অমৃতপাল অন্তর্ধান এখনো রহস্য হয়েই থাকল

অমৃতপালের বিভিন্ন বেশভূষার ছবি প্রকাশ করেছে ভারতীয় পুলিশ
ছবি: এএনআই

পাঁচ দিন কেটে গেলেও ‘ওয়ারিশ পাঞ্জাব দে’ নেতা ও স্বাধীন খালিস্তানের নতুন ‘পোস্টার বয়’ অমৃতপাল সিংয়ের হদিস নেই। দুবার গাড়ি ও একবার পোশাক বদলে যে মোটরবাইকে চেপে তিনি পাকিস্তানে পালিয়েছেন বলে পাঞ্জাব পুলিশের অনুমান, আজ বুধবার সেই ধারণা জোরালো করেছে পরিত্যক্ত একটি বাইক। জলন্ধর জেলার দারাপুরে একটি খালের পাশে বাইকটি দেখা যায় বলে রাজ্য পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশের এই ধারণা সত্ত্বেও জনমনে বহু প্রশ্ন উঠে আসছে। যেমন অমৃতপাল পালিয়েছেন নাকি তাঁকে গুম করা হয়েছে। ‘ওয়ারিশ পাঞ্জাব দে’র অনেকেই আশঙ্কা করছেন, সরকার এই তরুণ নেতাকে গুম করেছে। এই আশঙ্কা থেকে সংগঠনের পক্ষে রাজ্যের হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস আবেদন করে বলা হয়েছে, তাঁকে আদালতে পেশ করা হোক।

দ্বিতীয় প্রশ্ন তুলেছে খোদ হাইকোর্ট। পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের বিচারপতি বিস্ময় প্রকাশ করে জানতে চেয়েছেন, ৮০ হাজার পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে এক পরিচিত ব্যক্তি কী করে ফেরার থাকতে পারেন? এই প্রশ্ন থেকেই জন্ম নিচ্ছে, পুলিশ ও প্রশাসনের একাংশের সক্রিয় মদদে স্বার্থান্বেষী মহল অমৃতপালকে সীমান্ত পেরোতে কিংবা গা ঢাকা দিয়ে থাকতে সাহায্য করছে কি না।

তৃতীয় প্রশ্ন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের মনোভাব ঘিরে। তিন–চার মাস ধরে যে ব্যক্তি খোলামেলা সাক্ষাৎকারে খালিস্তান গঠনের কথা বলে আসছিলেন, বিভিন্ন মহলের সমর্থন পাচ্ছিলেন, অনুগামীদের অস্ত্র সংগ্রহে উৎসাহিত করছিলেন, তাঁকে কেন ছেড়ে রাখা হয়েছিল? তা হলে কি এর পেছনে কোনো বৃহত্তর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল?

কোনো প্রশ্নেরই জবাব এখনো পর্যন্ত নেই। পাঞ্জাব পুলিশও সরকারিভাবে অমৃতপালকে ধরার অভিযান বন্ধ করেনি। এ অবস্থায় পাঞ্জাবের পরিস্থিতি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে নানা ধরনের প্রচার শুরু হয়েছে। যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী আজ বুধবার বলেন, পাঞ্জাবের পরিস্থিতি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে যথেষ্ট মিথ্যাচার শুরু হয়েছে। এর সঙ্গে বাস্তবের কোনো সম্পর্ক নেই। পাঞ্জাব সফরের বিষয়েও কোনো বিশেষ পরামর্শ জারি করা হয়নি। দোরাইস্বামীকে এই ব্যাখ্যা দিতে হয় সে দেশে বসবাসকারী পাঞ্জাবি অভিবাসীদের ভরসা জোগাতে।

পাঞ্জাবের রাজনীতিতে যথেষ্ট কোণঠাসা হয়ে পড়া অকালি দল এই সুযোগে শক্তি সঞ্চয়ের চেষ্টা শুরু করেছে। দলের নেতা সুখবীর সিং বাদল বলেছেন, এই অভিযানে শিখ সম্প্রদায়ের যাদের হয়রানি করা হচ্ছে, অকালি দল তাদের সব ধরনের আইনি সাহায্য দেবে। অমৃতপাল সিংয়ের বিরুদ্ধে আম আদমি পার্টির সরকারের পুলিশি অভিযানকে তিনি ‘সংবিধানবহির্ভূত’ ও ‘চক্রান্ত’ বলে অভিহিত করে বলেন, যেভাবে নিছক সন্দেহের জেরে শিখ যুবকদের দেদার গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, বিশেষ করে অমৃতধারী শিখদের, তা শুধু সংবিধানবিরোধীই নয়, শিখদের বিরুদ্ধে এক গভীর চক্রান্ত।

অকালি দল ছিল বিজেপির জোটসঙ্গী। কৃষি আইনের বিরোধিতা করে তারা প্রথমে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ছেড়ে বেরিয়ে আসে। পরে জোট ছেড়ে দেয়। আম আদমি পার্টির উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে তারা রাজ্য রাজনীতিতে দুর্বল হয়ে পড়ে। যদিও শিখদের ধর্মীয় সংগঠন, যেমন শিখ গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটি কিংবা অকাল তখতে তাদের প্রভাব এখনো যথেষ্ট। খালিস্তানি নেতা জার্নেল সিং ভিন্দ্রানওয়ালেকে অকাল তখত সম্মানের আসনও পেতে দিয়েছে। সেই ভিন্দ্রানওয়ালের ‘আদর্শে’ জনপ্রিয় হয়ে ওঠা অমৃতপাল ও তাঁর ‘ওয়ারিশ পাঞ্জাব দে’র অনুসারীদের পাশে দাঁড়িয়ে হীনবল অকালি দল এখন শক্তি সঞ্চয় করতে চাইছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই মুহূর্তে অমৃতপালের অর্থের উৎস চিহ্নিত করে তা বন্ধের চেষ্টায় ব্যস্ত। শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা দীপ সিধুর মৃত্যুর পর তাঁর তৈরি সংগঠন ওয়ারিশ পাঞ্জাব দে হাত করে নেন অমৃতপাল এবং প্রকাশ্যে খালিস্তানি প্রচার শুরু করেন। তাঁর অর্থায়নের তদন্ত শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। অমৃতপালের স্ত্রী ব্রিটিশ নাগরিক কিরণদীপ কৌর নিষিদ্ধ ‘বাব্বর খালসা ইন্টারন্যাশনাল’–এর সদস্য ছিলেন। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, ওয়ারিশ পাঞ্জাব দের অর্থায়নে ওই সংগঠনের হাত রয়েছে।

অমৃতপাল, তাঁর পরিবার, সংগঠন ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়–অনুগামীদের ব্যাংক হিসাব এই মুহূর্তে গোয়েন্দাদের নজরদারিতে। সংগঠনের পাঁচ সদস্যের ব্যাংক খাতায় ২০১৬ থেকে ৪০ কোটি রুপি লেনদেন হয়েছে বলে দাবি। গোয়েন্দারা তথ্যও পেয়েছেন, কৃষক আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে সাহায্যের নামে টাকা তুলে অমৃতপাল তা সংগঠনের কাজে ব্যবহার করেছেন।