কে হবেন ভারতের পরবর্তী উপরাষ্ট্রপতি, মোদি ফিরলে সিদ্ধান্ত
কে হবেন ভারতের পরবর্তী উপরাষ্ট্রপতি, সেই কৌতূহলের অবসান ঘটবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশে ফেরার পর। তবে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এটুকু বুঝতে পারছে, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে দলের প্রতি শতভাগ নিবেদিত, এমন কাউকে ওই পদে বসানো উচিত। বিদায়ী উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের আচরণ থেকে শিক্ষা নিয়েই বিজেপির ওই সিদ্ধান্ত।
ক্ষমতাসীন দলের পাশাপাশি বিরোধীরাও এই নির্বাচনকে ঘিরে কৌশলী হতে চাইছে। বিরোধীরা ঠিক করেছে, সম্মিলিত প্রার্থী ঠিক করেই তারা উপরাষ্ট্রপতি ভোটে লড়াই করবে। সে জন্য ইন্ডিয়া জোটের প্রতিটি শরিকের সঙ্গে কথা বলা হবে। হার অবধারিত জেনেও বিরোধীরা চাইছে বিহার ভোটের আগে নিজেদের ঐক্যবদ্ধতার প্রমাণ রাখতে। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস গতবারের মতো ভুল এবার আর করতে চায় না।
উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া নির্বাচন কমিশন শুরু করে দিলেও ভোট কবে হবে, সেই তফসিল এখনো ঘোষণা করেনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই দিনের যুক্তরাজ্য সফর শেষে আজ শুক্রবার মালদ্বীপে পৌঁছেছেন। সেখানেও দুই দিনের সফরে মালদ্বীপের ৬০তম স্বাধীনতা দিবস এবং ভারত–মালদ্বীপ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৬০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। নরেন্দ্র মোদি মালদ্বীপ সফর শেষ করে দেশে ফিরলে বিজেপি প্রার্থী পছন্দের কাজ সেরে ফেলবে। দ্বিধাহীন আনুগত্য আছে, এমন প্রার্থী বেছে নেওয়ার পর শরিকদের সঙ্গে বিজেপি নেতৃত্ব আলোচনা সারবে। দলের এক সূত্রের কথায়, এ ক্ষেত্রে বিজেপি শরিকদের সঙ্গে আগাম আলোচনায় বসতে বিশেষ রাজি নয়।
বিজেপি কাকে প্রার্থী ঠিক করে, তা দেখে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ তাদের প্রার্থী বাছাই নিয়ে আলোচনায় বসবে। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এবার কংগ্রেস গতবারের ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে রাজি নয়। ২০২২ সালে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অন্য কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই কংগ্রেস তাদের প্রার্থী মার্গারেট আলভার নাম ঘোষণা করেছিল। সেই প্রার্থীকে তৃণমূল কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টি মেনে নেয়নি। ওই দুই দল ধনখড় বা আলভা কাউকেই ভোট দেয়নি। বিরোধীদের মোট ৫৫ জন ভোটদানে বিরত ছিলেন। ধনখড় জিতেছিলেন ৩৪৬ ভোটে।
লোকসভা ও রাজ্যসভার সদস্যদের ভোটে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। দুই কক্ষেই সরকারপক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। কাজেই ‘ক্রস ভোটিং’ না হলে শাসক দলের প্রার্থীর জয় নিয়ে সংশয় নেই। লোকসভা ও রাজ্যসভার মিলিত সদস্যসংখ্যা ৭৮২। জয়ের জন্য প্রয়োজন ৩৯২ জনের সমর্থন। লোকসভায় বিজেপি ও তার জোটসঙ্গীদের মোট ভোট ২৯৩। রাজ্যসভায় শাসক জোটের রয়েছে ১৩০ জনের সমর্থন। তুলনায় লোকসভায় ইন্ডিয়া জোটের ভোট ২৩৪ জন, রাজ্যসভায় ৭৯।
দল ও আদর্শের প্রতি শতভাগ নিবেদিত ও প্রশ্নহীন আনুগত্য থাকা নেতার সংখ্যা বিজেপিতে কম নয়। তাঁদের মধ্যে কাকে উপরাষ্ট্রপতি করা যেতে পারে, তা চূড়ান্ত হবে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের আলোচনার ভিত্তিতে। বিজেপিতে এই মুহূর্তে মোদি ও অমিত শাহর ইচ্ছাই প্রথম ও শেষ কথা। তাঁরা চাইছেন রাজনাথ সিংয়ের মতো এমন কাউকে পছন্দ করতে, যিনি সংঘের আদর্শে অনুপ্রাণিত, দলের প্রতি নিবেদিত এবং সংসদীয় গণতন্ত্রে অভিজ্ঞ। প্রবলভাবে পরিচিত এবং বিরোধীদের সঙ্গে যাঁর রাজনৈতিক সখ্য সুবিদিত, এমন ব্যক্তিকে বেছে নিতে দল আগ্রহী। আবার বিহার বিধানসভা ভোট প্রভাবিত করবে, এমন কাউকে যদি প্রার্থী বাছতে হয় এবং সেই বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে যদি সর্বভারতীয় রাজনৈতিক বার্তা দিতে হয়, তাহলে আরিফ মহম্মদ খানের মতো কাউকে পছন্দ করা যেতে পারে। কংগ্রেস, জনতা দল ও বহুজন সমাজ পার্টি হয়ে আরিফ মহম্মদ খান ২০০৪ সালে বিজেপিতে যোগ দেন। মোদির বিশ্বাসভাজন আরিফ মহম্মদ খান কিছুকাল আগেও কেরালার রাজ্যপাল ছিলেন। বর্তমানে তিনি বিহারের রাজ্যপাল।