ঘৃণ্য অপরাধ ঠেকাতে কানাডাকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান ভারতের

ভারত ও কানাডার পতাকা
ছবি: রয়টার্স

ঘৃণা ভাষণ, ঘৃণ্য অপরাধ, ধর্মস্থানে হামলা ঠেকাতে কানাডাকে সক্রিয় হতে বলল ভারত। গতকাল সোমবার জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পর্ষদের পর্যালোচনা বৈঠকে ভারতের এই সুপারিশের সঙ্গে গলা মিলিয়েছে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাও।

কানাডার সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় ও কূটনৈতিক সম্পর্ক এই মুহূর্তে তলানিতে ঠেকেছে। এই পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘু অধিকার, ঘৃণা ভাষণ, বর্ণবাদী বৈষম্য নিয়ে ভারতের সুপারিশের সঙ্গে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার গলা মেলানো তাৎপর্যপূর্ণ।

কানাডার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতির পেছনে রয়েছে সে দেশে বসবাসকারী শিখ সম্প্রদায়ের একাংশ। শিখদের ওই অংশ বিচ্ছিন্নতাবাদী খালিস্তানিদের সক্রিয় সমর্থক। তারা স্বাধীন পাঞ্জাব রাষ্ট্র খালিস্তান গঠনের স্বপ্ন দেখে। ভারতের অভিযোগ, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অনেক দিন ধরেই ওই শিখদের মদদ দিচ্ছেন। শিখদের সমর্থনে ভর করে তাঁর সংখ্যালঘু সরকার টিকে রয়েছে বলে তিনি সেটা করছেন। এ কারণে শিখ সম্প্রদায়ের ওই অংশের ভারতবিরোধী প্রচার, ভারতীয় দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ ও হামলার বিরুদ্ধে তিনি কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর মনে করেন, সে দেশের শিখেরা যা করছেন, তা গণতান্ত্রিক আন্দোলন।

প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো আবার সে দেশের শিখ নাগরিক হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যায় ভারতের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। সে দেশের সংসদে নিজেই সেই অভিযোগ এনে ভারতকে তদন্তে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। ভারত পাল্টা বলেছে, ওই সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণ তাদের কাছে পেশ করতে। কানাডার ৪০ কূটনীতিককে ভারত বহিষ্কার করেছে। এ নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। ট্রুডো বলেছেন, ভারত আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।

এ অবস্থায় জাতিসংঘের বৈঠকে কানাডার সমালোচনায় ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার গলা মেলানো কূটনৈতিক দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ।

ভারতীয় কূটনীতিক মহম্মদ হুসেন বলেন, বাক্‌স্বাধীনতার অপব্যবহার রুখতে অভ্যন্তরীণ কাঠামো শক্তিশালী করার ওপর জেনেভায় ভারত গুরুত্ব দেয়। বিশেষ করে সেই ধরনের কাজকর্ম, যা হিংসা ছড়ায়। পাশাপাশি ভারতের প্রস্তাব, যেসব গোষ্ঠী চরমপন্থী, যারা উগ্রপন্থা ছড়াতে সহায়তা করছে, তাদের কাজকর্মে রাশ টানা হোক। ধর্মস্থানে আক্রমণ বন্ধ করা হোক এবং বর্ণবাদ, ঘৃণা ভাষণ ও ঘৃণিত অপরাধ বন্ধে কানাডা সচেষ্ট হোক।

লক্ষণীয়, ভারতীয় কূটনীতিক মহম্মদ হুসেনের এই মনোভাব ও সুপারিশের সঙ্গে বাংলাদেশও সহমত।

বাংলাদেশের কূটনীতিক আবদুল্লাহ আল ফরহাদ বলেন, ঘৃণা ভাষণ, বর্ণবাদ ও ঘৃণ্য আক্রমণ রুখতে কানাডার নির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। পাশাপাশি মুসলমান সংখ্যালঘু ও অভিবাসীদের প্রতি বৈষম্যও দূর করা দরকার। বাংলাদেশ অবশ্য এ সময় মানবাধিকার রক্ষা ও মানব পাচার রোধে কানাডার সক্রিয় ভূমিকার প্রশংসা করেছে এবং কার্বন নিঃসরণ কমানো ও জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় তাদের আরও সচেষ্ট হতে বলেছে।

অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার ওপর জোর দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। সে দেশের কূটনীতিক তিলিনি জয়শেখর বলেন, অভিবাসীদের অধিকার খর্ব করছে বর্ণবাদী বৈষম্য। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যিক। তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের নিয়ে ভুল তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। সেটাও বন্ধ করা দরকার।