আসামে সিএএর বিরোধিতা করলে দলের প্রতীক বাতিলের হুমকি মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বশর্মার

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাছবি: এএনআই

ভারতের আসাম রাজ্যে যেসব রাজনৈতিক দল সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরোধিতা করবে এবং প্রতিবাদ হিসেবে ধর্মঘটের ঘোষণা দেবে, তাদের রাজনৈতিক প্রতীক নিয়ে নেওয়া হতে পারে বলে তাদের সতর্ক করে দিয়েছেন বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। গতকাল রোববার গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই হুমকি দেন।

আসামে ইতিমধ্যে সিএএর বিরোধিতায় এক জোট হয়ে রাজপথে নেমেছে বিজেপিবিরোধী বেশির ভাগ দল। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসাম সফরের সময় পথে নেমে বিক্ষোভ করেছে বিরোধী দলগুলো। এর জেরেই বিক্ষোভ দমনে বিবৃতি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বশর্মা।

মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বশর্মা গণমাধ্যমকে বলেন, বিভিন্ন সংগঠনের নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলের সেই অধিকার নেই।

বিশ্বশর্মা বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো যখন ধর্মঘটের ডাক দিচ্ছে, তখন তারা উচ্চ আদালতের আদেশের অবমাননা করছে। এরপরও যদি তারা এ ধরনের ধর্মঘটের ডাক দেয়, তবে তাদের প্রতীক বাজেয়াপ্ত করতে আমরা নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হব।’

আসামের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের অর্থ হচ্ছে, সেসব দলের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে।

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি সিএএ–বিরোধী প্রচার বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বিশ্বশর্মা আরও বলেন, যেসব দল সিএএকে চ্যালেঞ্জ করতে চায়, তারা সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে।

এ ধরনের আন্দোলন আসামের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করবে বলে মন্তব্য করে বিশ্বশর্মা বলেন, গত ৪০ দিনে আসামে ৯০ হাজার কোটি রুপির প্রকল্প বাস্তবায়নের পথ মসৃণ করা হয়েছে। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারবিরোধী এমন আন্দোলন বরদাশত করা হবে না।

কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া
মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যকে সম্পূর্ণ ‘অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরতান্ত্রিক’ বলে ব্যাখ্যা করেছে বিরোধী দলগুলো। কংগ্রেস জানিয়েছে, তারা আরও জোরালোভাবে সিএএ–বিরোধী আন্দোলনে নামবে। বিরোধী রাজনৈতিক দলকে খারিজ করার মুখ্যমন্ত্রীর পরিকল্পনাকে প্রচারে তুলে ধরবে।

কংগ্রেসের এক মুখপাত্র বলেছেন, দক্ষিণ ভারতে সংবিধান পরিবর্তন করে হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের দিকে বিজেপি যে এগোচ্ছে, তা তাদের কর্ণাটকের সংসদ সদস্য ইতিমধ্যে বলেছেন। আর আসামে রাজনৈতিক দলকে খারিজ করে দেওয়ার কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথা থেকে প্রমাণিত যে বিজেপি কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং কতটা অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরতান্ত্রিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

বিজেপির কর্ণাটকের সংসদ সদস্য অনন্তকুমার হেগড়ে বলেছেন, ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করতে দেশের পার্লামেন্টে ৫৪৩ আসনের মধ্যে ৪০০ অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশ আসন দরকার। সেই কারণে বিজেপি ৪০০ আসনের লক্ষ্য নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নেমেছে। তাঁর এই মন্তব্য হেগড়ের ব্যক্তিগত এবং বিজেপির বক্তব্য নয় বলে ইতিমধ্যে দল থেকে জানানো হয়েছে।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী গতকাল রোববার হেগড়ের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলেছেন, নরেন্দ্র মোদি ও সংঘ পরিবারের (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ) গোপন পরিকল্পনা প্রকাশ্যে এল। নরেন্দ্র মোদিদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে বাবাসাহেব আম্বেদকরের সংবিধান ধ্বংস করা। কারণ, বিজেপি ন্যায়, সমতা, নাগরিক অধিকার বা গণতন্ত্রের কিছুই সমর্থন করে না। এদের লক্ষ্য সমাজের বিভাজন।