সাইরাসের মৃত্যু: কে নিয়ন্ত্রণ করবে ৩০০০ কোটি ডলারের পালোনজি গ্রুপ

টাটা গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান সাইরাস মিস্ত্রি
ছবি: এএনআই

ভারতের শাপুরজি পালোনজি (এসপি) ১৫৭ বছরের পুরোনো মাল্টি বিলিয়ন ডলারের শিল্প গ্রুপ। গতকাল রোববার গ্রুপটির সবচেয়ে কনিষ্ঠ বংশধর সাইরাস মিস্ত্রি (৫৪) মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। গত জুনের শেষ দিকে মারা যান গ্রুপটির পৈতৃক অভিভাবক পালোনজি মিস্ত্রি (জুনিয়র)। ফলে সাইরাসের মৃত্যু কোম্পানিটির জন্য দ্বিগুণ ধাক্কা হয়েই এসেছে।

এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় তিন হাজার কোটি ডলারের শাপুরজি পালোনজি গ্রুপটির ব্যবসায় রয়েছে বৈচিত্র্য। ১৩ হাজার কোটি ডলারের টাটা গ্রুপে এই শিল্প গ্রুপটির ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। সাইরাসের প্রপিতামহ সিনিয়র পালোনজি মিস্ত্রি ১৮৮৫ সালে লিটলউড পালোনজি অ্যান্ড কো. প্রতিষ্ঠা করেন।

সাইরাসের বাবা পালোনজি মিস্ত্রি ২৮ জুন ৯৩ বছর বয়সে মারা যান। তাঁকে ‘ফ্যান্টম অব বোম্বে হাউস’ বলা হতো। ব্লুমবার্গের ধনকুবের সূচক অনুযায়ী, ২০২২ সালে শাপুরজি পালোনজি গ্রুপের সম্পদের পরিমাণ গিয়ে ঠেকে প্রায় তিন হাজার কোটি ডলারে।

সাইরাস মিস্ত্রি ২০১২ সালে টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। কিন্তু ২০১৬ সালে রীতিমতো ‘পর্ষদ ক্যু’ ঘটিয়ে তাঁকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দায়িত্ব ছাড়ার সময় গ্রুপটির টার্নওভার ছিল ১০ হাজার কোটি ডলারের মতো, যা তাঁর সময়ে দ্বিগুণ হয়।

টাটা থেকে সাইরাসকে সরিয়ে দেওয়ার পরই মিস্ত্রি গ্রুপ দাপট দেখাতে শুরু করে। আফকনসের ব্যানারে প্রকৌশল ও নির্মাণ খাত থেকে শুরু করে আবাসন, ভোগ্যপণ্য ও সৌরবিদ্যুৎ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল পালোনজি গ্রুপের ব্যবসা। বর্তমানে ৫০টি দেশে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ গ্রুপটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।

পালোনজি মিস্ত্রির কনিষ্ঠ ছেলে সাইরাস। সদ্যপ্রয়াত সাইরাস স্ত্রী রোহিকা, ফিরোজ ও জাহান নামের দুই সন্তান রেখে গেছেন।

সাইরাস ২০১২ সালের ডিসেম্বরে টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর পারিবারিক ব্যবসা পরিচালনা থেকে সরে আসেন। বিতর্ক এড়াতে তিনি বড় ভাই শাপুর মিস্ত্রির হাতে দায়িত্ব ছেড়ে দেন।

২০১৯ সালের শেষ থেকে শাপুরজি পালোনজি গ্রুপের ব্যবস্থাপনায় আরও পরিবর্তন আসে। গ্রুপের হোল্ডিং কোম্পানির পর্ষদে শাপুরের ছেলে পালোনকে (২৬) যুক্ত করা হয়। একই সঙ্গে মেয়ে তানিয়া গ্রুপের করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

নতুন প্রজন্মকে গ্রুপের অধীন থাকা কোম্পানিগুলোর ডিজিটালাইজেশন এবং শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে আরও ভালোভাবে যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়। বর্তমানে গ্রুপের দীর্ঘমেয়াদি, কৌশলগত ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সর্বোচ্চ প্যানেলের অংশ পালোন।

২০১২ সালে পালোনজি মিস্ত্রি অবসরের ঘোষণা দেন। এর পর থেকে শিল্প গ্রুপটি নিয়ন্ত্রণ করছেন তাঁর বড় ছেলে ও সাইরাসের বড় ভাই শাপুর পালোনজি মিস্ত্রি। অবশ্য সাইরাস টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ায় গ্রুপ পরিচালনায় এই রদবদল আনতে হয়েছিল।

২০০৩ সালের শুরুর দিকে মিস্ত্রি পরিবার ভারতীয় নাগরিকত্ব ত্যাগ করে এবং আইরিশ জাতীয়তা গ্রহণ করে। এটা করতে হয়েছে, কারণ, সাইরাসের মা প্যাটসি পেরিন দুবাশের জন্ম ডাবলিনে। বৈবাহিক সূত্রে আইরিশ জাতীয়তা গ্রহণ করেন পালোনজি মিস্ত্রি। সে হিসেবে পরিবারের সদস্যরাও আইরিশ নাগরিকত্ব পান।

ঘোড়ার প্রতি ভালোবাসা আয়ারল্যান্ডের প্রতি পরিবারটির আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। পুনেতে ২০০ একরের একটি ঘোড়া পরিপালনের ফার্মও আছে তাঁদের।

আরও পড়ুন