সেবির তদন্তে সমর্থন, আদানিকে অব্যাহতি দিলেন ভারতের সুপ্রিম কোর্টও
হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শেয়ার কারচুপির মামলায় আদানি গোষ্ঠী ও ভারতের শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ডকে (সেবি) স্বস্তি দিলেন সুপ্রিম কোর্ট। আজ বুধবার সর্বোচ্চ আদালত জানিয়ে দেন, সেবির তদন্তে তাঁরা কোনো রকম হস্তক্ষেপ করবেন না।
সেবিকে বাদ দিয়ে বিশেষ তদন্ত দল গঠনেরও প্রশ্ন নেই।
সুপ্রিম কোর্ট রায়ে বলেন, তদন্তের ক্ষেত্রে সেবি ‘ঢিলেঢালা’, এমন কোনো কিছু প্রমাণিত হয়নি। মোট ২২টি অভিযোগের মধ্যে তারা ২০টির তদন্ত শেষ করেছে। বাকি দুই তদন্তও তিন মাসের মধ্যে শেষ করা হবে।
প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জে বি পর্দিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রর বেঞ্চ জানিয়ে দেন, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার ক্ষমতায় সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। সেভাবে হস্তক্ষেপের ক্ষমতা খুবই সীমিত। সুপ্রিম কোর্ট সেবিকে নির্দেশ দিয়েছেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে তাদের সব তদন্ত শেষ করতে হবে।
আইনজীবী বিশাল তিওয়ারি, এম এল শর্মা, কংগ্রেস নেতা জয়া ঠাকুর ও অনামিকা জয়সোয়াল এসব মামলা করেছিলেন। রায় ঘোষণার সময় বিচারপতিরা বলেন, হিনডেনবার্গের মতো কোনো সংস্থা কিংবা খবরের কাগজের প্রতিবেদন পৃথক তদন্তের ভিত্তি হতে পারে না। সরকারি কোনো নিয়ন্ত্রকের ক্ষমতার প্রতি ওই ধরনের প্রশ্ন আস্থাবর্ধকও নয়। ওই ধরনের প্রতিবেদনে দেওয়া তথ্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। কিন্তু সেবির তদন্তের প্রতি সন্দেহ করার মতো সুনির্দষ্ট প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা যায় না।
আদানি গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান গৌতম আদানি আজ বুধবার ‘এক্স’–এ সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সত্যমেব জয়তে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যাঁরা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ। দেশের অগ্রগতিতে আমাদের সামান্য অবদান অব্যাহত থাকবে। জয় হিন্দ।’
আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সেবির বেঁধে দেওয়া নিয়মবিধি ভাঙার বহু অভিযোগ উঠেছিল। হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, ১০ বছর ধরে কারচুপি করে আদানি গোষ্ঠী তাদের নথিভুক্ত সংস্থাগুলোর শেয়ারমূল্য বাড়িয়ে গেছে। সেবির বিধি অগ্রাহ্য করে ভুঁইফোড় বিদেশি সংস্থাকে দিয়ে নিজেদের শেয়ার কিনিয়েছে।
একটি হলফনামায় সেবির সদস্য সিরিল শ্রফের বিষয়টিও উল্লেখ ছিল। তিনি সেবি সদস্য হিসেবে ‘ইনসাইডার ট্রেডিং’-এর তদন্তের দায়িত্বে থাকা কমিটিতে ছিলেন। তাঁর মেয়ের সঙ্গে গৌতম আদানির ছেলের বিয়ে হয়েছে। কাজেই এ তদন্তে স্বার্থের সংঘাত রয়েছে বলে অভিযোগ। হলফনামায় বলা হয়েছিল, আদানি গোষ্ঠী যাতে লাভবান হয়, এমনভাবে সেবির নিয়মকানুনেরও পরিবর্তন করা হয়েছিল।
একটি হলফনামা অনুযায়ী, ডিরেক্টরেট অব রেভেনিউ ইন্টেলিজেন্স ২০১৪ সালে সেবির চেয়ারম্যানের কাছে আদানি–সম্পর্কিত এক চিঠি পাঠিয়েছিলেন। সেই চিঠিতে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার কারচুপি নিয়ে সেবিকে সতর্ক করা হয়েছিল। চিঠির সঙ্গে দুটি নোট ও একটি সিডি পাঠানো হয়েছিল বলে হলফনামার দাবি, যাতে নাকি ২ হাজার ৩২৩ কোটি রুপির দুর্নীতির অভিযোগ ছিল।