কেজরিওয়াল আদালতে বললেন, গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে আদালতে হাজির করা হয়। দিল্লি, ভারত, ২৮ মার্চছবি: এএনআই

নিম্ন আদালতে নিজেই নিজের হয়ে সওয়াল করলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। আজ বৃহস্পতিবার আদালতে তিনি বলেন, আম আদমি পার্টির (আপ) বিরুদ্ধে এক গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে।

পরে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) হেফাজতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের থাকার মেয়াদ ১ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন আদালত।

একই দিনে কেজরিওয়াল কিছুটা স্বস্তিও পেয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করার আবেদন জানিয়ে যে জনস্বার্থ মামলা হয়েছিল, দিল্লি হাইকোর্ট আজ বৃহস্পতিবার তা খারিজ করে দিয়েছেন।

রাজধানী দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউয়ে সিবিআই আদালতে বিচারক কাবেরী বাজওয়ার এজলাসে আজ হাজির করা হয় কেজরিওয়ালকে। সেখানে তিনি নিজেই নিজের হয়ে কিছু সওয়াল করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আম আদমি পার্টির (আপ) বিরুদ্ধে এক গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এটা পুরোপুরি এক রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। এই চক্রান্তের উদ্দেশ্য দুটি। একটি হলো আপকে ভেঙে দেওয়া। দ্বিতীয়টি, এর আড়ালে তোলাবাজির চক্র চালানো। কেজরিওয়াল বলেন, আসল দুর্নীতি শুরু হয়েছে ইডির তদন্ত শুরুর পর। তাঁকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে বিরাট আর্থিক লেনদেন চলেছে।

কেজরিওয়ালের স্ত্রী আগেই জানিয়েছিলেন, আদালতে তাঁর স্বামী বলবেন তথাকথিত মদ কেলেঙ্কারির ঘুষের টাকা গেল কোথায়। কেজরিওয়াল সেই রহস্যের উন্মোচন অবশ্য করেননি। আদালতের অনুমতি নিয়ে তিনি হিন্দিতে বলেন, ‘ইডি বলছে, এই দুর্নীতিতে নাকি ১০০ কোটি রুপি লেনদেন হয়েছে। সেই টাকা কোথায়?’ তিনি বলেন, ‘ইডি আমাকে গ্রেপ্তার করেছে। ওরা আরও অনেক দিন হেফাজতে রাখতে চায়। তার বিরোধিতা করব না। ওরা যত দিন খুশি আমাকে ধরে রাখতে পারে। কিন্তু আমাকে দোষী প্রমাণ করতে পারবে না। কোনো আদালতেই আমাকে অপরাধী প্রমাণ করা যায়নি।’ সিবিআই ৩১ হাজার ও ইডি ২৫ হাজার পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দিয়েছে। সেগুলো পড়েও গ্রেপ্তারের কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যাবে না।

কেজরিওয়াল বলেন, যাঁকে রাজসাক্ষী করা হয়েছে, তাঁকে দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে জোর করে বিবৃতি দেওয়ানো হয়েছে।

এদিকে কেজরিওয়ালকে হেফাজতে রাখার মেয়াদ আরও সাত দিন বাড়ানোর জন্য আদালতে আরজি জানায় ইডি। অতিরিক্ত কৌঁসুলি জেনারেল এস ভি রাজু আদালতকে বলেন, কেজরিওয়ালের স্ত্রী সুনীতা কেজরিওয়ালের ফোন থেকেও কিছু তথ্য উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলো বিশ্লেষণে সময় দরকার। তা ছাড়া তারা চায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে কয়েকজনের সঙ্গে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতে। কেজরিওয়াল সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘উনি অনেক প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাচ্ছেন। সন্তোষজনক উত্তরও দিচ্ছেন না। মুখ্যমন্ত্রী বলেই তিনি ছাড় পেতে পারেন না। সাধারণ নাগরিকের সঙ্গে তাঁর কোনো পার্থক্য নেই। ইডি এজলাসে জানায়, কেজরিওয়াল তাঁর মোবাইল ফোনের পাসওয়ার্ড তদন্তকারী কর্তাদের দিতে অস্বীকার করছেন। সহযোগিতা করছেন না।

গতকাল কেজরিওয়ালের সঙ্গে আদালতে ছিলেন তাঁর স্ত্রী সুনীতা। এজলাসে আপ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী আতিশী সিং, সৌরভ ভরদ্বাজ, গোপাল রাইসহ দলীয় নেতারা।

এদিকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে কেজরিওয়ালকে বরখাস্ত করার আবেদন দিল্লি হাইকোর্ট খারিজ করে দিয়েছেন। বিচারপতিরা বলেন, বিষয়টি আদালতের বিচার্য নয়।

গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই কেজরিওয়ালকে বরখাস্ত করার দাবি জানিয়ে আসছে বিজেপি। আদালত তা খারিজ করে দেওয়ায় প্রশ্ন উঠছে, দিল্লির উপরাজ্যপালকে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বরখাস্ত করা কিংবা দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার মতো সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় সরকার নেবে কি না। বিশেষ করে লোকসভা ভোট যখন অদূরে। সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভাবনাচিন্তা করছে।