বেহাল ইন্ডিগোতে ভারতে উড়োজাহাজ পরিষেবা বিপর্যস্ত

ভারতের বেসরকারি খাতের বিমান সংস্থা ইন্ডিগোর একটি উড়োজাহাজফাইল ছবি: এএনআই

ভারতীয় উড়োজাহাজ পরিষেবা বেহাল অবস্থায় পড়ে গেল ইন্ডিগো বিমান সংস্থার কারণে। গত মঙ্গলবার রাত থেকে গতকাল বুধবার সারা দিনে ওই সংস্থার ২০০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। হঠাৎ কেন এই চরম অব্যবস্থা যার দরুণ যাত্রীদের হয়রান হতে হচ্ছে, তা জানতে চেয়েছে দেশের বিমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ডিজিসিএ’।

কয়েক দিন ধরেই দেশের বড় বড় শহরের বিমানবন্দরে ‘জিপিএস স্পুফিং’ (একধরনের সাইবার হামলা) ও ‘জিএনএসএস ইন্টারফেরেন্স’–এর ঘটনা ঘটছিল। সে কারণে বিমান পরিষেবা বিঘ্নিত হচ্ছিল। কয়েক শ বিমানের সময়সূচি বদলানো হয়েছিল।

এরই মধ্যেই ঘটে যায় ইন্ডিগো বিমান সংস্থার অব্যবস্থা। ফলে যাত্রী দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। শুধু সময়সূচি বদলই নয়, শেষ মুহূর্তে বহু উড়োজাহাজ বাতিলও করতে হয়।

এই অব্যবস্থার জন্য ইন্ডিগো সংস্থা যাত্রীদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে। নিজেদের গাফিলতি স্বীকার করে তারা এক বিবৃতিতে বলেছে, দুই দিন ধরে সংস্থার স্বাভাবিক কাজ বেশ ব্যাহত হচ্ছে। প্রযুক্তিগত ত্রুটি, শীতকালীন সময়সূচি পরিবর্তন, প্রতিকূল আবহাওয়া, বিমান চলাচলের ব্যবস্থায় ক্রমবর্ধমান যানজট ও বিমানকর্মীদের কাজের সংশোধিত সময়সূচির মতো কিছু অপ্রত্যাশিত কারণে পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে।

এসব বিষয় জানিয়ে যাত্রীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলেছেন, দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতির চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী, গত নভেম্বরে মাসে বিমানকর্মীদের কাজের সময়সূচি, যাকে ‘ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশন’ বলা হয়, তা সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধিত নিয়মে একজন কর্মীকে দিনে ৮ ঘণ্টা, সপ্তাহে ৩৫ ঘণ্টা, মাসে ১২৫ ঘণ্টা এবং বছরে সর্বোচ্চ ১ হাজার ঘণ্টা কাজ করতে হবে। বিশ্রাম নেওয়া বাধ্যতামূলক।

দুই দিন ধরে ইন্ডিগোর ফ্লাইট হয় বাতিল হচ্ছে, নয়তো বিলম্ব হচ্ছে
ছবি: এএনআই

পাইলট ও কেবিন ক্রুদের দিনে অন্তত ১০ ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে হবে যাতে তাঁরা ক্লান্ত বোধ না করেন। সময়সূচির এই পরিবর্তনের কারণে হঠাৎ কর্মী সংখ্যায় টান পড়তে শুরু করেছে বলে সংস্থা সূত্রের খবর।

ইন্ডিগো ভারতের সবচেয়ে বড় বিমান সংস্থা। দেশে–বিদেশে দিনে তাদের ২ হাজার ৩০০টির মতো ফ্লাইট চলাচল করে। নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী বিমান চলাচলের (অনটাইম পারফরম্যান্স) জন্য তাদের খ্যাতিও আছে। অথচ এই অব্যবস্থার দরুণ ডিসেম্বরের প্রথম তিন দিনে সেই খ্যাতির সূচক ৩৫ শতাংশে নেমে এসেছে।

বিভিন্ন বিমানবন্দরে যাত্রী বিক্ষোভের ছবি ও খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে আসরে নামতে হয়েছে ডিজিসিএকে।

উত্তর ভারতে শীতকালে এমনিতেই বিমান চলাচল অনিয়মিত হয়ে যায়। কিন্তু ততটা ঠান্ডা এখনো পড়েনি।

ডিজিসিএ জানিয়েছে, নানাবিধ কারণে নভেম্বর মাসে মোট ১ হাজার ২৩২টি উড়াল বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৫৫টি উড়াল বাতিল হয়েছে ‘ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশন’–এর কারণে পাইলট ও কেবিন ক্রুদের অনুপস্থিতির জন্য। বিমানবন্দর ও উড়াল পথে বিধিনিষেধের কারণে বাতিল করতে হয় ২৫৮টি ফ্লাইট। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ব্যবস্থায় গোলোযোগের জন্য বাতিল হয়েছে ৯২টি ফ্লাইট। অন্যান্য কারণে ১২৭টি।