পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপূজায় আর জি কর হাসপাতাল-কাণ্ডের ছায়া
কলকাতার আর জি কর হাসপাতাল-কাণ্ডের আবহে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে শুরু হয়েছে দুর্গাপূজা।
এবার দুর্গাপূজায় অন্যবারের তুলনায় আড়ম্বর কম। অনেক মণ্ডপে আর জি কর হাসপাতালে ধর্ষণ-হত্যার শিকার নারী চিকিৎসকের ছবি টাঙিয়ে তাঁকে স্মরণ করা হচ্ছে।
রাজ্যের পূজা কমিটিগুলো বলছে, আর জি কর-কাণ্ড এবারের দুর্গাপূজার আনন্দকে অনেকটাই ম্লান করে দিয়েছে।
অনেক পূজা কমিটি নিজ থেকে উৎসবে আড়ম্বর কমিয়ে দিয়েছে। তারা এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ধর্ষণ-হত্যার শিকার নারী চিকিৎসকের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছে।
গত ৯ আগস্ট আর জি কর হাসপাতালের এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। এই ঘটনার পর রাজ্যজুড়ে তুমুল আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলন এখনো চলছে।
পশ্চিমবঙ্গের বহু পূজা কমিটি এবার দুর্গাপূজায় রাজ্য সরকারের দেওয়া ৮৫ হাজার রুপির অনুদান ফিরিয়ে দিয়েছে। তারা বলছে, আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ হিসেবে অনুদান ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রাজ্যের চার হাজার পূজা কমিটিকে এই অনুদান দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
দুর্গাপূজার মণ্ডপগুলো সাধারণত বিভিন্ন বিষয়বস্তু ধরে বানানো হয়। এবার মণ্ডপের নকশায় আর জি কর-কাণ্ডের ছাপ দেখা গেছে।
অনেক মণ্ডপে ধর্ষণ-হত্যার শিকার নারী চিকিৎসকের ছবি টাঙানো হয়েছে। অনেক মণ্ডপে প্রতিবাদী চিকিৎসকদের আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে ‘মেরুদণ্ড’ রাখা হয়েছে।
দুর্গাপূজার সময় ভারত ও ভারতের বাইরে থেকে বহু মানুষ পূজা দেখতে পশ্চিমবঙ্গ, বিশেষ করে কলকাতায় আসেন। এবার কলকাতায় বারোয়ারি বা সর্বজনীন পূজা হচ্ছে ২ হাজার ৯০৫টি। গত বছরের চেয়ে তা ৩৪৮টি বেশি।
পূজা উদ্যাপন নির্বিঘ্ন করতে রাজ্যজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পূজায় কলকাতা শহরে দায়িত্বে আছেন ১০ হাজার পুলিশ। এ ছাড়া ড্রোনের সাহায্যে চলবে নিরাপত্তা নজরদারি।
নারীদের সুরক্ষার জন্য লালবাজার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নিয়োগ করা হয়েছে ‘উইনার্স’ ও ‘শক্তি’ দল। এ ছাড়া শহরজুড়ে স্থাপন করা হয়েছে ৫৮টি ‘ওয়াচ টাওয়ার’।
কলকাতা পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা বলেছেন, নগরজুড়ে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা সম্পন্ন করার জন্য সার্বিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
নানা ‘থিম’
সাবেকি থেকে বর্তমান নানা বিষয়কে (থিম) ভিত্তি করে এবার পূজামণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। মতি লাল নেহরু রোডের মৈত্রী সংঘ থিম করেছে পলাশীর যুদ্ধকে। হালি শহরের বলাকা শিশুমহল থিম করেছে পুরুলিয়ার ছৌনাচ। হালিশহরের বাগমোড় ত্রিপর্ণের পুজোর থিম হ্যারি পটার।
কাঁচরাপাড়ার লিচুবাগান নবাঙ্কুর ক্লাবের থিম রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরের গির্জা। বারাকপুরের নোনাচন্দনপুকুরের থিম রাজস্থানের ঐতিহাসিক শিশ মহল। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পৈতৃক ভিটে কোদালিয়া। সেখানকার নেতাজি সংঘ পুজোর থিম করেছে সুকুমার রায়ের কবিতার আদলে। নরেন্দ্রপুরের গ্রিন পার্ক পূজা কমিটি মণ্ডপ করেছে ১২ হাজার মাটির কলসি দিয়ে।
সোদপুরের এসবি টাউনের পুজোর থিম ‘চৈতন্য হোক’। মহাজাতি নগরের থিম ‘সৃষ্টির উল্লাস’। বিদ্যাসাগর সেন্ট্রাল ক্লাব ও ভবানীপুর ৭৫ পল্লির মণ্ডপ-প্রতিমা তৈরি হয়েছে প্রখ্যাত ভাস্কর সনাতন দিন্দার ভাবনায়। মূল থিম আর জি কর ঘটনার ছায়ায় ‘নারী সুরক্ষা’।