কাশ্মীরের ভাগ্যও হবে গাজা–ফিলিস্তিনের মতো, ফারুক আবদুল্লাহর হুঁশিয়ারি

ফারুক আবদুল্লাহ। কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা
ফাইল ছবি: এএনআই

রাজনৈতিক আলোচনা শুরু না হলে জম্মু-কাশ্মীরের ভাগ্যও গাজা-ফিলিস্তিনের মতো হয়ে যাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুক আবদুল্লাহ। আজ মঙ্গলবার কেন্দ্রশাসিত এই অঞ্চলের রাজধানী শ্রীনগরে এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দুই দেশের (ভারত–পাকিস্তান) মধ্যে বন্ধ থাকা বাক্যালাপ শুরু হওয়া জরুরি। না হলে, আল্লাহ না করুন, কাশ্মীরের ভাগ্যও হবে গাজা–ফিলিস্তিনের মতো, যেখানে ইসরায়েল বোমাবর্ষণ করেই চলেছে।’

সম্প্রতি উপদ্রুত এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের পুঞ্চ–রাজৌরি সেক্টরে অতর্কিত জঙ্গি হামলায় চার সেনার মৃত্যু হয়। জঙ্গিদের হাতে নিহত হয়েছেন এক মসজিদের মুয়াজ্জিনও। পুঞ্চ–রাজৌরির উপদ্রুত এলাকা সফর করেছেন ভারতীয় সেনাধ্যক্ষ জেনারেল মনোজ পান্ডে।

ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদমাধ্যম ফারুককে প্রশ্ন করলে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও প্রবীণ নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেই বলেছিলেন, যুদ্ধ কোনো বিকল্প নয়। সমস্যার সমাধান করতে হবে আলোচনার মাধ্যমেই। কোথায় সেই আলোচনার উদ্যোগ? নওয়াজ শরিফ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন। তাঁরা বারবার বলছেন, ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান। কিন্তু আমরা আগ্রহ দেখাচ্ছি না। কেন? কী কারণে?’

ফারুক বলেন, মনে রাখতে হবে, ভারত ও পাকিস্তান দুটোই কিন্তু পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। আলোচনার মাধ্যমে বিরোধের মীমাংসা করতে না পারলে একদিন কাশ্মীরের দশাও গাজা–ফিলিস্তিনের মতো হয়ে যাবে।

এই প্রসঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর কথা উল্লেখ করেন কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘অটল বিহারী বলেছিলেন, “আমরা বন্ধু পছন্দ করতে পারি। বদলাতে পারি। কিন্তু প্রতিবেশী বদলাতে পারব না। প্রতিবেশীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করলে আমরা দুই দেশই উপকৃত হব। উন্নতি করব।”’

কাশ্মীরের বিজেপি নেতা হিনা শফি বাট সময় নষ্ট না করে ফারুকের কড়া সমালোচনা করেছেন। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যের এটাই যে এত কিছুর পরও প্রবীণ এই নেতা পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার কথা বলছেন। ফারুক সাহেবের জানা উচিত, এই সরকার কখনো পাকিস্তানের কাছে মাথা নোয়াবে না। আলোচনার দরজা আমরা বারবার খুলেছি কিন্তু ওরা প্রতিবারই পেছন থেকে ছুরি চালিয়েছে।’

ফারুক গত রোববারও ভারত সরকারের কাশ্মীর নীতির কড়া সমালোচনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কথা শুনিয়ে ও পর্যটকদের ভিড় দেখিয়ে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করা যায় না। সরকারের দাবি, ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসবাদের কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতে দেওয়া হয়েছে। চার বছর কেটে গেছে। সন্ত্রাসবাদ কিন্তু রয়েই গেছে। মূল সমস্যার গভীরে যেতে না পারলে সন্ত্রাসবাদ শেষ করা যাবে না।

ফারুক আবদুল্লাহ‌ বলেন, সবার অনুধাবন করা উচিত, সেনা কর্মকর্তা ও জওয়ানদের সঙ্গে সাধারণ মানুষেরও প্রাণ যাচ্ছে। সেনা সমাবেশের মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসবাদ দমন সম্ভব নয়।

পাকিস্তান নিয়ে ভারতের নীতি এখনো অপরিবর্তিত। এই বছরের গোড়ায় প্রতিবেশী দেশের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ভারতের সঙ্গে কাশ্মীর নিয়ে আলোচনার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছিলেন। তার জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেছিলেন, ভারত সবার সঙ্গেই বন্ধুত্ব চায়। কিন্তু আলোচনার জন্য পাকিস্তানকে সন্ত্রাসমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। ভারতের এককথা, সন্ত্রাস ও আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না।