পশ্চিমবঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে হিংসা, নদীয়ায় বিজেপির কর্মী খুন

পশ্চিমবঙ্গের সন্দেশখালিতে পুলিশি তল্লাশি অভিযান রুখে দাঁড়ান গ্রামবাসীছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতে সাত দফা লোকসভা নির্বাচন শেষ হওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক সহিংসতা শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ শুরু হয়। নদীয়ায় গতকাল সন্ধ্যায় প্রতিপক্ষের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) এক কর্মী। নিহত ব্যক্তির নাম হাফিজুল শেখ। তিনি নদীয়া জেলার কালীগঞ্জের চানপুরের বাসিন্দা।

হাফিজুল শেখের পরিবার বরাবর সিপিএমের সমর্থক। তাঁর এক ভাই সিপিএমের টিকিটে গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য হয়েছেন। সেই হাফিজুল কয়েক মাস আগে বিজেপিতে যোগ দেন তৃণমূলের ভয়ে। কিন্তু তাতেও তাঁর শেষরক্ষা হলো না।

জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যার পর এলাকার একটি চায়ের দোকানের পাশে ক্যারাম খেলছিলেন হাফিজুল। এ সময় তৃণমূলের ১০-১২ জন ‘মাস্তান’ এসে প্রথমে হাফিজুলের মাথায় গুলি করে। এরপর তাঁর সারা শরীরে এলোপাতাড়ি গুলি করে। সবশেষে মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য হাফিজুলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়।

ঘটনার পরপরই গ্রামবাসী এক হয়ে তৃণমূলকে দায়ী করে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁরা লাশ নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। তবে তৃণমূলের দাবি, হাফিজুল পারিবারিক বিবাদের জেরে খুন হয়েছেন।

পরে ময়নাতদন্তের জন্য হাফিজুলের মরদেহ নিয়ে যায় পুলিশ। ময়নাতদন্তের পর হাফিজুলের মরদেহ তাঁর পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়া হয়।

নদীয়ার পর একই চিত্র দেখা গেছে পশ্চিমবঙ্গের সন্দেশখালিতে। সেখানে পুলিশ নির্বাচন শেষে গ্রামে ঢুকে সাধন নন্দী নামের এক ব্যক্তিকে বিনা দোষে আটক করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে গ্রামবাসী সাধন নন্দীকে পুলিশ থেকে ছিনিয়ে নেন।

এরপর পুলিশ সাধন নন্দীকে উদ্ধারের জন্য সন্দেশখালির আগারহাটির মণ্ডল পাড়ায় তাঁর বাড়িতে অভিযানের নামে অত্যাচার শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে পুলিশি অত্যাচারের প্রতিবাদে সন্দেশখালির নারীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। ওই গ্রামে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।

শুধু সন্দেশখালি নয়, আজ পশ্চিমবঙ্গের আরও কয়েক জায়গায় সহিংসতা হয়েছে। বিজেপির দাবি, বুথফেরত জরিপে রাজ্যে তৃণমূলের পরাজয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তাই বিজেপির সমর্থকদের ওপর হামলা শুরু করেছে শাসক দল তৃণমূল।

ইতিমধ্যে বারাকপুরে বোমা ফাটানো হয়েছে। বেলেঘাটা বিধাননগরেও হামলা হয়েছে। ফলে বহু এলাকায় বিজেপির কর্মীরা বাড়িছাড়া হয়েছেন।

এই সব সহিংসতার ঘটনার পর বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ক্রসফায়ারের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘বিজেপি ক্ষমতায় এলে উত্তর প্রদেশের স্টাইলে ট্রিটমেন্ট করা হবে। ঠিকমতো ওষুধ দেওয়া হবে। এনকাউন্টার হবে।’

এর আগে কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অধীর চৌধুরী পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূলের প্রতিহিংসার রাজনীতির সমালোচনা করেছেন।