ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায়: অবিবাহিত নারীও গর্ভপাতের অধিকারী

দেশের সব নারী গর্ভপাতের অধিকারী। ২০ থেকে ২৪ সপ্তাহের গর্ভপাতের অধিকারী অবিবাহিত নারীরাও। গর্ভপাতের ক্ষেত্রে কে বিবাহিত কে নন, সেই প্রশ্ন অবান্তরই শুধু নয়, অসাংবিধানিকও। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট আজ বৃহস্পতিবার এই যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন।

বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জে বি পর্দিওয়ালা এবং বিচারপতি এ এস বোপান্নার বেঞ্চ এই রায় দেওয়ার সময় জানিয়েছেন, গর্ভপাতের অধিকার সব নারীর রয়েছে। কেউ অবিবাহিত বলে ওই অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন না। ২০২১ সালের ‘মেডিক্যাল টার্মিনেশন অব প্রেগন্যান্সি আইন’ সংশোধনের কথা উল্লেখ করে বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, কোনো অবিবাহিত নারীর অবাঞ্ছিত গর্ভপাতের অধিকার না থাকা সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার হরণের পর্যায়ে পড়ে। ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভপাতের ক্ষেত্রে কে একাকী নারী, কে অবিবাহিত—সেই প্রশ্ন ওঠা অন্যায় ও অনৈতিক। এমন প্রাচীন ধ্যান ধারণা থাকা উচিত নয় যে শুধু বিবাহিত নারীরাই যৌনতার অধিকারী।

রায় দানের সময় সুপ্রিম কোর্ট বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন। বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, গর্ভপাতের ক্ষেত্রে বৈবাহিক ধর্ষণকেও ‘ধর্ষণ’ বলে গণ্য করা প্রয়োজন। বিবাহিত নারীও যৌন হেনস্তা বা ধর্ষণের শিকার হতে পারেন। সম্মতি ছাড়া অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিবাহিত নারী অন্তঃসত্ত্বা হতে পারেন। এসব নারীও গর্ভপাতের অধিকারী। আইনের আওতায় তাঁদেরও সেই অধিকার দিতে হবে। বৈবাহিক ধর্ষণ আইনত অপরাধ কি না, সেই বিষয় এই মুহূর্তে সুপ্রিম কোর্টের বিবেচনাধীন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে গর্ভপাতসংক্রান্ত এই রায় যুগান্তকারী।

২৫ বছর বয়সী এক নারীর গর্ভপাতের আবেদনসংক্রান্ত মামলায় দিল্লি হাইকোর্ট রায় দিয়েছিলেন, আইন অনুযায়ী ওই নারী গর্ভপাত করাতে পারেন না, যেহেতু তিনি অবিবাহিত এবং সম্মতিক্রমে গর্ভধারণ করেছিলেন। সেই নারী সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন। বলেন, তাঁর মা-বাবা কৃষক। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। সন্তান প্রতিপালনের মতো আর্থিক অবস্থা তাঁদের নেই। অথচ তাঁর সঙ্গী তাঁকে বিয়ে করতে অস্বীকার করেছেন। গত ২১ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে গর্ভপাতের অনুমতি দিয়ে বলেছিলেন, তার আগে ডাক্তারি পরামর্শ প্রয়োজন। গর্ভপাতের ফলে শারীরিক ক্ষতির সম্ভাবনা নেই তা নিশ্চিত করতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকেও এই বিষয়ে নোটিশ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, গর্ভপাতের ক্ষেত্রে বিবাহিত–অবিবাহিত প্রসঙ্গটি যেন বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়। ২৩ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট শুনানি শেষে এই মামলার রায় সংরক্ষিত রেখেছিলেন।