ডোপ টেস্টের ভয়ে পালিয়ে গেছেন অ্যাথলেটরা, আসেননি পুরস্কার নিতেও

জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়াম
ছবি: স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া

জমজমাট জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়াম। দিল্লি স্টেট অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপের শেষ দিন। সেদিন পুরুষদের ১০০ মিটার স্টিপলচেজ দৌড়ে প্রতিযোগীদের নাম ঘোষণার পর মাঠে হাজির হন শুধু একজন প্রতিযোগী। অন্যরা লাপাত্তা। আরেক ইভেন্টে মাত্র একজন প্রতিযোগী দৌড়ান। শেষ ধাপ শেষ করার পরও তিনি থামছিলেন না, দৌড়েই যাচ্ছিলেন। এমনকি অন্যান্য ইভেন্টে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করার পর অনেকেই পুরস্কার নিতে আসেননি।

কারণটি হলো ডোপ টেস্ট বা শরীরে মাদকের অস্তিত্ব। সেদিন আচমকাই মাঠে হাজির হয়েছিল ডোপিং নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তারা। এরপরই শুরু হয় ইঁদুর–বিড়াল খেলা। এসব ঘটনা গত ২৬ সেপ্টেম্বরের।

ন্যাশনাল অ্যান্টি ডোপিং এজেন্সির কর্মকর্তারা মাঠে এসেছেন—এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে প্রতিযোগীদের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক কমে যায়। স্টেডিয়ামের শৌচাগারে সিরিঞ্জের স্তূপ পড়ে আছে—এমন এক ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার এক দিন পরই ডোপিং কর্মকর্তারা মাঠে হানা দেন।

জোশুয়া বলেন, ‘আমাদের কাজ হলো অ্যাথলেট ও কোচদের শেখানো। কিন্তু অনুশীলনের সময় বা আমাদের পেছনে তারা কী করছে, তা সারাক্ষণ নজরদারি করা সম্ভব নয়। অ্যাথলেটিকসের জন্য মাদক বড় এক হুমকি এবং আমরা এর বিরুদ্ধে।’
সানি জোশুয়া , প্রেসিডেন্ট, দিল্লি স্টেট অ্যাথলেটিকস অ্যাসোসিয়েশন

একজন জ্যেষ্ঠ কোচ দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘ট্র্যাক ইভেন্টে আমাদের চূড়ান্ত আটজন প্রতিযোগী ছিল। মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) হাজির ছিল মাত্র তিন থেকে চারজন। জুনিয়র স্টিপলচেজ ইভেন্টে এক মেয়ে দৌড়ের শেষ লাইন অতিক্রম করার পরও থামছিল না। একজন ডোপিং কর্মকর্তা তার রক্তের নমুনা নেওয়ার জন্য পিছু নেন।’

১০০ মিটার পুরুষদের দৌড়ে ললিত কুমার শুধু হাজির ছিলেন। আর বাকি সাত স্প্রিন্টার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁদের ‘মাংসপেশিতে টান’ পড়েছে।

ললিত প্রথমবারের মতো সিনিয়র লেভেলে লড়ছেন। হঠাৎ করে অন্য প্রতিযোগীদের নাই হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি সেরা খেলোয়াড়দের সঙ্গে  প্রতিযোগিতা করতে চাইছিলাম। কিন্তু কেউ ছিলেন না। সবাই ডোপিং টেস্টকে ভয় পাচ্ছিলেন। একজন খেলোয়াড় হিসেবে আমি খুব দুঃখ পেয়েছি, একই সঙ্গে আমার মাথা নিচু হয়ে গেছে।’

তিন দশক ধরে এই খেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এই প্রথম আমি ১০০ মিটার ইভেন্টে মাত্র একজন প্রতিযোগীকে অংশ নিতে দেখলাম। এনএডিএ কর্মকর্তা পৌঁছাতেই প্রতিযোগীদের সংখ্যা অর্ধেক কমে যায়।’

অনূর্ধ্ব ২০ বছর বয়সী ছেলেদের ১০০ মিটারের ফাইনালে মাত্র তিনজন মাঠে হাজির হয়েছিলেন। আর অনূর্ধ্ব ১৬ বয়সী কিশোরদের গোলক নিক্ষেপ ইভেন্টে মাত্র একজন প্রতিযোগী অংশ নিয়েছেন।

দিল্লি স্টেট অ্যাথলেটিকস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সানি জোশুয়া বলেন, অনেক প্রতিযোগী তাঁদের পদক পর্যন্ত নিতে আসেননি। এই ঝরে পড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন জোশুয়া। এ ক্ষেত্রে তাঁদের তেমন কিছু করারও নেই বলে জানান তিনি।

জোশুয়া বলেন, ‘আমাদের কাজ হলো অ্যাথলেট ও কোচদের শেখানো। কিন্তু অনুশীলনের সময় বা আমাদের পেছনে তারা কী করছে, তা সারাক্ষণ নজরদারি করা সম্ভব নয়। অ্যাথলেটিকসের জন্য মাদক বড় এক হুমকি এবং আমরা এর বিরুদ্ধে।’

২৬ সেপ্টেম্বর শৌচাগারে রিকম্বিন্যান্ট হিউম্যান এরিথ্রোপয়েটিন (ইপিও) ইনজেকশনের খালি প্যাকেট পাওয়া যায়। এটি অ্যাথলেটরা ক্রীড়াকৌশল বাড়াতে গ্রহণ করেন।

স্পোর্টস মেডিসিনবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পি এস এম চন্দ্র বলেন, রক্তস্বল্পতায় ভোগা রোগীদের চিকিৎসা এই ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। ব্যবস্থাপত্র ছাড়া এই ওষুধ কেনার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু অ্যাথলেটরা ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই এগুলো কিনতে পারছেন। এই ওষুধ রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ায় এবং লম্বা সময় ধরে পরিশ্রম করার সক্ষমতা তৈরি করে।