সন্দেশখালীতে নারী নিপীড়নের প্রমাণ পায়নি জাতীয় নারী কমিশন, জানাল পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ

পশ্চিমবঙ্গের সন্দেশখালীতে শাসক দল তৃণমূল নেতাদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে বারাসাতে আজ সিপিএমের বিক্ষোভছবি: ভাস্কর মুখার্জি

পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ বলেছে, প্রচারমাধ্যমের একাংশ ‘ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য’ পরিবেশন করে বলছে যে উত্তর চব্বিশ পরগনার সন্দেশখালী গ্রামে নারীদের ওপর ব্যাপক শারীরিক অত্যাচার ও নির্যাতন হয়েছে।

বুধবার রাত ১১টা নাগাদ ‘এক্স’ বা সাবেক টুইটারে প্রকাশিত কয়েকটি দীর্ঘ বার্তায় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ লিখেছে, ‘এটা বলা প্রয়োজন, রাজ্য নারী কমিশন, ডিআইজির (সিআইডি) নেতৃত্বে ১০ সদস্যের সম্পূর্ণ মহিলা প্রতিনিধিদল এবং জেলা পুলিশ ঘটনার তদন্ত করেছিল। তারা এখনো নারীদের ধর্ষণের কোনো অভিযোগ পায়নি।’

তবে শুধু রাজ্য সরকারের নারী কমিশন ও পুলিশই নয়, কেন্দ্র সরকারের অধীন জাতীয় নারী কমিশনও ঘটনার তদন্ত করেছে এবং তারাও সন্দেশখালীতে যৌন নির্যাতনের কোনো অভিযোগ পায়নি বলে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ।

পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ‘এক্সে’ লিখেছে, ‘জাতীয় নারী কমিশনের প্রতিনিধিরা, সন্দেশখালী সফর করেছেন। তাঁরাও নিশ্চিত করেছেন, স্থানীয় নারীদের ধর্ষণের কোনো অভিযোগ তাঁরা পাননি। অভিযোগ পাওয়া গেলে তা যথাযথভাবে গ্রহণ করা হবে এবং তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

দুই নারী কমিশন থেকে অভিযোগ না পাওয়ার কারণে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশ মন্তব্য করেছে, ভুয়া তথ্য প্রচারমাধ্যমের একাংশ প্রচার করছে। পুলিশের ভাষ্য, ‘সন্দেশখালীর ঘটনা নিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে গণমাধ্যমের একাংশ ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য প্রচার করছে। এটি পুনর্ব্যক্ত করা হচ্ছে যে এখন পর্যন্ত নারীদের ধর্ষণের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।’

তবে এর পাশাপাশি বুধবারও সন্দেশখালীতে বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা শেখ শাহজাহান ও তাঁর কথিত সহযোগীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে নারী বিক্ষোভকারীরা প্রতিবাদ জানান। শাহজাহান ও তাঁর গ্রুপের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক জমি দখল এবং নারীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। সন্দেশখালীর নারীদের একাংশ ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের বিরুদ্ধে যৌন শোষণের গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করার পর নারী কমিশনগুলো তদন্ত শুরু করে।

রেশনের খাদ্য কেলেঙ্কারির অভিযোগে অভিযুক্ত শেখ শাহজাহানের বাড়িতে অভিযানের সময় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) অফিসারদের ওপরে হামলা হয়। শাহজাহান গত মাস থেকে পলাতক। তিনি গ্রেপ্তার না হওয়ার কারণে পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের রাজনীতির একাংশে সন্দেশখালীর ঘটনা আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

রাজনৈতিক লড়াই

এখন জাতীয় মহিলা কমিশনের নির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকার কারণে স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্ব এ ঘটনায় বিজেপিকে আক্রমণ করে বলেছে, সন্দেশখালীকে কেন্দ্র করে ভুল তথ্য প্রচারের মাধ্যমে বিজেপি আসন্ন নির্বাচনের মুখে সুবিধা পেতে চাইছে। তৃণমূলের একাধিক নেতা বুধবার বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য দেন। জোরালো বক্তব্য দেন তৃণমূলের মুখপাত্র ও সাধারণ সম্পাদক কুনাল ঘোষ। তিনি বলেন, জাতীয় নারী কমিশনের প্রতিনিধিরা এলাকা ঘুরে বলেছেন, ধর্ষণ বা নারীদের তুলে নিয়ে যাওয়ার মতো কোনো অভিযোগ তাঁরা পাননি। তারপরও বিজেপি এবং সিপিএম পরিকল্পিতভাবে বাংলাবিরোধী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে!

রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেছেন, মণিপুরের ঘটনার মতো বিজেপি নেতারা ঘৃণা ছড়াচ্ছেন।

তবে বিজেপি জানিয়েছে, সন্দেশখালীকে কেন্দ্র করে তারা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবে।

আজ বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের সব জেলার পুলিশপ্রধানের (পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট) অফিস, কমিশনারের অফিস ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দপ্তরের সামনে এলাকায় বা অফিসে অবস্থান করবে বিজেপি। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, আজ প্রত্যেক পুলিশ সুপারিনটেনডেন্টের অফিসের সামনে বেলা দুইটা থেকে বিক্ষোভ হবে দুর্নীতির প্রশ্নে।

আরও পড়ুন