আরএসএস প্রধানের মুখে ভিন্ন সুর, ৭৫ পেরোলেই অবসর নয়

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও আরএসএসের প্রধান মোহন ভাগবতফাইল ছবি: রয়টার্স

কিছুদিন আগেই যিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ৭৫ বছর পেরোনোর অর্থ নবীনদের সুযোগ দিয়ে সরে যাওয়া, সেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) চালক মোহন ভাগবত সুর বদলালেন। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, কখনো এমন কিছু বলেননি যে ৭৫ বছর বয়স হলে সবার পদ ছাড়া উচিত কিংবা তিনি ছেড়ে দেবেন। সংঘে এমন কোনো নিয়মও নেই।

আরএসএসের শতবর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শেষ দিনে সংঘচালক মোহন ভাগবত বলেন, ‘আমরা সবাই স্বয়ং সেবক। আমাদের যাঁকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়, আমরা তাই পালন করি। ৮০ বছর বয়সেও যদি আমাকে বলা হয়, অমুক কাজ করে যেতে হবে, তবে তাই আমি করব।’

মোহন ভাগবতের এ মন্তব্য নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে জল্পনা। তবে কি তিনি বুঝিয়ে দিলেন, ১১ সেপ্টেম্বর ৭৫ পূর্ণ করে ৭৬ বছরে পৌঁছালেও তিনি অবসরে যাচ্ছেন না? একইভাবে তাঁর চেয়ে মাত্র ৬ দিনের ছোট ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও ৭৫ পূর্ণ হওয়ার পর দায়িত্বমুক্ত হতে হচ্ছে না?

বেশ কিছুদিন ধরেই ভারতীয় রাজনীতিতে এ নিয়ে চর্চা চলছে। চর্চার কারণ দুটি। প্রথমত, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়ে নরেন্দ্র মোদি ৭৫ পার হওয়া শীর্ষ নেতাদের অবসর নিতে বাধ্য করেছিলেন। লালকৃষ্ণ আদভানি, মুরলি মনোহর যোশী, যশোবন্ত সিং, যশবন্ত সিনহাদের মতো নেতাকে সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরিয়ে ‘মার্গদর্শক’ বা পরামর্শদাতা করে দিয়েছিলেন। তখনই তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, পঁচাত্তরোর্ধ্ব নেতাদের অবসরে যাওয়ার বয়স ওটাই।

মোদির তৈরি নিয়মে যে তাঁরও সায় রয়েছে, সে বার্তা এরপর স্পষ্ট করে দেন মোহন ভাগবত। কিছুদিন আগে নাগপুরে এক অনুষ্ঠানে তিনি একসময়ের শীর্ষ সংঘ নেতা মোরেপন্ত পিঙ্গলের একটি উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন।

ভাগবত ওই অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, মোরেপন্ত রসিক মানুষ ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ৭৫ বছর বয়স হওয়ার পর কাউকে যদি কোনো অনুষ্ঠানে গায়ে শাল জড়িয়ে সংবর্ধনা জানানো হয়, তাহলে বুঝতে হবে উদ্যোক্তারা তাঁকে সরে যেতে বলছেন। বলা হচ্ছে, অনেক বয়স হয়েছে আপনার। এবার নবীনদের সুযোগ দিন।

ভাগবতের ওই মন্তব্যের পর থেকেই প্রবল জল্পনা শুরু হয়। মনে করা হয়, তাঁর ওই মন্তব্যের লক্ষ্য ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। এ নিয়ে অনেক লেখালিখিও হয়েছে। ভাগবত কখনো কিন্তু সেসব লেখা বা নিবন্ধের বিরোধিতা করেননি।

গতকাল বৃহস্পতিবার সংঘের ওই অনুষ্ঠানের পর সংবাদ সম্মেলনে ভাগবতকে তাঁরই করা মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসা করা হয়, পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত ব্যক্তির ক্ষেত্রেও ৭৫–এর নিয়ম কার্যকর হবে কি না।

জবাবে ভাগবত তাঁর মন্তব্যের ব্যাখ্যা করে বলেন, তিনি কখনোই বলেননি ৭৫ পেরোলে অবসর নেবেন বা অন্যদেরও তা করা উচিত। আরএসএস প্রধান বলেন, ‘আমরা সবাই স্বয়ং সেবক। প্রত্যেককেই কিছু না কিছু দায়িত্ব দেওয়া আছে। ৮০ বছর বয়স হলেও আমাকে যদি সংঘ একটা শাখা চালানোর দায়িত্ব দেয়, তাহলে সেই দায়িত্ব আমাকে পালন করতে হবে। সংঘ যত দিন চাইবে, আমরা সবাই তত দিন কাজ করে যাব।’

আরএসএসে বয়সের কোনো সীমারেখা টানা নেই। অতীতের অনেক সংঘচালক ৮০ বছর বয়সেও পদাসীন ছিলেন। বিজেপিতেও এমন কোনো লিখিত নিয়ম নেই যে ৭৫ বছরের পর অবসর নিতে হবে। বরং মোদিপন্থীরা একাধিকবার বলেছেন, ২০২৯ সালের সাধারণ নির্বাচনেও বিজেপির নেতৃত্ব দেবেন নরেন্দ্র মোদি। মোহন ভাগবতের ব্যাখ্যা ওই জল্পনায় আপাতত জল ঢালবে বলেই বিজেপির একাংশের ধারণা।

বৃহস্পতিবার মোহন ভাগবত ভারতীয় দম্পতিদের তিনটি করে সন্তান গ্রহণের পক্ষে মত দেন। তিনি বলেন, তিনটির কম সন্তান হলে বংশবিস্তারে বাধা পড়ে, গতি রোধ হয়। কোনো কোনো গোষ্ঠী এভাবে বিলুপ্তির পথে এগিয়ে গেছে। তিনি বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২ দশমিক ১ শতাংশ ধরে রাখা দরকার। না হলে একদিন জাতির অবলুপ্তি ঘটবে। বহু সভ্যতার এভাবে অবলুপ্তি ঘটেছে।