ইডি, সিবিআইয়ের অপব্যবহারের সুনির্দিষ্ট তথ্য চান সুপ্রিম কোর্ট

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ভবন
ফাইল ছবি এএনআই

সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খেল ভারতের বিরোধী দলগুলো। ইডি, সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ‘অপব্যবহার’ রুখতে তাদের আনা মামলা শুনলেন না সুপ্রিম কোর্ট। আজ বুধবার প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি জে বি পর্দিওয়ালার ডিভিশন বেঞ্চ ওই মামলা শুনতে অনীহা জানিয়ে বলেন, অপব্যবহারের নির্দিষ্ট উদাহরণ নিয়ে শুনানি চলতে পারে। কিন্তু গড়পড়তা অপব্যবহারের অভিযোগ শুনে রায় দেওয়া সম্ভব নয়।

কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি, বিআরএস, বামপন্থীসহ মোট ১৪টি বিরোধী দল গত ২৪ মার্চ এই মামলা করেছিল। প্রধান বিচারপতি আবেদনকারীদের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভিকে বলেন, রাজনৈতিক অভিসন্ধি চরিতার্থ করতে ইডি-সিবিআইয়ের অপব্যবহার করা হয়েছে, এমন নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকলে মামলা শোনা যেতে পারে। সার্বিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলা সম্ভব নয়।

নরেন্দ্র মোদির শাসনামলে বিরোধী দলগুলোকে চাপে রাখতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলোর ব্যবহার নিয়ে দেশের রাজনীতি উত্তাল। বিরোধীদের দমাতে রাজ্যে রাজ্যে ইডি, সিবিআই, আয়কর বিভাগকে কাজে লাগানোর অভিযোগ উঠছে অনবরত। এই প্রবণতা রুখতে ১৪টি রাজনৈতিক দল একযোগে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল। আজ সেই মামলা খারিজ হওয়া বিরোধীদের জন্য যতটা ধাক্কা, ততটাই উৎফুল্ল সরকার ও শাসক দল বিজেপি।

আইনজীবী ও কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিংভি এই মামলার আবেদনকারী। তাঁর আবেদনে পরিসংখ্যান দিয়ে বলা হয়েছিল, ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে ৭২ জন রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে ইডি-সিবিআই তদন্ত করেছিল। তাঁদের মধ্যে মাত্র ৪৩ জন বিরোধী দলের নেতা ছিলেন। অথচ ২০১৪ থেকে গত ৭ বছরে ১১৮ জন নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে। এঁদের ৯৫ শতাংশই বিরোধী দলের। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার এটাই সবচেয়ে বড় প্রমাণ।

আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা কতখানি যুক্তিগ্রাহ্য, সে বিষয়ে প্রধান বিচারপতি সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি জানতে চান, আবেদনকারী কি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অধিকারের আওতা থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে ছাড় দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছেন? নাগরিক হিসেবে তাঁদের বিশেষ কোনো অধিকার আছে কি না, তা–ও তিনি জানতে চান। জবাবে সিংভি বলেন, তাঁরা কোনো বিশেষ রক্ষাকবচের দাবি করছেন না। শুধু চান, আইন যাতে পক্ষপাতহীনভাবে ব্যবহৃত হয়।

সিংভি বলেন, বিরোধী স্বর দমাতে, বিরোধীদের দুর্বল করতে সরকার তদন্তকারী সংস্থাদের দিয়ে যা খুশি করাচ্ছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। আইনের চোখে তা অন্যায় ও গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের বেঁধে দেওয়া তিনটি বিশেষ নিয়মও সরকার মানছে না। সাক্ষ্য–প্রমাণ ও নির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই বিরোধী নেতাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

প্রধান বিচারপতি ওই যুক্তি মানতে অস্বীকার করেন। তিনি মনে করেন, এই আবেদন শুধু রাজনৈতিক নেতাদের রক্ষাকবচের জন্য। এতে যাঁরা দুর্নীতি ও অপরাধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, সেই নাগরিকদের অধিকার ও স্বার্থ বিবেচনা করা হয়নি। আবেদনকারীর উদ্দেশে তিনি বলেন, নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তিনি বিবেচনা করতে প্রস্তুত। কিন্তু সার্বিকভাবে কিছু করা সম্ভব নয়। এর বিচার রাজনৈতিকভাবেই করা দরকার, আদালতে নয়। বেঞ্চের এই মনোভাব দেখে সিংভি আবেদন প্রত্যাহার করে নেন।

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলোর অতি সক্রিয়তা বন্ধে এর আগে আট বিরোধী দলের নেতারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখেছিলেন। তাতে বলা হয়, বিজেপিতে যোগ দেওয়া বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে ইডি-সিবিআই কিছুই করছে না। যত তদন্ত বিরোধীদের বিরুদ্ধে। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা, পশ্চিমবঙ্গের শুভেন্দু অধিকারী, মুকুল রায়, মহারাষ্ট্রের নারায়ণ রানেদের নাম উল্লেখ করেন। তাঁরা বলেন, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর এঁদের বিরুদ্ধে সব তদন্ত বন্ধ। বিরোধী নেতারা বিজেপিকে ‘ওয়াশিং মেশিন’ বলেও কটাক্ষ করেন। বলেন, যে যতই দুর্নীতিগ্রস্তই হোক, বিজেপিতে গেলেই সব অপরাধ মাফ ও সাফ।