মোদি-আদানি প্রশ্নে রাহুলকে বিজেপির পাল্টা আক্রমণ

নরেন্দ্র মোদি, রাহুল গান্ধী, গৌতম আদানি

ভাষণের অধিকাংশই সভার কার্যবিবরণী থেকে বাদ শুধু দেওয়াই নয়, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে আক্রমণের অন্য রাস্তা বেছে নিল শাসক বিজেপি। লোকসভার ভাষণের জন্য রাহুলের বিরুদ্ধে অধিকারভঙ্গের নোটিশ জারি করা হয়েছে। আগামী বুধবারের মধ্যে তার জবাব দিতে হবে।

রাহুলের বিরুদ্ধে অধিকারভঙ্গের নোটিশ দিয়েছেন খোদ সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশি ও নিশিকান্ত দুবে। অভিযোগ, রাহুল প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আবমাননাকর, বিভ্রান্তিকর, অসত্য, ভিত্তিহীন অভিযোগ এনেছেন। শিল্পপতি গৌতম আদানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্ক নিয়ে নানা মন্তব্য করেছেন। অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ দাখিল না করে রাহুল সভাকে বিভ্রান্ত করেছেন।

রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ জ্ঞাপন প্রস্তাবে আলোচনায় অংশ নিয়ে আদানি প্রসঙ্গ বড় করে তুলে ধরেন রাহুল। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, বিদেশ সফরে কতবার ওই শিল্পপতি তাঁর সঙ্গী হয়েছেন, কতবার আলাদাভাবে গিয়ে তাঁর সঙ্গে মিলিত হয়েছেন, কতবার সফরের অব্যবহিত পরেই সেই দেশে গেছেন। নির্বাচনী বন্ড মারফত আদানিরা বিজেপিকে কত টাকা দিয়েছে, সেই প্রশ্নের উত্তরও রাহুল জানতে চান। মরিশাসসহ অন্য দেশের শেল কোম্পানি মারফত কত টাকা ভারতে ঢুকেছে, জানতে চান তা–ও। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় ওই গোষ্ঠীকে বিদ্যুৎ প্রকল্প পাইয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি প্রভাব খাটিয়েছিলেন বলেও রাহুল অভিযোগ করেন।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ভাষণের সিংহভাগ স্পিকার কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেন। একই হাল হয় দুই কক্ষে অন্য বিরোধীদেরও। তাঁরা গণতন্ত্রকে হত্যার অভিযোগ আনেন। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য একটি অভিযোগেরও জবাব দেননি। তিনি বলেন, ১৪০ কোটি মানুষ তাঁর ঢাল।

আজ সোমবার লোকসভায় কংগ্রেস সদস্য মনীশ তিওয়ারির এক প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী ভাগবত কারাড জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর ওপরে আদানি গোষ্ঠীর বিপর্যয়ের প্রভাব পড়বে না। আদানিদের সংস্থায় রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থাগুলোর মোট লগ্নি ৩৪৭ কোটি ৬৪ লাখ রুপি, যা মোট সম্পদমূল্যের মাত্র দশমিক ১৪ শতাংশ। জীবনবিমা করপোরেশনের লগ্নি মোট সম্পদের ১ শতাংশের কম। অতএব সাধারণ মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

লোকসভার দুই কক্ষে আদানি–মোদি সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তোলার জন্য বিরোধীদের ভাষণের বহু অংশ বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে বিরোধীরা আজও সরব হন। রাজ্যসভার বিরোধী নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে এই বিষয়ে যে যে আপত্তি করেন, সেসবও কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেন চেয়ারম্যান উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়। বিরোধীরা তখন স্লোগান দিতে শুরু করেন। যুগ্ম সংসদীয় কমিটি গড়ে তদন্তের দাবিতে সরব হন।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বলেন, এটা পরিষ্কার, বিরোধীরা সংসদের তোয়াক্কা করেন না। তাঁরা আলোচনাও চান না। বিরোধীদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে সভা এক মাসের জন্য মুলতবি করে দেওয়া হয়। আজ ছিল সংসদের দুই কক্ষের বাজেট অধিবেশনের প্রথম পর্বের শেষ দিন। পরবর্তী অধিবেশন শুরু হবে ১৩ মার্চ।

আদানি গোষ্ঠীর দশটি সংস্থার প্রতিটির শেয়ারমূল্য আজও কমেছে। আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ার পড়েছে ৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। আদানি পোর্টস অ্যান্ড এসইজেডের ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ; আদানি টোটাল গ্যাস, আদানি ট্রান্সমিশন ও আদানি উইলমার পড়েছে ৫ শতাংশ করে। অম্বুজা সিমেন্টের দর পড়েছে ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ। আদানি পাওয়ার ও আদানি গ্রিন এনার্জির দরপতন হয়েছে ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ করে। এসিসির দাম পড়েছে ২ দশমিক ৯৫ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি পড়েছে এনডিটিভির দাম, ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ।