আতিক আহমেদের খুনিদের কেন গুলি করেনি পুলিশ

আতিক আহমেদ ও তাঁর ভাই আশরাফ আহমেদকে গত শনিবার রাতে গুলি করার আগে পুলিশি পাহারায় তাঁদের হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল
ছবি: এএনআই

কথিত ‘এনকাউন্টার’–এর জন্য বেশ পরিচিতি পেয়েছে উত্তর প্রদেশ পুলিশ। ভারতের সবচেয়ে বড় এই রাজ্যের পুলিশ নাকি সামান্য উসকানি পেলেই অপরাধীদের গুলি করতেই বেশি ‘স্বাচ্ছন্দ্য’ বোধ করে। কিন্তু গত শনিবার রাতে প্রয়াগরাজে (পুরোনো নাম এলাহাবাদ) সাবেক সংসদ সদস্য আতিক আহমেদ ও তাঁর ভাই আশরাফ আহমেদকে খুব কাছ থেকে গুলি করে যখন সন্ত্রাসীরা হত্যা করেন, তখন সেখানে পুলিশ সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতি থাকলেও কেউ একটি গুলিও করেননি।

শনিবার রাতে শারীরিক পরীক্ষার জন্য ভাই আশরাফ আহমেদসহ আতিককে এলাহাবাদের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ। রাত সাড়ে ১০টার ঘটনা। হাসপাতালের সামনে গাড়ি থেকে নামিয়ে পুলিশ পাহারায় তাঁদের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এ সময় কয়েকজন সাংবাদিক তাঁদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। তখনই সাংবাদিক ছদ্মবেশে তিনজন অস্ত্রধারী আতিক আহমেদ ও তাঁর ভাইকে সামনে থেকেই গুলি করেন।

আততায়ী ছিলেন তিনজন। তাঁদের প্রত্যেকে বয়সে তরুণ। তাঁদের একজন প্রথমে আতিক আহমেদের মাথার বাঁ দিকের অংশে গুলি করেন। এরপর একে একে আতিককে কমপক্ষে নয়টি গুলি করা হয়েছিল। আর তাঁর ভাই আশরাফ আহমেদের গায়ে লেগেছে পাঁচটি গুলি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। আতিক ও তাঁর ভাইকে যখন এভাবে গুলি করা হচ্ছিল, তখন সেখানে দেড় ডজন পুলিশ সদস্য ছিলেন। কিন্তু আততায়ীদের প্রতিরোধ না করে তাঁরা নিরাপদ স্থানে চলে যান।

এভাবে ২২ সেকেন্ড ধরে আতিক ও তাঁর ভাইকে সামনে থেকে গুলি করা হয়। এ সময় সাংবাদিকেরা তাঁদের ক্যামেরাগুলো আততায়ীদের দিকে ধরে রেখেছিলেন। তাতে দেখা যায়, অস্ত্রধারী ঘাতকেরা তাঁদের হাত ওপরে তুলে ‘ধর্মীয় স্লোগান’ দিচ্ছিলেন। আশপাশে পড়ে ছিল তাঁদের পিস্তলগুলো। গুলি থেমে গেলে পুলিশ সদস্যরা তিন আততায়ীকে পাকড়াও করেন। এরপর সেখানে থাকা পুলিশের একটি গাড়িতে তিনজনকে তোলা হয় এবং সেখান থেকে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, সাংবাদিকদের সামনে টিভিতে ওই দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচারিত হওয়ার সময় প্রকাশ্যে এভাবে দুজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটলেও পুলিশ সদস্যরা তখন আততায়ীদের নিশানা করে গুলি ছোড়েননি কেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ বলেন, তাঁরা সম্ভবত প্রতিক্রিয়া দেখানোর সময় পাননি। কী হচ্ছে, অনেকে এটা বুঝে ওঠার আগেই গুলির ঘটনার সমাপ্তি ঘটে। গুলি শুরু হলেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে থাকা মানুষজনও ছোটাছুটি শুরু করে দেন।

উত্তর প্রদেশ রাজ্য পুলিশের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজিপি) একে জৈনও একই কথা বললেন। টাইমস অব ইন্ডিয়াকে তিনি বলেন, ঘটনাটি এত দ্রুত ঘটেছে যে পুলিশ সদস্যরা কিছু করার সময় পাননি। আরেকটি বিষয় হলো, আততায়ীদের গুলি করলে পেশাগত জায়গা থেকে পুলিশের জন্য তা ভালো সিদ্ধান্ত হতো না।

ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসের (আইপিএস) আরেকজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যদি ঘটনাস্থলেই পুলিশ গুলি করে তিন আততায়ীকে হত্যা করত, তাহলে এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য ঘটনা কখনো জানা যেত না। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠত, সব আলামত ধ্বংস করতে তারা এ কাজ করেছে।