ইলন মাস্কের ভারত সফর পেছানোর কারণ কী

ইলন মাস্কফাইল ছবি: রয়টার্স

টেসলা ও স্পেসএক্সের মালিক মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের আগামীকাল রোববার দুই দিনের সফরে ভারতে আসার কথা ছিল। ঠিক ছিল এই সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করবেন। আরও ঠিক ছিল, তিনি ভারতে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিতে পারেন।

কিন্তু আজ শনিবার সকালে ইলন নিজেই জানিয়েছেন, বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার কাজেই তিনি আটকে পড়েছেন। তাই এখনই ভারত সফরে যেতে পারছেন না।

সিএনবিসির খবর অনুযায়ী, ২৩ এপ্রিল টেসলার এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে ইলনকে উপস্থিত থাকতে হবে। তাই এখনই তাঁর ভারতে যাওয়া হচ্ছে না। বছরের শেষের দিকে এ সফরের সম্ভাবনা রয়েছে।

১০ এপ্রিল ইলন জানিয়েছিলেন, ভারতে গিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করতে উৎসুক। এখন প্রশ্ন উঠছে, এত বড় সংস্থার প্রধান ২৩ এপ্রিলের বৈঠকের কথা না জেনেই সফরের দিনক্ষণ তৈরি করে ফেলবেন? এতখানি এগিয়ে সফর পিছিয়ে দিলেন?

এই প্রশ্নের কোনো আনুষ্ঠানিক সদুত্তর কারও কাছে নেই। যদিও সফর পেছানোর নেপথ্য কারণ হিসেবে উঠে আসছে ভারতের নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আপত্তির কথা। ভারতে এই মুহূর্তে লোকসভার নির্বাচন চলছে। মোট সাত দফার মধ্যে প্রথম দফার ভোট হয়েছে গতকাল শুক্রবার। সারা দেশে এখন নির্বাচনী আচরণবিধি বহাল। এই সময় সরকার নীতিগত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এমন কিছু ঘোষণা করতে পারে না, যা নির্বাচনে প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলতে পারে। তেমন কিছু করার অর্থ নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ হওয়া। সেই অপরাধে প্রার্থীর পদ খারিজ করে দেওয়ার ক্ষমতাও ইসির আছে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক সূত্র অনুযায়ী, ইলন ভারতে এসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি ডলার লগ্নির কথা ঘোষণা করলে তাতে আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ হতো। সে ক্ষেত্রে দায় থেকে অব্যাহতি পেতেন না প্রধানমন্ত্রী মোদি। তাই এ বিষয়ে সরকারকে ইসি নাকি মৌখিকভাবে সতর্কও করেছে। তারপরই তড়িঘড়ি সফর পেছানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। যদিও এই জল্পনার সত্যতা নিয়ে ইসি বা সরকার কোনো মহলই মন্তব্য করেনি।

মাত্র কয়েক দিন আগে ভারতীয় গণমাধ্যম এএনআইকে প্রধানমন্ত্রী মোদি এক সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। তাতে ইলন সম্পর্কে প্রশ্ন করে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি নাকি মোদির সমর্থক? ইলন নিজেই নাকি তা বলেছিলেন? জবাবে মোদি বলেন, সেটা একটা দিক। কিন্তু অন্য দিকটা হলো, ইলন ভারতের সমর্থক। সাক্ষাৎকারে মোদি বলেছিলেন, ২০১৫ সালে তিনি যখন ইলনের কারখানা দেখতে গিয়েছিলেন, তখন তিনি বাইরে ছিলেন, কিন্তু সব কাজ ফেলে চলে এসেছিলেন।

যেসব বিদেশি গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা ভারতে লগ্নি করবে, তাদের রপ্তানি করা গাড়ির ওপর শুল্ক কমানোর নীতির কথা সরকার ঘোষণা করেছে। বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির সংস্থা টেসলা তারপরই ভারতে বিনিয়োগ করার কথা ভাবে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর ভারতের বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারের দিকে তারা নজর দিয়েছে। মহাকাশসংক্রান্ত ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ নীতিতেও ভারত সরকার বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে। ইলনের কাছে সেটাও বিনিয়োগের বড় ক্ষেত্র।