পশ্চিমবঙ্গে ভোট গ্রহণ চলছে, লড়ছেন শতাব্দী, শত্রুঘ্ন, মহুয়াসহ ৭৫ প্রার্থী

(বাঁ থেকে-ওপরে ও নিচে) অধীর চৌধুরী, শত্রুঘ্ন সিনহা, ইউসুফ পাঠান, মহুয়া মৈত্র, রাজমাতা অমৃতা রায়, দিলীপ ঘোষ, কীর্তি আজাদ, শতাব্দী রায়ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতের লোকসভা নির্বাচনে চতুর্থ দফার ভোটের লড়াই আজ সোমবার। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সকাল সাতটা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আটটি আসনে। চলবে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত।

বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বর্ধমান পূর্ব, বর্ধমান-দুর্গাপুর, আসানসোল, বীরভূম ও বোলপুর—পশ্চিমবঙ্গে এই আট আসনে আজ নির্বাচন হচ্ছে। আজ ভোট দেবেন ১ কোটি ৪৫ লাখ ৩০ হাজার ১৭ জন ভোটার। তৃতীয় লিঙ্গের ২৮২ জন ভোটার রয়েছেন। ১৫ হাজার ৫০৭টি ভোটকেন্দ্রে ভোট নেওয়া হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গে আজ তারকা প্রার্থীদের জমজমাট লড়াই হচ্ছে। বহরমপুরে কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী, রানাঘাটে বিজেপির জগন্নাথ সরকার, বর্ধমান পূর্ব আসনে বিজেপির সুরেন্দ্র সিং আলুওয়ালিয়া, বর্ধমানের দুর্গাপুরে বিজেপির দিলীপ ঘোষ, বোলপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের অসিত মাল, কৃষ্ণনগরে তৃণমূল কংগ্রেসের মহুয়া মৈত্র, আসানসোলে তৃণমূল কংগ্রেসের শত্রুঘ্নœসিনহা, বীরভূমে তৃণমূল কংগ্রেসের শতাব্দী রায়সহ ৭৫ প্রার্থী আজ লড়ছেন। এর মধ্যে পুরুষ ৫৯ জন, নারী ১৬ জন। সবচেয়ে বেশি প্রার্থী বহরমপুরে, ১৫ জন। রানাঘাট, বর্ধমান পূর্ব ও আসানসোলে ৭ জন করে।

তৃণমূল নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একসময় অন্য রাজ্য থেকে প্রার্থী এনে পশ্চিমবঙ্গে ভোটের লড়াইয়ে নামানোর সমালোচনা করতেন। তাঁর ভাষায় এসব ব্যক্তি ‘বহিরাগত প্রার্থী’। অথচ আজকের নির্বাচনে মমতার দল থেকে ভিন রাজ্যের তিনজন লড়ছেন।

গুজরাট ও বিহার থেকে এসে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের প্রার্থী হওয়া এই তিনজন হলেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার কীর্তি আজাদ, ইউসুফ পাঠান ও বলিউড তারকা শত্রুঘ্ন সিনহা। কীর্তি আজাদ ও শত্রুঘ্ন সিনহা বিহারের বাসিন্দা। আর ইউসুফ পাঠানের বাড়ি গুজরাটে।

কীর্তি আজাদ সাবেক ক্রিকেটার। ভীষণ জনপ্রিয় তিনি। কীর্তির বাবা ভগবৎ ঝাঁ আজাদ কংগ্রেসের রাজনীতি করতেন। বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। কীর্তিও কংগ্রেস থেকে এর আগে সংসদ সদস্য হয়েছেন। এবার তিনি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান-দুর্গাপুর আসন থেকে তৃণমূলের হয়ে ভোটে লড়ছেন। এই আসনে কীর্তির প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির শক্তিশালী প্রার্থী ও বিদায়ী সংসদ সদস্য দিলীপ ঘোষ। দিলীপ মেদিনীপুরের সংসদ সদস্য হলেও এবার দল তাঁকে বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে মনোনয়ন দিয়েছে। দুজনের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে।

আরেক তারকা প্রার্থী সাবেক ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানকে এবারই প্রথম তৃণমূল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বহরমপুর আসনে। ইউসুফ গুজরাটের বাসিন্দা। বহরমপুরে চারবারের সংসদ সদস্য ও রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরীর বিপরীতে লড়ছেন তিনি। বহরমপুরকে অধীরের দুর্গ ধরা হয়।

অধীর চৌধুরী বলেছেন, বহরমপুরের মানুষ এবারও তাঁকে সংসদে পাঠাবেন। জয় তাঁর সুনিশ্চিত। হারলে তিনি দল ছেড়ে দেবেন।

বহরমপুরের রাজনীতিতে ইউসুফ পাঠান নতুন মুখ। এখানে বিজেপির প্রার্থী স্থানীয় প্রখ্যাত চিকিৎসক নির্মল সাহা। তাই এবারের নির্বাচনে বহরমপুর আসনে অধীরের সঙ্গে ইউসুফ-নির্মলের ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে।

নদীয়ার কৃষ্ণনগর আসনে লড়ছেন তৃণমূলের সাবেক সংসদ সদস্য মহুয়া মৈত্র, কংগ্রেস-বাম দল সিপিএমের এস এম সাদি ও বিজেপির কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির রাজমাতা অমৃতা রায়। তবে মূল লড়াই হতে পারে মহুয়া-অমৃতার। মহুয়া মৈত্র তৃণমূলের নামী প্রার্থী হলেও সম্প্রতি তিনি সংসদে ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন করার অভিযোগে সংসদ সদস্যপদ হারিয়ে আলোচনায় এসেছেন।

আরও পড়ুন

নদীয়ার রানাঘাটে এবার লড়ছেন বিজেপির বিদায়ী সংসদ সদস্য জগন্নাথ সরকার, তৃণমূলের মুকুটমণি অধিকারী ও বাম-কংগ্রেস জোটের সিপিএম প্রার্থী অলকেশ দাস। রবীন্দ্রস্মৃতিবিজড়িত বোলপুরে লড়ছেন তৃণমূলের বিদায়ী সংসদ সদস্য অসিত মাল, বিজেপির প্রিয়া সাহা ও সিপিএমের শ্যামলী প্রধান।

বীরভূম আসনে এবার তৃণমূলের হয়ে লড়ছেন অভিনেত্রী শতাব্দী রায়। দুবার জিতেছেন তিনি এ আসনে। এবার তিনি কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়েছেন বিজেপির দেবতনু ভট্টাচার্যের সঙ্গে। এ আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী মিল্টন রশিদ।

আসানসোলে তৃণমূল-বিজেপির দ্বিমুখী লড়াই হতে পারে। এখানে তৃণমূলের প্রার্থী বলিউড তারকা শত্রুঘ্ন সিনহা। তিনি দ্বিতীয়বার এ আসনে লড়ছেন। অন্যদিকে বিজেপি প্রার্থী করেছে সুরেন্দ্র সিং আলুওয়ালিয়াকে। তিনি বিদায়ী সংসদ সদস্য।

আরও পড়ুন

বর্ধমান পূর্ব আসনে লড়ছেন তৃণমূলের নতুন এক প্রার্থী, এলাকার জনপ্রিয় চিকিৎসক শর্মিলা সরকার। রাজনীতিতে তিনি নবাগত। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির অসীম সরকার। তিনি প্রখ্যাত লোকসংগীতশিল্পী। এই আসনে সিপিএমের প্রার্থী হয়েছেন নীরব খাঁ। এখানে তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে মূল লড়াই হলেও সিপিএম ভোটে কিছুটা ভাগ বসাতে পারে।

পশ্চিমবঙ্গে লোকসভার ৪২টি আসন রয়েছে। এর আগে গত ১৯ এপ্রিল প্রথম দফায় ৩টি, ২৬ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় ৩টি, ৭ মে তৃতীয় দফায় ৪টি আসনে নির্বাচন হয়েছে।

আজকের চতুর্থ দফার নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করার জন্য ৫৭৯ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে বর্ধমান পূর্ব আসনে, ১৫২ কোম্পানি। ৮টি আসনে থাকছেন রাজ্যের ৩০ হাজার ৯ জন পুলিশ সদস্য।

আরও পড়ুন