লাদাখে মুখোমুখি অবস্থান থেকে সেনা সরাল চীন-ভারত
পূর্ব লাদাখের ডেপস্যাং ও ডেমচকে ভারত ও চীনের সেনাবাহিনী মুখোমুখি অবস্থান থেকে সরে এসেছে। দুই দেশের চুক্তি ও বোঝাপড়ার ওপর ভিত্তি করেই এই সিদ্ধান্ত।
ভারতের সেনা কর্তৃপক্ষ সূত্র আজ বুধবার এই খবর দিয়ে জানিয়েছে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার দীপাবলি উপলক্ষে দুই দেশের সেনাসদস্যরা একে অপরকে মিষ্টি দেবেন। তারপর ঠিক করা হবে, ওই এলাকায় চুক্তি অনুযায়ী দুই দেশের বাহিনী কবে থেকে টহল দেওয়া শুরু করবে।
সূত্র অনুযায়ী, এটা হলো দুই দেশের বাহিনীর ২০২০ সালের পূর্ববর্তী অবস্থানে ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়া। চার বছর ধরে ভারত এই কথাই বারবার বলে এসেছে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলএসি) চার বছর আগের স্থিতাবস্থা ফেরত না এলে দুই দেশের সম্পর্ক আগের মতো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারবে না।
সেনা সূত্র জানিয়েছে, মুখোমুখি অবস্থান থেকে সেনাসদস্যরা পিছিয়ে গেছেন কি না, তা যাচাইয়ের কাজ দুই পক্ষই চালিয়ে যাচ্ছে। সেই বিষয়ে নিশ্চিত হলেই দুই বাহিনী টহল দেওয়া শুরু করবে। দুই দেশের সেনা কমান্ডাররা টহলদারির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
২১ অক্টোবর দুই দেশ পূর্ব লাদাখের বিভিন্ন এলাকায় সেনা অবস্থান নিয়ে চুক্তির কথা ঘোষণা করে। ভারত ওই বোঝাপড়াকে ‘চুক্তি’ বললেও চীন অবশ্য তা ‘গুরুত্বপূর্ণ বোঝাপড়া’ বলে অভিহিত করেছিল। তখনই বলা হয়েছিল, এক সপ্তাহের মধ্যে ডেপস্যাং ও ডেমচকে সেনাবাহিনীর ‘ডিসএনগেজমেন্ট’ বা বিচ্ছিন্নকরণ হয়ে যাবে।
সেই অনুযায়ী, আজ ডেপস্যাং ও ডেমচকে দুই দেশের স্থানীয় কমান্ডাররা বৈঠক করেন। ওই এলাকায় তৈরি করা অস্থায়ী কাঠামো ও সামরিক যানগুলো সরানো হয়েছে কি না, তা তদারকি করা হয়। কোন পথ ধরে নিয়মিত টহলদারি চলবে, তা–ও ওই বৈঠকে স্থির করা হয়।
২০২০ সালের জুনে পূর্ব লাদাখের গালওয়ানে দুই দেশের সেনাবাহিনী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল। সেই থেকে এলএসি বরাবর দুই দেশ সেনা মোতায়েন বাড়ানোর পাশাপাশি সামরিক তৎপরতাও বাড়িয়ে গেছে। যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। যেকোনো পরিস্থিতির মোকাবিলায় নিজেদের প্রস্তুত করেছে। দুই দেশের সেনাবাহিনী ও কূটনৈতিক স্তরে বারবার বৈঠকের ফলে সংঘর্ষের পরিস্থিতি এড়ানো গেলেও মুখোমুখি অবস্থান থেকে কোনো দেশই পিছিয়ে আসেনি।
দুই দেশের চুক্তির পর গত সপ্তাহে রাশিয়ার কাজান শহরে ব্রিকস সম্মেলনের অবসরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। বোঝা যায়, দীর্ঘ পাঁচ বছর পর শীর্ষ নেতাদের ওই বৈঠক করাতেই দুই দেশ পূর্ব লাদাখ নিয়ে বোঝাপড়ার তাগিদ দেখিয়েছে।
বোঝাপড়া অনুযায়ী দুই দেশই যে সেনা অবস্থান ও ঘাঁটি ভেঙে দিচ্ছে, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে উপগ্রহের ছবিতে। এনডিটিভি আজ সেই ছবি প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ডেপস্যাংয়ের এক স্থানে ১১ অক্টোবর চীনা বাহিনীর যে অবস্থান ছিল (ছাউনি ও সামরিক গাড়ি ছিল), ২৫ অক্টোবর তা নেই। অর্থাৎ চুক্তি অনুযায়ী চীনা বাহিনী তা সরিয়ে নিয়েছে।