যোগী মৃত্যুর বিষয় এড়িয়ে গেলেও নিহতদের পরিবারের প্রতি শোক জানালেন মোদি

উত্তর প্রদেশের বারানসিতে মোদির সঙ্গে প্রার্থনায় মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথফাইল ছবি: এএনআই

মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্য সরকার আজ বুধবার বিকেল পর্যন্ত কোনো উচ্চবাচ্য করেনি। অথচ দুপুর পৌনে ১২টাতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করলেন। আহত ব্যক্তিদের সুস্থতা কামনা করে জানালেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে তিনি নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ রাখছেন।

গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাত ও আজ বুধবারের ভোরে প্রয়াগরাজে (সাবেক এলাহাবাদ) মহাকুম্ভে ‘মৌনী অমাবস্যা’ উপলক্ষে ‘অমৃতস্নান’ করতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে বহু মানুষ হতাহত হয়েছেন। অথচ হতাহতের বিষয় নিয়ে রাজ্য প্রশাসন নীরবতা অবলম্বন করেছে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সংবাদমাধ্যমে ‘কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন’ জানিয়ে বলেন, কেউ গুজবে কান দেবেন না। সংগমস্থলে যাওয়ার চেষ্টা না করে সবাই যেন নিকটবর্তী ঘাটে স্নান করেন।

মুখ্যমন্ত্রীর ওই বিবৃতিতে স্পষ্ট, নিহত ও আহতের সংখ্যা জানাতে তাঁর প্রশাসন অনিচ্ছুক। তাই তিনি বিষয়টি অনুচ্চারিত রাখেন। শুধু তা–ই নয়, ওই দুর্ঘটনায় কারও যে মৃত্যু হয়েছে, সেই তথ্যও তিনি স্বীকার করেননি। অথচ দুপুর পৌনে ১২টায় প্রধানমন্ত্রী মোদি বুঝিয়ে দিলেন, দুর্ঘটনায় অনেকেই হতাহত হয়েছেন। তাঁর এই শোকবার্তার মধ্য দিয়ে বোঝা গেল, অন্য অনেক বিষয়ের মতো এই দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করেও কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের বিজেপি সরকার সহমত নয়। বেসরকারি মতে, মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৫ জনের, আহত ৭০ জন।

কেন্দ্র ও রাজ্যে বিজেপি সরকারের আমলে এই প্রথম উত্তর প্রদেশে মহাকুম্ভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ৪০ কোটি ধর্মপ্রাণ মানুষ মহাকুম্ভে আসবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ আগেই জানিয়েছিলেন। মহাকুম্ভের এই আয়োজন রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের চেষ্টায় কোনো রকম ত্রুটি রাখতে চাননি তিনি। সম্ভবত সেই কারণেই ১৯ জানুয়ারি মেলায় অগ্নিসংযোগের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে তিনি নীরব থেকেছেন। এবার পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনাও যাতে তাঁর বিরুদ্ধে না যায়, সেটা নিশ্চিত করতে তিনি বদ্ধপরিকর। সেই কারণে হতাহত প্রসঙ্গেও তিনি নির্বাক। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর শোকবার্তা বুঝিয়ে দিল, আদিত্যনাথ স্পষ্টতই অনেক কিছু আড়াল করতে চাইছেন।

এই দুর্ঘটনা নিয়ে বিরোধীরা অবশ্য সরব। কোটি কোটি মানুষ আসবে জেনেও কেন পর্যাপ্ত সাবধানতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, সে জন্য উত্তর প্রদেশ সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছে কংগ্রেস। সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করেও এমন অপলকা ব্যবস্থাপনা আশা করা যায় না।

লোকসভার বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, ঠিকমতো প্রস্তুতির বদলে আত্মপ্রচারকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্যই এই হাল। তাঁর অভিযোগ, সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী ভিভিআইপিদের বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। এই দুর্ঘটনার মূল কারণ সেটাই।

সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবের দাবি, মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে মেলাপ্রাঙ্গণের ভার সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হোক। অখিলেশ বলেছেন, মেলার ব্যবস্থাপনা বিশ্বমানের বলে দাবি করা হচ্ছিল। এখন প্রকৃত সত্য সবার সামনে চলে এসেছে। মিথ্যা প্রচার যাঁরা চালিয়েছেন, এত মানুষের প্রাণ যাওয়ার দায় তাঁদেরই। তাঁদের অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, গঙ্গাসাগর মেলা কীভাবে নির্বিঘ্নে করা হলো, তা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। এক্স হ্যান্ডলে তিনি লিখেছেন, ‘গঙ্গাসাগর মেলা থেকে শিখেছি, এমন ধরনের বিশাল জনসমাগমের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পর্যায়ের পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা দরকার।’

আজ বুধবার সকাল থেকে শুরু হয় ভেঙে পড়া ব্যারিকেড নতুনভাবে তৈরির কাজ। তারপর ভিড় সামলাতে মেলাপ্রাঙ্গণে রাজ্য প্রশাসন মাউন্টেড বা ঘোড়সওয়ার পুলিশ নামিয়েছে।