সিএএ কার্যকর হওয়ায় আনন্দের পাশাপাশি শঙ্কায় আছে মতুয়া সম্প্রদায়

ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বাতিলের দাবিতে অল আসাম স্টুডেন্ট ইউনিয়নের সদস্যরা মশালমিছিল করেন। গুয়াহাটি, ১২ মার্চছবি: এএনআই

ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর হওয়ায় আনন্দের পাশাপাশি শঙ্কায় আছে মতুয়া সম্প্রদায়। তাদের প্রশ্ন, সিএএর শর্তে যে কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে, তার কিছুই শরণার্থীদের কাছে নেই। এ অবস্থায় তাঁরা কীভাবে নাগরিকত্ব পেতে পারেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মতুয়া সমাজের একটি গোষ্ঠীর এক নেতা আজ বৃহস্পতিবার সকালে টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইনটি বাস্তবায়নের পরে মতুয়া সমাজে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। দুটি জিনিস লক্ষ করা যাচ্ছে। একদিকে আমাদের সমাজের মানুষ নাগরিকত্ব পাওয়ার আশায় আনন্দ করছেন, তেমনি অন্যদিকে প্রবল আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।’

আশঙ্কার কারণও ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ওই নেতা বলেন, ‘নিয়ম এবং শর্ত যেগুলো প্রকাশ্যে আনা হয়েছে, তা দেখে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত শরণার্থীদের পূর্ণ করতে হবে। আমরা কোনো শর্ত সাপেক্ষে নাগরিকত্ব চাইনি, চেয়েছিলাম বিনা শর্তে। কিন্তু সেটা করা হয়নি। দ্বিতীয়ত, ভারতে প্রবেশের তারিখ জানতে চাওয়া হয়েছে। এখন এই আইন যদি ভবিষ্যতে ফের পরিবর্তন করা হয় এবং পুরোনো তারিখে (মার্চ ২৪, ১৯৭১) ফিরে যাওয়া হয়, তবে গত ১০-১৫ বছরে যারা ভারতে এসেছে, তাদের কী হবে? ভারতে আইন তো পরিবর্তিত হয়। এই আইনও তো নতুন।’

২০১৯ সালে নরেন্দ্র মোদির সরকার এই আইন পাস করেছিল। আইনে বলা হয়, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে যেসব হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন ও পার্সিধর্মীয় সংখ্যালঘু সাম্প্রদায়িক নির্যাতন ও নিপীড়নের কারণে ভারতে চলে এসেছেন, এ আইনে তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। চার বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর লোকসভা ভোটের ঠিক আগে গত সোমবার (১১ মার্চ) আইনটি সারা দেশে কার্যকর হয়।

এই আইন বাস্তবায়নের পরে উত্তর-পূর্ব ভারত, পশ্চিমবঙ্গ এবং দিল্লি ছাড়াও দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু ও কেরালায় সিএএর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে।

আজ ভারতের সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, এই আইন কোনো অবস্থাতেই বাতিল করা হবে না। তিনি বলেন, ‘সিএএ কখনোই ফিরিয়ে নেওয়া হবে না। আমাদের দেশে ভারতীয় নাগরিকত্ব নিশ্চিত করা আমাদের সার্বভৌম অধিকার, আমরা এটির সঙ্গে কখনোই আপস করব না।’

আইনের শর্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে না পারলে আবেদনকারীদের কীভাবে সাহায্য করা যায়, সে বিষয়ে সরকার পরে চিন্তাভাবনা করবে বলে জানিয়েছেন অমিত শাহ। তিনি বলেন, ‘যাদের কাছে নথি নেই, তাদের জন্য একটি উপায় খুঁজে বের করব। কিন্তু যাদের নথি রয়েছে, তাদের সংখ্যা ৮৫ শতাংশের বেশি। (এই কাগজপত্র দেওয়ার) কোনো সময়সীমাও নেই।’

ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে স্টুডেন্টস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার সদস্যরা বিক্ষোভ করেন। আম্বেদকর ইউনিভার্সিটি, নয়াদিল্লি, ১৪ মার্চ
ছবি: এএনআই

প্রতিবাদ করলেই গ্রেপ্তার

সিএএর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস ফ্যাকাল্টিতে সিপিআইএম দলের ছাত্রসংগঠন স্টুডেন্ট অব ইন্ডিয়ার (এসএফআই) প্রায় ৩০ ছাত্রছাত্রীকে বুধবার বিকেলে দিল্লি পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

দিল্লি পুলিশের এক কর্মকর্তা অঞ্জিথা চেপিয়ালা বলেন, ‘২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। তাই আমরা তাদের আটক করছি। তাদের প্রতিবাদ বা জমায়েত করার অনুমতি নেই, তারা বিশেষ অনুমতিও নেয়নি।’

প্রায় একই কায়দায় আসামেও জমায়েত করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে গুয়াহাটির বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। এক নারী সমাজকর্মী প্রথম আলোকে টেলিফোনে বলেছেন, জম্মু-কাশ্মীরে সংবিধানের ৩৭০ ধারা খারিজের পরে যে কায়দায় সেখানকার স্বীকৃত রাজনৈতিক দলকে মিটিং–মিছিল বা বিক্ষোভ করতে দেওয়া হয়নি, সেই একই কায়দায় আসামেও প্রতিবাদ সভা বন্ধের চেষ্টা করা হচ্ছে।

আন্দোলনের কারণে ভাঙচুর এবং সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি হলে সেই ক্ষতিপূরণ রাজনৈতিক নেতাদের দিতে হবে বলে পুলিশ সতর্কবার্তা পাঠাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা।