কংগ্রেসের সভাপতি হচ্ছেন অশোক গেহলট

রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট
ছবি: এএনআই

দলীয় প্রধান কে হবেন, তা নিয়ে ভারতের কংগ্রেস দলে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। তবে দলের পরবর্তী সভাপতি হিসেবে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের নাম বেশ জোরেশোরেই শোনা যাচ্ছে। ১৯৯৮ সালের পর প্রথমবারের মতো কংগ্রেসের সভাপতির নামের তালিকায় গান্ধী পরিবারের বাইরের কারও নাম এল। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহের মধ্যে তাঁর নাম ঘোষণা করা হতে পারে বলে দলের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

আজ বৃহস্পতিবার কলকাতায় অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির (এআইসিসি) এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, মোটামুটিভাবে কংগ্রেসের নতুন সভাপতির নাম চূড়ান্ত হয়েছে। আগামী ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কংগ্রেস সভাপতির নাম চূড়ান্ত করার কথা ছিল। কিন্তু সোনিয়া গান্ধীর অসুস্থতা ও তাঁর বিদেশযাত্রার কারণে নাম ঘোষণার সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। তাই অক্টোবরের শেষ সপ্তাহের মধ্যে কংগ্রেসের জাতীয় সভাপতির নাম ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন ওই এআইসিসি সদস্য।

কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের নাম কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি। এই কমিটির এক সদস্য কিছুদিন আগে কলকাতায় প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, গান্ধী পরিবারের বাইরে রাজ্য নেতাদের নামও কংগ্রেস সভাপতি পদের জন্য ভাবা হচ্ছে।

এআইসিসির সদস্য আরও বলেন, ‘প্রথমে পুরোপুরি রাজি না হলেও কংগ্রেসের শীর্ষ নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর অনুরোধে সভাপতির পদ গ্রহণ করতে রাজি হয়েছেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট।’ তবে গান্ধী পরিবারের তিন সদস্য দায়িত্ব নিতে না চাইলেই বিষয়টি নিয়ে ভাববেন বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

কংগ্রেসের ওই নেতা বলেন, দল সার্বিকভাবে এখনো চাইছে এবং চাইবে যে সোনিয়া গান্ধীর পর রাহুল গান্ধী, তিনি রাজি না হলে তাঁর বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী কংগ্রেসের দায়িত্ব নেন। গেহলটেরও সেই মত। কিন্তু রাহুল তিন বছর আগে পদ ছেড়ে দিয়েছেন এবং শারীরিক কারণে সোনিয়া গান্ধীর পক্ষে আর কাজকর্ম দেখাশোনা করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে রাজনীতির মাঠে দিনে দিনে ঝিমিয়ে পড়ছে কংগ্রসে। আবার সামনেই লোকসভার নির্বাচন আসছে। বিষয়টি মাথায় রেখেই গেহলটের সঙ্গে আলোচনা করেছেন সোনিয়া ও রাহুল।

বর্তমানে ভারতের রাজস্থান ও ছত্তিশগড় রাজ্যের ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে। এর মধ্যে রাজস্থান ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি রাজ্য। সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটকে ২০২৩ সালে রাজস্থান নির্বাচনের আগে সরানো ঠিক হবে কি না, সেটা নিয়েও দলে আলোচনা চলছে। তবে এ বিষয়ে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিই সিদ্ধান্ত নেবে।

তবে যাঁকে নিয়ে গুঞ্জন ও আলোচনা, সেই গেহলট অবশ্য এ প্রস্তাবের পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি শুধু বলেছেন, ‘আমরা শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যাব যেন রাহুল গান্ধী দলের সভাপতির পদ আবার গ্রহণ করেন।’

অশোক গেহলট স্বাধীন সমাজকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার বিভিন্ন শরণার্থীশিবিরে ঘুরে ঘুরে ত্রাণ বিতরণ করেছিলেন তিনি। শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সাধারণ মানুষকেও সংগঠিত করেছিলেন। সে সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর চোখে পড়ে যান তিনি। এর পর থেকেই রাজনীতিতে গেহলটের উত্থান শুরু হয়।

পশ্চিম ভারতের একজন জনপ্রিয় জাদুকরের ছেলে অশোক গেহলট ১৯৯৮ সাল থেকে তিন দফায় রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী পদে আছেন। অন্যতম সফল ও জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁকে চিহ্নিত করা হয়। বিজেপি নেতা অটলবিহারী বাজপেয়ী বা সিপিআইএম নেতা জ্যোতি বসুর মতোই সব দলের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ভেঙে পড়া ভারতের জাতীয় কংগ্রেসকে কোনো অবিশ্বাস্য ‘ম্যাজিকে’ এই জাদুকরের পুত্র লোকসভা নির্বাচনের আগে দাঁড় করাতে পারেন কি না, সেটাই দেখার বিষয়।