মার্কিন কংগ্রেস সদস্য আগ্রহ দেখিয়েও কেন রাহুলের সাক্ষাৎ পেলেন না

মার্কিন কংগ্রেস সদস্য রো খান্না ও ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী
ছবি: এএনআই

মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধিদলকে ভারত সরকার কি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেয়নি? প্রশ্নটা উঠেছে। কারণ, কংগ্রেস এ বিষয়ে ঘোরতর সন্দেহ প্রকাশ করেছে। তা ছাড়া মহাত্মা গান্ধীর প্রপৌত্র লেখক ও সমাজসেবী তুষার গান্ধীও মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দেখা করার পর জানিয়েছেন, মার্কিন প্রতিনিধিদের রাহুলের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন ভারতীয় বংশোদ্ভুত ডেমোক্র্যাট সদস্য রো খান্না। ভারত সরকারের আমন্ত্রণে এ দেশে এসে তাঁরা লাল কেল্লা থেকে স্বাধীনতা দিবসের পতাকা উত্তোলন দেখেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাষণ শোনেন। হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী মোদি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গেও তাঁরা বৈঠক করেন।

তুষার গান্ধী ছাড়াও এই সফরে রো খান্না ও তাঁর সফরসঙ্গীরা দেখা করেছেন অমিতাভ বচ্চন, অনুপম খেরের সঙ্গে। দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদী প্রবক্তা অভিজিৎ আইয়ার মিত্রর সঙ্গেও রো খান্না বৈঠক করেছেন। এ ছাড়া তিনি দেখা করেন জাতিগত দাঙ্গায় দীর্ণ মণিপুর ও সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হরিয়ানার নুহ জেলার একদল দুর্গত মানুষের সঙ্গে। তাঁর সাক্ষাৎপ্রার্থীদের মধ্যে ছিলেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা ও গবেষক ওমর খালিদের বাবা এস কিউ আর ইলিয়াসও। দেশদ্রোহের অভিযোগে ২০২০ সাল থেকে ইউএপিএ আইনে ওমর খালিদ বন্দী রয়েছেন।

রাহুল গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ না হওয়ার বিষয়ে মার্কিন প্রতিনিধিরা কোনো মন্তব্য করেননি। তবে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকা জানিয়েছে, রাহুলঘনিষ্ঠ নেতা ও কংগ্রেসের ডেটা অ্যানালিটিকস দপ্তরের প্রধান প্রবীন চৌধুরী তাদের বলেছেন, প্রতিনিধিদলের কেউ কেউ রাহুলের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। সে জন্য তাঁরা কংগ্রেস অফিসে যোগাযোগও করেছিলেন। কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে এ জন্য তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তাঁদের বলা হয়েছিল, আনুষ্ঠানিকভাবে আগ্রহ দেখালে সেই বন্দোবস্ত করা যেতে পারে।

প্রবীন চৌধুরী বলেন, কথা প্রসঙ্গে প্রতিনিধিরা বলেছিলেন, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলবেন। তখন তিনি তাঁদের বলেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাঁরা স্বাধীনভাবে যেকোনো ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে পারেন। কারও অনুমতির প্রয়োজন নেই। তবে এ নিয়ে তাঁরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলবেন কি না, তা একান্তই তাঁদের ব্যাপার।

মণিপুরের দুর্গত কুকি সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রো খান্না বলেন, তাঁরা সবাই নিজেদের ভারতীয় ভাবেন। ভারতকে ভালোবাসার কথা বলেছেন। সম্মানের সঙ্গে এ দেশে থাকার অভিপ্রায় জানিয়েছেন। কিন্তু বলেছেন, তাঁরা সংখ্যায় কম। রাজ্য ও কেন্দ্রে তাঁদের পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব নেই। তাঁরা চান তাঁদের দুর্দশার কথা তুলে ধরার মতো কেউ এগিয়ে আসুক। রো বলেন, ‘তাঁদের কথা শোনা জরুরি ছিল। আমি আমার দেশেও এমন বঞ্চিত মানুষের কথা শুনি।’

রো খান্নার সঙ্গে বৈঠকের পর তুষার গান্ধী সামাজিক মাধ্যম ‘এক্স’–এ (সাবেক টুইটার) একাধিক বার্তায় বলেন, ‘দেশের হাল এ মুহূর্তে কেমন, তা আমি তাঁকে জানিয়েছি। বলেছি, ভারত এখন ঘৃণা, হিংসা ও বিভাজনের নরকে নিমজ্জিত।’

তুষার গান্ধী এরপর লেখেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে রো দেখা করেছিলেন। রাহুল গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ তাঁরা বানচাল করে দিয়েছেন। তবে তিনি ওমর খালিদের বাবা ও মণিপুরের দুর্গত মানুষজনের সঙ্গে দেখা করেছেন।’ তুষার গান্ধী বলেন, রো খান্নাকে তিনি বলেছেন, আমেরিকার দক্ষিণপন্থীদের বিরুদ্ধেও দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে হবে।

দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদী প্রবক্তা অভিজিৎ আইয়ার মিত্রর সঙ্গে রো খান্না কেন দেখা করলেন, তা নিয়েও বিতর্ক উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ান–আমেরিকান মুসলিম কাউন্সিল এই সাক্ষাৎকার নিয়ে গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। মুসলমানদের যাঁরা ঘৃণার চোখে দেখেন ও হিংসায় উসকানি দেন, তাঁদের সঙ্গে দহরম–মহরম ওই সংগঠন ভালোভাবে নেয়নি।

রো খান্না অবশ্য সাধারণভাবে জানিয়েছেন, ‘আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বহুত্ববাদ, মুসলমানসহ সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার রক্ষার পক্ষে।’