ন্যাশনাল হেরাল্ড অফিসে তল্লাশি চালাল ইডি

রাহুল গান্ধীকে গতকাল মঙ্গলবার ১১ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে ইডি
ছবি: এএনআই

ন্যাশনাল হেরাল্ড পত্রিকার অর্থ তছরুপ মামলায় সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীকে জেরার পর এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) ওই সংবাদপত্রের অফিসসহ মোট ১২টি জায়গায় তল্লাশি শুরু করেছে। গতকাল মঙ্গলবার ন্যাশনাল হেরাল্ড পত্রিকার দিল্লি অফিস, অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেডের (এজিএল) দপ্তরসহ বিভিন্ন স্থানে এই তল্লাশি শুরু হয়। ইডি সূত্রের বরাতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, তল্লাশি শেষ হলে ইডি ন্যাশনাল হেরাল্ড ও এজিএলের বেশ কিছু সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারে।

তল্লাশি শুরুর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কংগ্রেস প্রতিবাদ জানায়। প্রচুর দলীয় কর্মী বাহাদুর শাহ জাফর মার্গে ন্যাশনাল হেরাল্ড অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বিক্ষোভ দেখানো হয় অন্যত্রও। দলের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ টুইট করে বলেন, ‘দিল্লির বাহাদুর শাহ জাফর মার্গে ন্যাশনাল হেরাল্ড-এর অফিসে তল্লাশি কংগ্রেসকে ধারাবাহিক আক্রমণেরই অঙ্গ। যাঁরাই সরকারের সমালোচক, তাঁদের বিরুদ্ধে সরকার এভাবেই প্রতিহিংসা চরিতার্থ করে চলেছে। এভাবে কংগ্রেসকে চুপ করিয়ে রাখা যাবে না।’ দলের আর এক মুখপাত্র নাসির হুসেন বলেন, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্বসহ বিভিন্ন অপারগতার জবাব সরকারের নেই। তাই বিরোধীদের চুপ করাতে এই ব্যবস্থা। তিনি বলেন, শুধু কংগ্রেস নয়, যারাই সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, তাদের এ ধরনের হেনস্তার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কংগ্রেস মাথা নোয়াবে না।

বিজেপি নেতা সুব্রমানিয়াম স্বামী ২০১২ সালে ন্যাশনাল হেরাল্ড-এর অর্থ তছরুপের অভিযোগে সোনিয়া, রাহুলসহ মোট আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, নয়াদিল্লি, মুম্বাই, ভোপাল, ইন্দোর, পাটনা, চণ্ডীগড়ে ন্যাশনাল হেরাল্ড-এর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৫ হাজার কোটি রুপির বেশি। এর কিছুটা বিক্রি করে কংগ্রেস দলের ৯০ কোটি রুপি ঋণ মেটানো যেত। কিন্তু তা না করে কংগ্রেস ঋণ মওকুফের মাধ্যমে আয়কর ফাঁকি দিয়েছে। আদালত ২০১৪ সালে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সমন পাঠিয়েছিল। সোনিয়া, রাহুলসহ কংগ্রেস নেতাদের আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিতে হয়। পরের বছর ইডির তৎকালীন যুগ্ম অধিকর্তা রাজেন কাটোচ অর্থ মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদনে জানিয়েছিলেন, কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। বন্ধ হয়ে যাওয়া তদন্ত পরে আবার শুরু হয়। রাহুল গান্ধীকে সম্প্রতি পাঁচ দিনে ৫০ ঘণ্টা জেরা করা হয়। সোনিয়া গান্ধীকেও জেরা করা হয় তিন দিন ধরে। রাহুলকে ১৫০টি ও সোনিয়াকে ১০০টি প্রশ্নের জবাব দিতে হয়েছে। এবার শুরু হলো তল্লাশি। ইডির সূত্র অনুযায়ী, দিল্লি ছাড়া মুম্বাইসহ অন্য যে শহরে ন্যাশনাল হেরাল্ড-এর সম্পত্তি আছে, সেখানেও তল্লাশি হবে।

ন্যাশনাল হেরাল্ড পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা জওহরলাল নেহরু। ১৯৩৮ সালে এই পত্রিকার জন্ম। পরাধীন ভারতে এই পত্রিকা স্বাধীনতা সংগ্রামের অঙ্গ ছিল। কংগ্রেসের মুখপত্র হয়ে উঠেছিল। যে সংস্থার হাতে এই পত্রিকার মালিকানা ছিল, তার নাম অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস। ২০০৮ সালে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। তত দিনে দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৯০ কোটি রুপি, যা ছিল কংগ্রেসের দেওয়া ঋণ। ইয়ং ইন্ডিয়ান নামে এক সংস্থা রুগ্ণ ন্যাশনাল হেরাল্ড ও এজিএল অধিগ্রহণ করে ৫০ লাখ রুপিতে। ওই অধিগ্রহণের ফলে ন্যাশনাল হেরাল্ড-এর সম্পত্তি ও যাবতীয় দেনার বহর চাপে ইয়ং ইন্ডিয়ানের ঘাড়ে। অধিগ্রহণের পর কংগ্রেস ওই ঋণ মওকুফ করে দেয়, যেহেতু তা আদায়ের কোনো সম্ভাবনা ছিল না। ইয়ং ইন্ডিয়ান সংস্থার ৭৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সোনিয়া ও রাহুলের। বাকি ২৪ শতাংশের মালিক কংগ্রেসের প্রয়াত নেতা মোতিলাল ভোরা, অস্কার ফার্নান্ডেজ, স্যাম পিত্রোদা, সুমন দুবে প্রমুখ।

কংগ্রেসের বক্তব্য, ন্যাশনাল হেরাল্ড-এর ঋণ মওকুফ বা সম্পত্তি হস্তান্তরের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ, ইয়ং ইন্ডিয়ান পুরোপুরি অলাভজনক সংস্থা ও ট্রাস্ট। কোনো শেয়ারহোল্ডার সংস্থা থেকে কোনো দিন এক পয়সাও নেননি। নিতে পারেনও না। সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকও কেউ নন। কাজেই আয়কর ফাঁকির অভিযোগ অবান্তর।