ভারতকে অসম্মান করার অভিযোগের জবাব সংসদে দিতে চান রাহুল

রাহুল এত দিন ধরে যে ঢংয়ে ও ভাষায় নরেন্দ্র মোদির ‘নতুন ভারতের’ সমালোচনা করেছেন, ব্রিটেনেও তারই পুনরাবৃত্তি শোনা গেল
ছবি : রয়টার্স

যুক্তরাজ্যে করা মন্তব্য নিয়ে ক্ষমা চাওয়ার দাবির মুখে লড়াইটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে কংগ্রেস সদর দপ্তরে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেন, ‘আমি একজন সংসদ সদস্য। সংসদে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন চারজন মন্ত্রী। সংসদে সেই জবাব দেওয়ার অধিকার আমার আছে। কিন্তু জানি না আমাকে বলতে দেওয়া হবে কি না। গণতন্ত্র কার্যকর থাকলে সেই অধিকার আমি পাব। এরই অপেক্ষায় আছি। তার আগে বাইরে জবাবদিহি করব না।’

রাহুল বলেন, বৃহস্পতিবার তিনি লোকসভার স্পিকারের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর নাম করে অনেক কিছু বলা হয়েছে সংসদে। উত্তর দেওয়ার অধিকারও তাঁর রয়েছে। তিনি সেই জবাব দিতে চান। সেই অনুমতি যেন দেওয়া হয়। রাহুল সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়ে বলেন, স্পিকার কিছু বলেননি। শুধু হেসেছেন। তিনি সভায় ঢোকার এক মিনিটের মধ্যে সভা মুলতবি করে দেওয়া হয়। রাহুল বলেন, শুক্রবারও (আজ) তিনি সংসদে যাবেন। মনে হচ্ছে না তাঁকে বলার সুযোগ দেওয়া হবে। তবু তিনি অপেক্ষায় রয়েছেন।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সফরে রাহুল যা যা বলেছেন, তাতে ভারতের অসম্মান করা হয়েছে বলে সংসদে সরকারপক্ষ সরব। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল, প্রহ্লাদ যোশি, স্মৃতি ইরানি, কিরেন রিজিজুসহ অনেকেই প্রকাশ্যে রাহুলের ক্ষমা প্রার্থনার দাবি করেছেন। এই দাবিতে বিজেপি ও সরকারপক্ষ গত সোমবার থেকে সংসদ অচল রেখেছে। বিরোধীরা একই রকম সরব আদানি–কাণ্ডের তদন্তে যুগ্ম সংসদীয় কমিটি গঠনের দাবিতে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে গত বুধবারই জানিয়ে দেন, রাহুল তাঁর বক্তব্য সংসদেই জানাবেন। তাঁর ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

বৃহস্পতিবার সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলন ডেকে সাংসদ হিসেবে এই বিতর্কে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়ে বলেন, সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ জ্ঞাপন প্রস্তাব বিতর্কে অংশ নিয়ে তিনি যা বলেছিলেন, আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্ক নিয়ে যেসব প্রশ্ন তুলেছিলেন, সব সভার কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অথচ যা বলেছেন, সবই প্রকাশ্যে থাকা নথির ভিত্তিতে। তিনি বলেন, সরকার, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী ভয় পেয়েছেন। তাই এভাবে প্রসঙ্গ এড়াচ্ছেন। মানুষের নজর ঘোরাতে চাইছেন।

রাহুল বলেন, ‘মনে হয় না ওরা আমাকে বলতে দেবে। কারণ, মূল প্রশ্ন এখনো অপরিবর্তিত। আমি জানতে চেয়েছিলাম, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ সফরে আদানির হয়ে কে কথা বলেছিলেন? কেন প্রধানমন্ত্রীর নাম করে শ্রীলঙ্কার নেতা অভিযোগ জানিয়েছিলেন? অস্ট্রেলিয়া সফরে মোদি–আদানি ও সে দেশের এক রাজ্যের মন্ত্রীর সঙ্গে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার চেয়ারপারসনের মধ্যে কেন বৈঠক হয়েছিল? কেন স্টেট ব্যাংককে টাকা দিতে হয়? ইসরায়েলের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তিতে কী হয়েছিল? শেল কোম্পানির টাকা কার? সেই কোম্পানির সঙ্গে আদানিদের সম্পর্ক কী—এসব জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সব বাদ দেওয়া হয়েছে। এখনো এসব প্রশ্ন প্রাসঙ্গিক।’ রাহুল বলেন, আদানি প্রশ্ন থেকে নজর ফেরাতেই এ ধরনের তামাশা করা হচ্ছে।

গত সোমবার থেকে বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়েছে। কিন্তু সরকার এবং বিরোধী পক্ষের দাবি ও পাল্টা দাবিতে বৃহস্পতিবার চতুর্থ দিনেও কোনো কক্ষে কাজ হলো না। সরকারপক্ষের দাবি, যুক্তরাজ্য সফরে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী দেশের অসম্মান করেছেন। ভারতকে হেয় করেছেন। এ জন্য তাঁকে সংসদে ক্ষমা চাইতে হবে। কংগ্রেসসহ বিরোধীদের দাবি, রাহুল ক্ষমা চাইবেন না। ভারতবিরোধী একটি কথাও তিনি বলেননি। ইংল্যান্ডে যা বলেছেন, নিজেই সংসদে তার ব্যাখ্যা দেবেন। দেশের মাথা কেউ হেঁট করে থাকলে তা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি করেছেন। বারবার বিদেশে গিয়ে তিনি সেই কাজ করেছেন। বরং সরকারকে যুগ্ম সংসদীয় কমিটি গড়তে হবে।

বিরোধীদের দৃঢ় ধারণা, রাহুল প্রসঙ্গে বিজেপি সরব হয়েছে আদানি তদন্তের দাবি যাতে প্রাধান্য না পায়, তা নিশ্চিত করতে। আদানি–কাণ্ড থেকে মানুষের নজর ঘোরাতে। সরকারকে সেই সুযোগ বিরোধীরা দিতে নারাজ। তাই প্রতিদিন যুগ্ম সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) গড়ার জন্য সংসদকে চাপে রাখতে তারা সচেষ্ট। সরকার ও বিরোধীদের এই টানাপড়েনের মধ্যে প্রতিদিন ব্যাহত হচ্ছে সংসদের অধিবেশন। গত বুধবার বিরোধীরা সংসদ ভবন থেকে পদযাত্রা করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) অফিসে যেতে চেয়েছিলেন আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি জমা দিতে। পুলিশের আপত্তিতে তা সম্ভব হয়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার ওই দাবিতে বিরোধীরা সংসদ ভবনের সামনে মানববন্ধন করেন।

রাহুলের বিরুদ্ধে বিজেপি ও সরকার সর্বাত্মক আক্রমণ চালিয়েছে বৃহস্পতিবারেও। আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু রাহুলকে ‘দেশবিরোধী’ বলেও চিহ্নিত করেছেন। বৃহস্পতিবার সংসদ ভবন চত্বরে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী রিজিজু বলেন, বিদেশে গিয়ে রাহুল যে ভাষায় কথা বলেছেন, সেই ভাষাতেই কথা বলে দেশবিরোধীরা। রিজিজু বলেন, ‘রাহুল তাঁর দলকে ডোবাচ্ছেন। আমাদের তাতে কিছু যায়–আসে না। কিন্তু বিদেশে গিয়ে দেশকে অপমান করলে আমরা ছেড়ে দেব না।’