প্রতিবাদী কুস্তিগিরদের আখড়ায় রাহুল গান্ধী

কুস্তিগিরদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছেন রাহুল গান্ধীছবি: এএনআই

গোটা উত্তর ভারত আজ বুধবার যখন ঘন কুয়াশায় মোড়া, সেই সময় দিল্লি থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে হরিয়ানার ঝাঝর জেলায় এক কুস্তির আখড়ায় পৌঁছে গেলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। অলিম্পিক পদকজয়ী কুস্তিগির বজরঙ্গ পুনিয়ার সঙ্গে অন্যদের তখন দৈনন্দিন মহড়ার সময়। রাহুল পৌঁছাতেই তিনিই হয়ে উঠলেন মধ্যমণি। কুস্তির ম্যাটের ওপরেই তাঁকে ঘিরে শুরু হলো আড্ডা। ঘুরে ঘুরে রাহুল দেখলেন, কুস্তিগিরেরা কীভাবে নিজেদের তৈরি করেন।

জাতীয় ফেডারেশনের সাবেক সভাপতির বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ ঘিরে পদকজয়ী কুস্তিগিরদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে রাহুলের এ সফর এক ভিন্ন তাৎপর্য পেয়ে গেল। কুস্তি ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি ও উত্তর প্রদেশের গোন্ডা জেলা থেকে লোকসভায় নির্বাচিত বিজেপির প্রভাবশালী নেতা ব্রিজভূষণ শরণ সিংকে ঘিরে এক বছরের বেশি সময় ধরে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে দেশের প্রতিষ্ঠিত ১৭ নারী কুস্তিগির যৌন হেনস্তার অভিযোগ এনেছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন অপ্রাপ্তবয়স্কও ছিলেন।

ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকার এখন পর্যন্ত কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

একাধিক নারী কুস্তিগিরের অভিযোগ সত্ত্বেও পুলিশ তাঁকে এক দিনের জন্যও গ্রেপ্তার করেনি।

দিল্লির নিম্ন আদালত থেকে জামিন নিয়ে ব্রিজভূষণ মুক্ত। যদিও তাঁর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ফেডারেশনের ভোটে নির্বাচিত কমিটিকে স্থগিত ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। এ পরিস্থিতিতে হরিয়ানায় কুস্তির আখড়ায় রাহুলের যাওয়াকে রাজনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

সরকারের উদাসীনতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে ‘পদ্মশ্রী’ খেতাব ফেরত দিতে গিয়েছিলেন পদকজয়ী কুস্তিগির বজরঙ্গ পুনিয়া। তবে বাধা পেয়ে দিল্লির রাজপথে তা রেখে এসেছিলেন তিনি। ঝাঝরের ওই ‘বীরেন্দ্র আর্য আখড়া’য় অন্যদের সঙ্গে তিনি নিয়মিত অনুশীলন করেন। রাহুল চলে যাওয়ার পর সংবাদমাধ্যমকে পুনিয়া বলেন, ‘কুস্তিগিরদের দিনলিপি কেমন হয়, কীভাবে আমরা অনুশীলন করি, তা দেখতেই রাহুলের আসা।’

আখড়ায় আসার পর রাহুল তাঁর সঙ্গে কুস্তিও করেন বলে জানান পুনিয়া।

বেশ কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন পেশার মানুষদের কাছে যাচ্ছেন রাহুল। তাঁদের কাজগুলো কাছ থেকে দেখার চেষ্টা করছেন। ট্রাকচালকদের পাশে বসে তিনি দিল্লি থেকে চণ্ডীগড়ে গেছেন। বিদেশেও ভারতীয় ট্রাকচালকদের পাশে বসে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে তিনি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছেন। হরিয়ানায় কৃষকদের সঙ্গে খেতে নেমে ধান বোনা শেখার চেষ্টা করেছেন। মোটর মেকানিকদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করেছেন। খাবার সরবরাহকারীদের সঙ্গে মিশেছেন। আর এবার গেলেন কুস্তিগিরদের আখড়ায় তাঁদের দৈনন্দিন অনুশীলন দেখতে।

যদিও তাঁর এ যাত্রার সঙ্গে রাজনীতি মিশে আছে। ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে নারী কুস্তিগিরেরা যৌন হেনস্তার অভিযোগ আনার পর বিজেপি এ ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক খোঁজার চেষ্টা করে। এর সঙ্গে প্রাদেশিক রাজনীতিও জড়িয়ে যায়।

ব্রিজভূষণের অভিযোগ, হরিয়ানার কুস্তিগিরেরা ফেডারেশনে উত্তর প্রদেশের প্রাধান্য মেনে নিতে নারাজ।

সেই কারণে তাঁরা তাঁর বদনামে উঠেপড়ে লেগেছে।

হরিয়ানার কুস্তিগিরেরা অধিকাংশই জাট। কুস্তিতে জাট প্রাধান্যও প্রবল। ওই রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ২৮ শতাংশ জাট। ব্রিজভূষণ উত্তর প্রদেশের, ঠাকুর সম্প্রদায়ভুক্ত। তাঁর দাবি, ঠাকুর ও উত্তর প্রদেশের কাছ থেকে ফেডারেশনের কর্তৃত্ব হরিয়ানার জাট সম্প্রদায় ছিনিয়ে নিতে চায়। তাই তাঁর বিরুদ্ধে এ চক্রান্ত।

হরিয়ানার মোট লোকসভা আসন ১০টি। ২০১৯ সালের নির্বাচনে ১০ আসনেই বিজেপি জয়ী হয়েছিল।

বিজেপিকে কেন্দ্র থেকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হলে হরিয়ানাতেও কংগ্রেসের ভালো ফল হওয়া জরুরি। এ বছরের শুরুর দিকে কুস্তিগিরেরা যখন যন্তর–মন্তরে ধরনা দিয়েছিলেন, তখন হরিয়ানার সাবেক জাট মুখ্যমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা ভূপিন্দর সিং হুডা, তাঁর সংসদ সদস্য পুত্র দীপেন্দ্র সিং হুডাসহ বহু বিরোধী নেতা তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।

কুস্তি ফেডারেশনের নির্বাচনে ব্রিজভূষণের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সঞ্জয় সিং জয়ী হওয়ার পর প্রতিবাদ জানিয়ে কুস্তিগির সাক্ষী মালিক কুস্তি থেকে অবসর গ্রহণের ঘোষণা দেন। এক সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন তিনি। এরপরের দিন বজরঙ্গ পুনিয়া তাঁর ‘পদ্মশ্রী’ খেতাব ফিরিয়ে দেন। গত মঙ্গলবার ‘খেলরত্ন’ ও ‘অর্জুন পুরস্কার’ ফেরত দেন আরেক কৃতী কুস্তিগির বিনেশ ফোগত। সাক্ষী মালিক অবসর নেওয়ার কথা জানানোর পর কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী তাঁর বাড়িতে যান। তিনি সেখানে সাক্ষীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন।