ওয়াক্ফ নিয়ে ভারতের মণিপুরে বিক্ষোভ, পশ্চিমবঙ্গে না চালুর ঘোষণা মমতার
ওয়াক্ফ আইন নিয়ে ভারতের মণিপুর রাজ্যে নতুন করে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। আর এদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা দিয়েছেন, এ রাজ্যে ওয়াক্ফ চালু হবে না।
মণিপুরে শুরু হয়েছে এক নতুন প্রতিবাদ। এর কেন্দ্রে রয়েছেন মণিপুরের সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায়ের মুসলমান অংশ, যাঁদের বলা হয় মেইতেই পাঙ্গাল। গত রোববার থেকে মণিপুরের মেইতেই পাঙ্গালরা পথে নেমেছেন ভারতের সংসদে ওয়াক্ফ আইন পাসের বিরোধিতা করে। রোববার থেকে তাঁরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, আজ বুধবারও দেখিয়েছেন। এই আইন মুসলমান সমাজের সম্পত্তি অনেকটাই অধিগ্রহণ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। মণিপুরে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের একটি দল ন্যাশনাল পিপলস পার্টির এক নেতাও জানিয়েছেন, তাঁরা আইনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাবেন।
মণিপুরের বিভিন্ন জেলা যেমন ইম্ফল পূর্ব, থৌবাল ও বিষ্ণুপুরে আজ বুধবার বিক্ষিপ্তভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছেন পাঙ্গালরা। আইন কোনোভাবেই রাজ্যে বাস্তবায়ন করতে দেওয়া যাবে না বলে প্রতিবাদকারীরা জানান।
আবদুল সাতর নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমাদের এই আন্দোলনের পেছনে মেইতেই সমাজের বড় অংশ রয়েছে। যেহেতু মেইতেই সমাজ রাজ্যের প্রধান সম্প্রদায়, তাই সরকার আমাদের আবেগকে উপেক্ষা করলে আবারও বিপদে পড়বে।’
মঙ্গলবারও ওই জেলাগুলোতে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়। স্থানীয় প্রচারমাধ্যম জানিয়েছে, ৫ হাজার বিক্ষোভকারী পায়ে হেঁটে বিষ্ণুপুর জেলায় ঢোকেন। ইম্ফল পূর্ব জেলাতেও মানবশৃঙ্খল তৈরি করেন প্রতিবাদকারীরা। সেখানেও তাঁরা বলেন যে দীর্ঘ সহিংসতার পরে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়েছে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পরে। পরিস্থিতি আবার অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে এবং এবারে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে যদি রাজ্যে আইন বাস্তবায়ন করা হয়। এর মধ্যে গত রবিবার বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি এবং পাঙ্গাল সমাজের নেতা আস্কের আলীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে জনতা। এর কারণ তিনি বিজেপির নেতা হওয়ার জন্যই ওয়াক্ফ আইন সমর্থন করেছিলেন।
ইতিমধ্যে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির এক এমএলএ শেখ নুরুল হাসান জানিয়েছেন, তিনি আইনটির বিরুদ্ধে কয়েক দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করবেন।
পশ্চিমবঙ্গে ওয়াক্ফ চালু হবে না: মমতা
কলকাতায় সংখ্যালঘু জৈন সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানে আজ বুধবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, পাকা পয়েন্ট পশ্চিমবঙ্গে চালু হবে না। তিনি বলেন, ‘আমি সংখ্যালঘুদের বলছি যে আমি বুঝতে পারছি ওয়াক্ফ নিয়ে যা হয়েছে তাতে আপনাদের মনে কষ্ট হয়েছে। কিন্তু আপনারা ভরসা রাখুন। পশ্চিমবঙ্গে এ ধরনের কিছু হবে না। এভাবে সম্প্রদায়কে ভেঙে শাসন করার যে নীতি, তা পশ্চিমবঙ্গে বাস্তবায়িত হবে না। আপনারা সবাইকে এই বার্তা দিন যে সবাইকে একসঙ্গে থাকতে হবে এবং একসঙ্গে বাঁচতে হবে। নিজে বাঁচো এবং অপরকে বাঁচাও—এটাই এখানে নীতি। আপনারা উদ্বিগ্ন হবেন না।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য এমন সময় সামনে এল, যখন প্রায় প্রতিদিনই পশ্চিমবঙ্গের কোথাও না কোথাও ওয়াক্ফবিরোধী জমায়েত হচ্ছে। ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ছে রাজ্যের সংখ্যালঘু এলাকায় এবং কিছু জায়গায় অশান্তিও শুরু হয়েছে। যেমন গতকালই মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর, রঘুনাথগঞ্জ, সুতি প্রভৃতি এলাকায় পরিস্থিতি প্রবল উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের দুটি গাড়িতে আগুন লাগায় এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ে বলে প্রশাসন জানিয়েছে।
অন্যদিকে স্থানীয় মানুষের বক্তব্য—শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের ওপরে পুলিশ লাঠি চালায়। এর ফলে অন্তত ২৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন এবং সে কারণেই পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে মুর্শিদাবাদের ওই অঞ্চলগুলোতে জমায়েতের ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আজও সেই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।