মিজোরামেও প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল কংগ্রেস
উত্তর, পশ্চিম ও মধ্য ভারতে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হওয়ার পরে উত্তর-পূর্ব ভারতের মিজোরামেও প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল কংগ্রেস। তবে অন্য প্রান্তের মতো উত্তর-পূর্বে তাদের জেতার সম্ভাবনা ছিল না, কিন্তু আসনসংখ্যা বাড়ার একটা সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি।
সোমবার ফল ঘোষণার পরে দেখা যাচ্ছে, সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনের চেয়েও চারটি আসন কম পেয়েছে কংগ্রেস। তারা পেয়েছে মাত্র একটি আসন। অন্যদিকে গত সাত মাসের জাতিগত সংঘাতের পরেও বিজেপির আসন এক থেকে বেড়ে হয়েছে দুই। মিজোরামের ৪০ সদস্যের বিধানসভায় সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা এবং সাবেক সংসদ সদস্য লালদুহমার দল জোরাম পিপলস মুভমেন্ট (জেপিএম) প্রথমবারের মতো সরকার গঠন করতে চলেছে ২৭টি আসন পেয়ে। তারা হারিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গার দল মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টকে।
জেপিএম ছয়টি স্থানীয় দল এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিত্বমূলক জোট নিয়ে গঠিত একটি দল। এই ছটি দল বা জোট হলো মিজোরাম পিপলস কনফারেন্স, জোরাম ন্যাশনালিস্ট পার্টি, জোরাম এক্সোডাস মুভমেন্ট, জোরাম বিকেন্দ্রীকরণ ফ্রন্ট, জোরাম রিফরমেশন ফ্রন্ট ও মিজোরাম পিপলস পার্টি। এদের একই মঞ্চে এনে ২০১৭ সালে দল গঠন করেন লালদুহমা। সাবেক বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা জোরামথাঙ্গার দল মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট নানা ক্ষেত্রে, বিশেষত গৃহযুদ্ধে রত মিয়ানমার থেকে ভারতে শরণার্থী প্রবেশের বিষয়ে ভারত সরকারের কী নীতি হবে—তা নিয়ে বিজেপির বিরোধিতা করেছে। যে কারণে মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টের একটা জনপ্রিয়তা মিজোরামে রয়েছে। কিন্তু খানিকটা অর্থনৈতিক চাপের কারণেই মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গাকে শেষ পর্যন্ত বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সে যোগ দিতে হয়েছিল। অনেকটা সে কারণে তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন সাধারণ মানুষ। কারণ, মিজোরামে এখনো সেভাবে বিজেপির জনপ্রিয়তা নেই; যদিও তাদের আসন একটি বেড়েছে।
উল্টো দিকে জেপিএমের জনপ্রিয়তা বাড়ার কারণ তাদের গভীর বিজেপি–বিরোধিতা। ঘোষিতভাবে জেপিএম একটি ধর্মনিরপেক্ষ দল। মিজোরামে ক্রিশ্চিয়ানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং সে কারণে জেপিএমের জনপ্রিয়তা গত কয়েক বছরে দ্রুত বেড়েছে। কারণ, তাদের বিরোধীরা শেষ পর্যন্ত হাত মিলিয়ে ছিলেন বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের সঙ্গে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে এককভাবে ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গাও প্রথমে হাত মেলাননি বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে। শেষ পর্যন্ত তাঁকে তা করতে হয়েছিল কিছুটা অর্থনৈতিক কারণে এবং কিছুটা ভূরাজনৈতিক কারণে, আন্তর্জাতিক সীমান্তবর্তী রাজ্যের বাধ্যবাধকতা মাথায় রেখে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেওয়ার জন্য একটা রাজনৈতিক চাপও তাঁর ওপর ছিল।
খ্রিষ্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি দলের নেতৃত্ব দিয়ে শেষ পর্যন্ত বিজেপির সঙ্গে হাত না মিলিয়ে আগামী পাঁচ বছর লালদুহমা রাজ্য চালাতে পারেন কি না, এখন সেটাই দেখার।