জি-২০ ঘোষণাপত্রে মোদির সুর

জি-২০ সম্মেলনের নতুন সভাপতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (বাঁয়ে) সম্মেলনের বিদায়ী সভাপতি ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোর সঙ্গে হাত মিলিয়ে সৌহার্দ্য বিনিময় করছেন। বালির নুসা দুয়ায়।
ছবি: এএফপি

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বারবার যে কথা বলে আসছেন, ইন্দোনেশিয়ার বালিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে দেখা গেল সেই সুর। রাশিয়া ও ইউক্রেন সংঘাতের দ্রুত অবসানের চেয়ে বুধবার গৃহীত সেই ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ‘আজকের যুগ যুদ্ধের নয়। পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার অথবা ব্যবহারের হুমকি অগ্রহণযোগ্য। শান্তিপূর্ণভাবে বিবাদ মেটানো, সংকট নিরসনে সচেষ্ট হওয়া, কূটনীতি ও সংলাপ—এসবই গুরুত্বপূর্ণ। নেতাদের সেই চেষ্টাতেই ব্রতী হতে হবে।’

জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন সেই সময় অনুষ্ঠিত হলো যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সাত মাস অতিক্রান্ত। আট মাস ধরে চলা এই যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ মীমাংসার সম্ভাবনা এখনো দেখা যাচ্ছে না। যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে শান্তিপূর্ণ আলাপ–আলোচনার সম্ভাবনাও এখনো সুদূরপরাহত। এ অবস্থায় সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে যে কথা বলা হলো, তা প্রধানমন্ত্রী মোদিরই বলা। গত সেপ্টেম্বর মাসে সাংহাই কো–অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে যোগ দিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছিলেন, ‘এটা যুদ্ধের সময় নয়।’ প্রত্যুত্তরে পুতিন বলেছিলেন, যত দ্রুত সম্ভব বিবাদ মেটাতে তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন। কিন্তু তার পরেও বিবাদ মেটেনি। এবার জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের আসরেও মোদি তাঁর ভাষণে সেই কথার পুনরুল্লেখ করে বলেন, বিশ্বনেতৃত্বকে মীমাংসার দায়িত্ব নিতে হবে। এই দায় তাঁদের সবার। বালি ঘোষণাপত্রেও দেখা গেল সেই সুর। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা এ প্রসঙ্গে বালিতে বলেছেন, ঘোষণাপত্রের খসড়া রচনায় ভারত তার ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে।

বালিতেই বুধবার ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোর কাছ থেকে পরবর্তী এক বছরের জি-২০ গোষ্ঠীর সভাপতির ভার গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ১ ডিসেম্বর থেকে এই দায়িত্ব পালন করবে ভারত। আগামী বছর ভারতে অনুষ্ঠিত হবে এই গোষ্ঠীর শীর্ষ সম্মেলন। সেখানে বাংলাদেশকে পর্যবেক্ষক হওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত। বাংলাদেশ তা গ্রহণ করেছে।

বালি সম্মেলন অবশ্য বিতর্কহীন থাকল না। সম্মেলনের অবসরে ইন্দোনেশিয়ায় বসবাসকারী প্রবাসী ভারতীয়দের এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী মোদির মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছে কংগ্রেস। কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ টুইট করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বিদেশে গিয়ে চিরায়ত প্রথা ভঙ্গ করেছেন। বিদেশে গিয়ে দেশীয় রাজনীতির অবতারণা করেছেন। আন্তর্জাতিক আসরে দেশীয় রাজনীতি টেনে এনেছেন।

প্রবাসীদের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘২০১৪ সালের আগে ভারত ছিল একরকম। এর পর থেকে অন্য রকম হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আগের ভারত ছিল স্লথ। পরের ভারত গতিশীল। আজকের ভারত তীব্র গতিতে ধাবমান। আজকের ভারত শুধু বিশ্বের দীর্ঘতম মূর্তিই স্থাপন করে না, বৃহত্তম স্টেডিয়ামও তৈরি করছে। ২০১৪ সালের পর থেকে আমরা দেশে ৩২ কোটি ব্যাংক হিসাব খুলেছি, যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। আজকের ভারত দ্রুততম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশ।’

মোদির সমালোচনা করে জয়রাম রমেশ বুধবার টুইট করে বলেন, উনি আত্মমগ্ন। বহু বছরের ঐতিহ্য, বিদেশে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীরা দেশীয় রাজনীতির আলোচনা করেন না। ২০১৪ সাল থেকে এই ইতিবাচক প্রথা ভেঙে গেছে। সর্বশেষ নিদর্শন ইন্দোনেশিয়া। জি-২০ লোগোয় ভারত পদ্মফুল লাগানোয় এর আগেও কংগ্রেস সমালোচনা করেছিল। পদ্মফুল বিজেপির নির্বাচনী প্রতীক।

আরও পড়ুন