (সিডিউল ট্রাইব) তালিকায় মণিপুরের সংখ্যালঘু মেইতেই সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখতে। এই আদেশের পরেই উত্তাল হয়ে ওঠে মণিপুর। এরপর গত প্রায় এক বছরে ২০০ জনের বেশি মানুষ জাতিগত সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৫০ হাজারের বেশি।

মণিপুর হাইকোর্ট বলেছেন, ‘গত বছরের রায়ের বিতর্কিত অনুচ্ছেদ মুছে ফেলা হচ্ছে। রাজ্য সরকারকে মেইতেই সম্প্রদায়ের (তফসিলি আদিবাসী হিসেবে) অন্তর্ভুক্তির জন্য যে বিবেচনা ত্বরান্বিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, এই আদেশে তা সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো।’

অতীতে মেইতেই শ্রমিক সংগঠন নামে একটি সংস্থার আবেদনের ভিত্তিতে মামলাটির শুনানি চলছিল। ওই সংগঠন যে রিভিউ পিটিশন আদালতে দাখিল করেছিল, তার শুনানি শেষে বুধবার এ আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের বিচারপতি গোলমাই গাইফুলশিল্লু।

যে অনুচ্ছেদ বাদ গিয়েছে, সেখানে বলা হয়েছিল, রাজ্য সরকার ‘আদেশ প্রাপ্তির তারিখ থেকে তফসিলি উপজাতি তালিকায় মেইতেই সম্প্রদায়ের (সিডিউল ট্রাইব বা তফসিলি আদিবাসী হিসেবে) অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদনকারীদের মামলা বিবেচনা করবে এবং চার সপ্তাহের মধ্যে অবস্থান স্পষ্ট করবে।’

গত বছর মণিপুর বিধানসভার পার্বত্য অঞ্চল কমিটির চেয়ারম্যান ডিংগাংলুং গ্যাংমেই একটি বিশেষ আবেদনের (এসএলপি) মাধ্যমে আদেশটিকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ হাইকোর্টের আদেশের কঠোর সমালোচনা করেন। সুপ্রিম কোর্ট বলেন, মণিপুর হাইকোর্টের আদেশে শুধু যে তথ্যগত ভুল রয়েছে তা–ই নয়, তফসিলি জাতি এবং উপজাতি সম্প্রদায়ের শ্রেণিবিভাগ করার ক্ষেত্রেও আইনের বিভ্রান্তিমূলক ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

গতকালের আদেশের পরে মেইতেই সমাজের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। মণিপুরে একটি সার্বিক মেইতেই সংগঠনের সমন্বয় কমিটির মুখপাত্র খুরাইজাম আথোবা স্থানীয় প্রচারমাধ্যমে বলেছেন, এ বিষয়ে তাঁদের কোনো মতামত নেই। মণিপুর সরকারের তরফেও গতকালের আদেশ নিয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

এদিকে আদেশের পর কুকিসহ অন্যান্য আদিবাসী নেতাদের ফোরামের মুখপাত্র গিঞ্জা ভুয়ালজং বলেছেন, ‘মেইতেইরা দাবি করে, তাদের ইতিহাসের শুরু ৩০ খ্রিষ্টাব্দের আশপাশে। তারা একটি উন্নত জাতি। এ ধরনের একটি উন্নত জাতি এখন অনগ্রসর শ্রেণি (তফসিলি আদিবাসী) হওয়ার চেষ্টা করছে। এটা অযৌক্তিক এবং হাস্যকর। মেইতেই সম্প্রদায়ের আদিবাসী হতে চাওয়ার একমাত্র কারণ হলো আদিবাসীদের জমি দখল করা। কারণ, ভারতের সংবিধান আদিবাসীদের জমি শুধু আদিবাসীদেরই কেনার অনুমতি দেয়।’