অস্ত্রোপচার শেষে জ্ঞান ফেরার পর জানলেন তিনি মেয়ে হয়ে গেছেন
ভারতের উত্তর প্রদেশে অস্ত্রোপচারের কথা বলে এক তরুণের পুরুষাঙ্গ অপসারণ করে তাঁর লিঙ্গ পরিবর্তনের অভিযোগ উঠেছে আরেক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। স্থানীয় একটি হাসপাতালের চিকিৎসকদের যোগসাজশে চলতি মাসের শুরুর দিকে এ ঘটনা ঘটেছে।
ভুক্তভোগী তরুণের নাম মুজাহিদ। তাঁর বয়স ২০ বছর। তিনি উত্তর প্রদেশের সানজাক গ্রামের বাসিন্দা। প্রতারণার মাধ্যমে তাঁর লিঙ্গ পরিবর্তন করিয়ে দেওয়া অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম ওমপ্রকাশ।
অভিযোগ উঠেছে, মুজাহিদকে ছেলে থেকে মেয়ে বানিয়ে বিয়ে করা এবং তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি দখল করাই ছিল ওমপ্রকাশের উদ্দেশ্য। মুজাহিদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এই অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। স্থানীয় লোকজন এ ঘটনার প্রতিবাদে ও জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন।
এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুজাহিদের অভিযোগ, তাঁকে দুই বছর ধরে হুমকি দিয়ে আসছিলেন ওমপ্রকাশ। উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগরের একটি হাসপাতালের চিকিৎসকদের ওমপ্রকাশ মিথ্যা কথা বলে বুঝিয়েছিলেন, মুজাহিদের রিঅ্যাসাইনমেন্ট সার্জারি বা লিঙ্গ নিশ্চিতকরণ সার্জারি দরকার।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৩ জুন মুজাহিদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা আছে বলে ভুল বুঝিয়ে ওমপ্রকাশ তাঁকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। হাসপাতালে ওমপ্রকাশও তাঁর সঙ্গে যান। পরের দিন হাসপাতালে মুজাহিদের লিঙ্গ পরিবর্তনের জন্য অস্ত্রোপচারের লক্ষ্যে তাঁকে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয়। অস্ত্রোপচার শেষে যখন তাঁর জ্ঞান ফেরে, তখন দেখেন, তাঁর ভয়াবহ ক্ষতি হয়ে গেছে।
মুজাহিদ বলেন, ‘তিনি (ওমপ্রকাশ) আমাকে এখানে (হাসপাতালে) নিয়ে আসেন। পরের দিন সকালে আমার অস্ত্রোপচার হয়। যখন আমার জ্ঞান ফেরে, তখন আমাকে বলা হয়, আমি ছেলে থেকে মেয়ে হয়ে গেছি।’
মুজাহিদ আরও বলেন, ওমপ্রকাশ বলছেন, এখন তাঁকে তাঁর সঙ্গেই থাকতে হবে। কারণ, পরিবার বা সমাজের কেউ তাঁকে (মুজাহিদ) আর গ্রহণ করবে না।
শুধু তা–ই নয়, ওমপ্রকাশ মুজাহিদের বাবাকেও হত্যার হুমকি দিয়েছেন। এরপর মুজাহিদের পৈতৃক সম্পত্তি দখল করবেন বলেও জানিয়েছেন।
মুজাহিদকে ওমপ্রকাশ বলেছেন, ‘এখন তোমাকে আমার সঙ্গে থাকতে হবে। আমি একজন আইনজীবী ঠিক করেছি। আদালতে গিয়ে আমরা বিয়ের ব্যবস্থা করেছি। এখন আমি তোমার বাবাকে গুলি করব। তারপর তোমার ভাগের সম্পত্তি আমার নামে করে নেব। তা বিক্রি করে আমি লক্ষ্ণৌ চলে যাব।’
এ ঘটনা জানাজানির পর ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের (বিকেইউ) শ্রমিকেরা কৃষকনেতা শ্যাম পালের নেতৃত্বে বিক্ষোভ করেছেন। তাঁরা হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ করে অভিযুক্ত ওমপ্রকাশ ও জড়িত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে শিগগির ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
ওই হাসপাতালে মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাচারের ব্যবসা হওয়ার গুরুতর অভিযোগও উত্থাপন করেছেন শ্যাম পাল।
পুলিশ মুজাহিদের অভিযোগের ঘটনা বিস্তারিত তদন্ত করে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। অবশ্য মুজাহিদের বাবা পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনেছেন। তিনি এ ঘটনায় মামলার পাশাপাশি ছেলের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।