ভারতের লোকসভা নির্বাচনের সময় যে রাজনীতিকেরা কারাগারে থাকতে পারেন

তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করেছিলেন সিবিআইয়ের সদস্যরাফাইল ছবি: প্রথম আলো

কয়েক দিন আগে ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের মেয়ে বিধান সভার সদস্য কে কবিতাকে গ্রেপ্তার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (ইডি)। তদন্তকারী সংস্থার অভিযোগ, কে কবিতা দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরিওয়াল, মণীশ সিসোদিয়ার মতো আম আদমি পার্টির (আপ) নেতাদের সঙ্গে চক্রান্ত করে আবগারি নীতির সুবিধা নিতে তাদের ১০০ কোটি টাকা দিয়েছিলেন।

কবিতার দাবি, তিনি অন্যায় করেননি। পেছনের দরজা দিয়ে তেলেঙ্গানায় যাতে বিজেপি ঢুকতে পারে, মোদি সরকার ইডিকে কাজে লাগিয়ে তার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। ২৩ মার্চ পর্যন্ত কবিতা ইডি হেফাজতে থাকবেন। এরপর আদালত ঠিক করবেন, তিনি জামিন পাবেন নাকি তাঁকে ইডি হেফাজতে বা কারাগারে থাকতে হবে।

দিল্লির চিত্র

দিল্লিতে ওই আবগারি কেলেঙ্কারির অভিযোগে সাবেক মন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া, সংসদ সদস্য সঞ্জয় সিং ও নেতা বিজয় নায়ার জেলে।

মণীশ সিসোদিয়া গত বছরের মার্চ থেকে জেলে আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, আবগারি নীতি তৈরির সময় তিনি দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছিলেন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকেও এই দুর্নীতি নিয়ে জেরা করতে চায় ইডি। কেজরিওয়াল আগে ইডির কাছে গিয়ে তাদের প্রশ্নের জবাব দিয়ে এসেছেন। কিন্তু গত কয়েক মাসে তাকে বারবার ইডি ডাকলেও তিনি যাননি। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, ইডি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে তাঁকে ডাকছে।

আপ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈনকে বেআইনি অর্থ পাচার ও আয়ের সূত্র সম্পর্কে অস্বচ্ছতার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২০২২ সালের মে থেকে তিনি কারাগারে। ২৪ ঘণ্টা আগে সুপ্রিম কোর্ট সত্যেন্দ্র জৈনের জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।

এর আগে মণীশ সিসোদিয়া ও সঞ্জয় সিংয়ের কারাগারে থাকার মেয়াদও বাড়িয়ে দিয়েছেন আদালত।

একসময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিরন্তর লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আপ দিল্লিতে ক্ষমতায় এসেছিল। তাদের দলের অনেক নেতা এখন দুর্নীতির দায়ে কারাগারে।

পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা

পশ্চিমবঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এখনো কারাগারে। আরেক মন্ত্রী মানিক ভট্টাচার্যেরও একই অবস্থা। তৃণমূলের দুই যুব নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ও কুন্তল ঘোষও কারাগারে আছেন। নিয়োগ দুর্নীতিতে তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহাকেও সিবিআই গ্রেপ্তার করেছে।

রেশন দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে সাবেক মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালুকে। এই রেশন দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করতেই সন্দেশখালীতে শেখ শাহজাহানের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছিল ইডি। তাদের মারধর খেয়ে ফিরে আসতে হয়। দীর্ঘ বিক্ষোভের পর দীর্ঘদিন ধরে পালিয়ে থাকা শেখ শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারপর হাইকোর্টের নির্দেশে তাঁকে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

এর আগেই শাহজাহানের অনুগামী দুই তৃণমূল নেতা উত্তম সর্দার ও শিবু হাজরাকে গ্রেপ্তার করা হয়। শাহজাহান এখন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের হেফাজতে আছে। রেশন দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বাকিবুর রহমানসহ আরও কয়েকজনকে।
২০২২ সালে বীরভূম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল অনুব্রত মণ্ডলকে। তিনি এখনো কারাগারে। ফলে এই নেতাদের বাদ দিয়েই নির্বাচনী কৌশল তৈরি করতে হবে তৃণমূলকে।

তামিলনাড়ুর ঘটনা

তামিলনাড়ুতে ক্ষমতাসীন ডিএমকের মন্ত্রী পনমুদিকে তিন বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন মাদ্রাজ হাইকোর্ট। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল।

তামিলনাড়ুতে এক নারী সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অশোভন মন্তব্য করায় বিজেপি নেতা এস শেখরকে ১ মাসের জেল ও ১৫ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তবে লোকসভা ভোটের সময় তিনি অবশ্য কারাগারে থাকবেন না।

উত্তর প্রদেশে যা হয়েছে

উত্তর প্রদেশে বিজেপি বিধায়ক রামদুলার গোন্দকে নাবালিকা ধর্ষণের দায়ে ২৫ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ধর্ষিতাকে ১০ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন আদালত। পরে তাঁকে বিধানসভা থেকে বহিষ্কার করা হয়।

২০২৩ সালের আগস্টে বিজেপি সংসদ সদস্য রাম শঙ্কর কাথেরিয়াকে দাঙ্গা ও এক শিশুকে নির্যাতনের অভিযোগে দুই বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন আগ্রার আদালত। পরে আগ্রার জেলা ও দায়রা আদালত তাঁকে সব অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়েছেন।

গত জানুয়ারিতে বিজেপির বিধায়ক সুরেশ্বর সিংয়ের বিরুদ্ধে ২১ বছরের পুরোনো একটি মামলায় সাজা ঘোষণা করেন আদালত। সেখানে তাঁর দুই বছরের জেল হয়। দুই দিন পর জেলা বিচারক এ রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেন। এই দুই বিজেপি নেতা ভারতে লোকসভা ভোটে জড়িত থাকতে পারবেন।

নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ

কংগ্রেস নেতা সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধী এখন জামিনে আছেন। ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় তাঁদের বিরুদ্ধে অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগ আছে। ছত্তিশগড়ে কংগ্রেসের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত চলছে। ফলে নির্বাচনী প্রচারণা বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা নেই তাদের।

কর্ণাটকের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পার বিরুদ্ধে শিশুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে এবং তাঁর বিরুদ্ধে পসকো আইনে মামলা করা হয়েছে।