ওবামার বিরুদ্ধে বিজেপির ক্ষোভ বাড়ছে, বিতর্কও

বারাক ওবামা
ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মন্তব্যের বিরোধিতায় বিজেপি অপ্রত্যাশিত সহায়তা পেল সে দেশের কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডমের (ইউএসসিআইআরএফ) সাবেক কমিশনার জনি মুরের কাছ থেকে। গতকাল সোমবার ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ওবামার উচিত ভারতের সমালোচনার চেয়ে বেশি প্রশংসা করা।

মানবসভ্যতায় ভারত সবচেয়ে বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ। এ দেশের সবকিছু ঠিকঠাক অবশ্যই নয়; যেমন যুক্তরাষ্ট্রেরও নয়। কিন্তু বৈচিত্র্যই ওই দেশের শক্তি। তাই যখনই সুযোগ পাওয়া যায়, তখনই আমাদের উচিত পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের প্রশংসা করা।’
জনি মুর যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মপ্রচারক নেতা। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনে তিনি সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন। ট্রাম্প জেতার পর মুর তাঁর আধ্যাত্মিক উপদেষ্টাও হন। ওবামার পররাষ্ট্রনীতির বরাবরের সমালোচক হিসেবে তিনি পরিচিত।

ভারতের সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ ও মানবাধিকার হরণসংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে জনি মুর সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মন্তব্যের সমালোচনা বিজেপিকে উৎসাহিত করেছে। বিশেষ করে তিনি যখন ছিলেন সে দেশের কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডমের সাবেক কমিশনার।

প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওবামা বলেছিলেন, নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা বলার সুযোগ থাকলে তিনি বলতেন, সংখ্যালঘুদের স্বার্থ না দেখলে একটা সময় দেশটা ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। তাতে হিন্দু ভারতেরও কিন্তু মঙ্গল হবে না।

ওবামার ওই মন্তব্যের প্রথম সমালোচনা করেছিলেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। বারাক ওবামাকে তিনি ‘হুসেন ওবামা’ বলে চিহ্নিত করেছিলেন। সেই থেকে বিজেপির নেতা-মন্ত্রীদের সমালোচনা বিরামহীন হয়েই চলেছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বিজেপি সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে ওবামাকে আক্রমণের পর একইভাবে মুখ খোলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।

গতকাল জম্মুতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওবামার ভোলা উচিত নয় যে ভারতই একমাত্র দেশ, যে বিশ্বাস করে, গোটা পৃথিবীই এক পরিবার।’ নির্মলা সীতারমণের সুরে সুর মিলিয়ে রাজনাথও বলেছেন, ‘যিনি ছয়টি মুসলিম দেশে বোমা বর্ষণ করেছেন, তাঁর মুখে মুসলমানদের স্বার্থ নিয়ে ভারতের সমালোচনা মানায় না।’

মন্ত্রী–নেতাদের দিয়ে ওবামার এমন সমালোচনা যে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশেই, তা সহজেই অনুমেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপির সংসদীয় বোর্ডের এক সদস্য এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘অবশ্যই এ ক্ষেত্রে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের অনুমোদন রয়েছে। সে কারণেই বিভিন্ন নেতা এক সুরে সাবেক প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করছেন। ওবামা প্রশ্নে দলের কোথাও কোনো বিরোধ নেই।’

নির্মলা, রাজনাথের সুরে সমালোচনা করেছেন সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও দলের মুসলমান মুখ মুখতার আব্বাস নাকভিও। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর ১০ জন মুসলমানের মধ্যে ১ জন থাকেন ভারতে। মুসলমানদের ভালোমন্দ নিয়ে ভারতকে যাঁরা জ্ঞান দিচ্ছেন, তাঁরা এ দেশের নাগরিকদের অধিকার ও সংস্কৃতি সম্পর্কে অজ্ঞ।’

তবে ওবামা সম্পর্কে অত্যন্ত কড়া মন্তব্য করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি বৈজয়ন্ত জয় পান্ডা। ওডিশার এই নেতা ওবামাকে প্রকারান্তরে ভারতবিরোধী বলে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘অদ্ভুত লাগছে এটা দেখে যে ভারতবিরোধী লোকজনের মতো তিনিও ভারতকে জ্ঞান দিচ্ছেন। বোঝাতে চাইছেন, সিংকিয়াং প্রদেশের উইঘুর মুসলমানদের ওপর চীন যেমন অত্যাচার চালাচ্ছে, ভারতের আচরণও যেন তেমনই!’

ওবামার মন্তব্য নিয়ে বিজেপির এই সমালোচনা বিরোধী শিবিরকেও সরব করেছে। কংগ্রেস এই প্রবণতা মারাত্মক মনে করছে। দলের মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনাতে বলেছেন, ‘এখানে এখন আনুগত্যের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ কিন্তু আমাদের মতো নয়। তারা সাবেক প্রেসিডেন্টের অপমান সাধারণত উপেক্ষা করে না।’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এই ভয়ংকর প্রবণতায় রাশ টানুন। মন্ত্রীদের সংযত হতে বলুন।’

সংযত হওয়ার লক্ষণ যদিও নেই; তা দেখে হায়দরাবাদের এআইএমআইএম নেতা ও সংসদ সদস্য আসাউদ্দিন ওয়েইসি বলেছেন, ‘বিস্ময়ের কিছু নেই যে মন্ত্রীরা কেউ চীনা আগ্রাসন নিয়ে কিংবা মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলবেন না। লাদাখের মোট ৬৫টি এলাকার মধ্যে ২৬টিতে টহলদারির অধিকার ভারতীয় ফৌজকে চীন এখনো দেয়নি।

কিন্তু মন্ত্রী-এমপিরা ওবামাকে নিয়েই গলা ফাটাবেন।’ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে টুইট করে তিনি বলেছেন, ‘আশা করি, এই সফরের পর এবার তিনি চীনের নাম সরাসরি মুখে আনার সাহস অর্জন করবেন। ভয়ে আর সেঁধিয়ে থাকবেন না। এবং মণিপুর নিয়ে মৌনব্রত ভাঙবেন। টানা আট সপ্তাহ ধরে মণিপুর জ্বলছে।’

প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করে ওয়েইসি টুইটে আরও লিখেছেন, ‘মণিপুরের সরকারি অস্ত্রাগার থেকে চার হাজারেরও বেশি অস্ত্র লুট হয়েছে অথচ একজনেরও গর্দান যায়নি। কাশ্মীরের কথা বাদই দিন, এর কণামাত্র অন্য কোনো বিরোধী শাসিত রাজ্যে ঘটলে এবং মিডিয়ায় সমস্বর হইচই শুরু করানো হলে কী হতো ভাবুন। কী আর করা যাবে, এটাই নতুন ভারত।’

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে টুইটে ওয়েইসির বার্তা, ‘আপনি মিসরের মসজিদে যাচ্ছেন। কাশীর (বারানসি) মসজিদেও ঘুরে আসুন না। আপনি তো ভারতের প্রধানমন্ত্রী, মিসরের নন।’