দুই কামরার বাড়িতে থাকতেন, সাদাসিধে জীবনযাপন ছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের
অত্যন্ত সাদাসিধে, আড়ম্বরহীন জীবনযাপন করা মানুষ ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সারা জীবন তাঁর পরনে দেখা গেছে সাদা ধূতি আর সাদা পাঞ্জাবি। চোখে ছিল মোটা ফ্রেমের চশমা। থাকতেন নিজের বাসভবন দক্ষিণ কলকাতার পাম অ্যাভিনিউর একটি ফ্ল্যাটে দুটি কামরা নিয়ে। সঙ্গী স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য এবং একমাত্র সন্তান সুচেতন ভট্টাচার্য।
২০০০ সালে এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর রাজ্য সরকারের তরফ থেকে অনুরোধ করা সত্ত্বেও বুদ্ধদেব ভট্টচার্য তাঁর সেই সাধের দুই কামরার আবাসন ছেড়ে সরকারি বাসভবনে যাননি। এই আবাসনেই জীবনের বাকি সময় কাটিয়েছেন। চিরবিদায়ও নিয়েছেন আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পাম অ্যাভিনিউর ছোট্ট দুই কক্ষের আবাসন থেকে। চলে গেছেন তপশিয়ার পিসওয়ার্ল্ডের ঠান্ডা ঘরে। আজ তিনি রাত কাটাবেন সেখানে।
আগামীকাল শুক্রবার বেলা ১১টায় এই পিস ওয়ার্ল্ড থেকে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে রাজ্য বিধানসভায়। সেখানে শ্রদ্ধা জানোনোর পর তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়া হবে কলকাতায় সিপিএমের রাজ্য দপ্তর আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কার্যালয়ে। সেখানেই শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবেন দলের নেতা–কর্মী ও বিশিষ্টজনেরা। আসবেন বিভিন্ন রাজ্য ও রাজধানী দিল্লি থেকে দলের নেতারা। সেখান থেকে বিকেলের দিকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে কলকাতার দীনেশ মজুমদার ভবনে। এই ভবনেই রয়েছে সিপিএমের ছাত্র ও যুব সংগঠনের রাজ্য দপ্তর। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যই ছিলেন যুব সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। আর সভাপতি ছিলেন তাঁর বন্ধু দীনেশ মজুমদার। তারপর সেখান থেকে বিকেলে মরদেহ নিয়ে শোকযাত্রা হবে। শেষে বিকেল চারটার দিকে তাঁর মরদেহ দান করা হবে শিয়ালদহের কাছে এনআরএস মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। এর আগে আজ তাঁর চক্ষু দান করা হয়। ২০১০ সালে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর মৃত্যুর পর তাঁর দেহও দান করা হয়েছিল কলকাতার পিজি হাসপাতালে।
আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে ছুটে যান পাম অ্যাভিনিউর বাসভবনে। সেখানে গিয়ে তিনি গভীর শ্রদ্ধা জানান। মমতা বলেন, তিনি ছিলেন একজন সত্যিকারের ভালো মানুষ। সংস্কৃতিমনা।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা দেন, আজ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যুতে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সরকারি অফিস পুরো দিনের জন্য ছুটি দেওয়া হয়েছে। কাল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শ্রদ্ধা জানানো হবে। দেওয়া হবে গান স্যালুট।
২০০০ সালের ৬ নভেম্বর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তিনি মৃত্যুর আগে তিন দিন জ্বরে ভুগছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে প্রাতরাশের পর তিনি অসুস্থ বোধ করলে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেখানে যাওয়ার আগেই তিনি নিজের বাসভবনে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ১১ বছর। প্রথমে তিনি রাজ্য বিধানসভার বিধায়ক হন ১৯৭৭ সালে কলকাতার কাশীপুর কেন্দ্র থেকে। ওই কেন্দ্র থেকে তিনি পাঁচবার বিধানসভায় বিধায়ক হন। তবে ২০১১ সালের নির্বাচনে তিনি তৃণমূল প্রার্থী মণীশ গুপ্তের কাছে হেরে যান।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস, কলকাতার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাসহ কলকাতার বিশিষ্টজনেরা । তাঁরা তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করেছেন।