মোদির তথ্যচিত্র নিয়ে দলের অবস্থানে ক্ষুব্ধ, অ্যান্টনির ছেলের কংগ্রেস ত্যাগ

গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে বিবিসির তথ্যচিত্রকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বিতর্কের মধ্যে দল ছাড়লেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনির পুত্র অনিল অ্যান্টনি। তথ্যচিত্রটি নিয়ে দলের আনুষ্ঠানিক অবস্থানের সমালোচনা করে বুধবার তিনি দলত্যাগের কথা জানান। অনিল অ্যান্টনি টুইট করে বলেন, ‘যাঁরা বাক্‌স্বাধীনতার কথা বলেন, আজ তাঁরাই অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছেন। আমি এই ভন্ডামির পক্ষে নেই। স্তাবকদের পাশে থাকারও ইচ্ছে আমার নেই। অনিল তাঁর ইস্তফাপত্র টুইটারে পোস্ট করেন।’

অনিল অ্যান্টনি কেরালা প্রদেশ কংগ্রেসের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সেলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিবিসির তথ্যচিত্রটিকে তিনি ভারতের সার্বভৌমত্বের পক্ষে বিপজ্জনক বলে মনে করেন। তাঁর মতে, যা ঘটেছে তা এক ভয়ংকর প্রবণতা। প্রাতিষ্ঠানিক (সুপ্রিম কোর্ট) অমর্যাদার নমুনা। তাঁর বাবা এ কে অ্যান্টনি গান্ধী পরিবারের অত্যন্ত কাছের নেতা। কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর সংশ্রব দীর্ঘ ছয় দশকের।  

বিবিসির বিতর্কিত তথ্যচিত্রটি নিয়ে এই মুহূর্তে দেশে রাজনৈতিক ঝড় বইছে। ভারতে সেটি না দেখানোর বন্দোবস্ত করেছে সরকার। সে জন্য আইনগত পথে ইউটিউব ও টুইটারকে ভারত সরকার নির্দেশ দিয়েছে। সরকারি আপত্তি ও নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে বিভিন্ন বিরোধী দল ও সংগঠন তথ্যচিত্রটি দেখাচ্ছে। কেরালায় শাসক বামপন্থী দল সিপিএম ও বিরোধী কংগ্রেস উভয় পক্ষই এই তথ্যচিত্র দেখানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

ইতিমধ্যেই তা দেখানো হয়েছে হায়দরাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। দেখানো হবে কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়েও। গত মঙ্গলবার রাতে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনের উদ্যোগে তা দেখানোর ব্যবস্থা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে। এ নিয়ে রাতে ধুন্ধুমার বেঁধে যায় সেখানে। বিদ্যুৎ–ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। অভিযোগ, বামপন্থী ছাত্রদের ওপর ইটপাথর ছুড়েছে বিজেপি ছাত্র সংগঠন।

অনিল অ্যান্টনি এই ‘অসহিষ্ণুতার’ সমালোচনা করেছেন। গত মঙ্গলবার টুইট করে তিনি বলেন, বিজেপির সঙ্গে মতপার্থক্য সত্ত্বেও তিনি মনে করেন এই তথ্যচিত্রটি সমর্থনীয় নয়। ভারত সম্পর্কে বিবিসির বিরূপ ধারণা বহু পরিচিত। জ্যাক স্ট্র (ব্রিটেনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী) ছিলেন ইরাক যুদ্ধের হোতা। তাঁদের বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ওই তথ্যচিত্রের উদ্দেশ্য ভারতের মানসম্মান নষ্ট করা। প্রতিষ্ঠানের মর্যাদাহানি করা। ভারতের মর্যাদা খাটো করে এমন কোনো দেশের প্রতি তিনি দরাজ বা উদার হতে পারবেন না। তাই বিবিসির তথ্যচিত্রের পক্ষ নিতে পারছেন না। বুধবার ঘোষণা করেন দলত্যাগের।

অনিলের অভিযোগ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে যাঁরা সরব, তাঁরাই তাঁকে চাপ দিচ্ছিলেন টুইট মুছে ফেলার। সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ গোলযোগ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ভারত শাসনের সুযোগ করে দিয়েছিল। স্বাধীনতার ৭৫তম বছরে এমন কিছু করা সাজে না, যাতে বিদেশি শক্তি দেশকে দুর্বল করতে উৎসাহিত হয়। বিবিসি তথ্যচিত্র নিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর মন্তব্য, সত্য কখনো চাপা থাকে না। সত্যের ধর্মই হলো প্রকাশিত হওয়া।

 বিবিসির তথ্যচিত্রকে সমর্থন করার দরুন কংগ্রেস ত্যাগের ঘটনা এটাই প্রথম। যদিও ভারত জোড়ো যাত্রা চলাকালে কংগ্রেস ছেড়েছেন পাঞ্জাবের সাবেক অর্থমন্ত্রী মনপ্রীত সিং বাদল। তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। কংগ্রেস ছেড়েছেন জম্মু-কাশ্মীরে দলের অন্যতম মুখপাত্র দীপিকা পুষ্কর নাথও। তবে তিনি অন্য কোনো দলে যোগ দেননি।