মণিপুরে আগ্নেয়াস্ত্র সমর্পণ শুরু করেছেন ‘স্থানীয় বাসিন্দারা’

মণিপুরে পুলিশের কাছে বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ভারত, ২ জুন
ছবি: এএনআই

ভারতের মণিপুর রাজ্যে ‘স্থানীয় বাসিন্দারা’ আগ্নেয়াস্ত্র সমর্পণ শুরু করেছেন। এই বাসিন্দাদের মধ্যে কারা আছেন, সেটি জানা যায়নি। ইতিমধ্যে পুলিশের কাছে ১৪০টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা পড়েছে। শুক্রবার রাজ্য পুলিশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে।

কী ধরনের অস্ত্র জমা পড়েছে, তারও একটি তালিকা প্রকাশ করেছে মণিপুর পুলিশ। এর মধ্যে রয়েছে সেলফ লোডিং রাইফেল (এসএলআর)-২৯, ছোট ব্যারেলের কারবাইন, কালাসনিকভ (একে) ঘরানার অটোমেটিক রাইফেল, ভারতে তৈরি রাইফেল ইনসাস প্রভৃতি।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, শুক্রবার থেকে বেআইনি অস্ত্রের খোঁজে বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি চালাবে পুলিশ।

অমিত শাহ বলেন, ‘আমি অস্ত্রবিরতির মধ্যে থাকা গোষ্ঠীগুলোকে স্পষ্ট জানাতে চাই, অস্ত্রবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন করা হলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। চুক্তির শর্তাদি কঠোরভাবে পালন করা হবে।’ ২০০৮ সালে কুকি ও অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে অস্ত্রবিরতি চুক্তি হয়েছিল। তাই মনে করা হয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ এ কথা বলেছেন কুকিদের উদ্দেশে।

যদিও কুকি গোষ্ঠীগুলো বারবার অভিযোগ করেছে, আরামবাই টেঙ্গল ও মেইতেই লিপুনের মতো দুটি মেইতেই উগ্রপন্থী গোষ্ঠী পুলিশের অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র লুট করেছে।

মণিপুরে পুলিশ ও বিভিন্ন বাহিনীর চার হাজারের বেশি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়েছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর অস্ত্রাগার ও রিজার্ভ ব্যাটালিয়নের অস্ত্রাগারও লুট হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আবেদনের অনেক আগেই মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং স্থানীয় মানুষের কাছে এক আবেদনে অস্ত্র ফেরত চেয়েছিলেন।

প্রশাসনিক সূত্র থেকে জানা গেছে, কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ নিজের বা স্বজাতির মানুষের প্রাণ বাঁচাতে আক্রান্ত হওয়ার আগেই অস্ত্র আক্রমণকারীদের হাতে তুলে দেয়। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এই অস্ত্র জমা না পড়লে আবার নতুন করে সংঘাতের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মণিপুরে প্রায় এক মাস ধরে চলা হিংসার বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। কোনো হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ তদন্ত করবেন। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইও পৃথক তদন্ত করবে। একটি যৌথ নিরাপত্তা কমান্ডও গঠন করা হয়েছে আধা সামরিক বাহিনী সিআরপিএফের (সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স) সাবেক প্রধান কুলদীপ সিংহের নেতৃত্বে। এই কমান্ড বিভিন্ন বাহিনীকে নিয়ে সার্বিক নিরাপত্তা খতিয়ে দেখবে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন।

মণিপুরের রাজ্যপাল অনুসূইয়া উইকের নেতৃত্বে একটি শান্তি কমিটি গঠন করা হবে, যা সমাজের সব অংশের ও সম্প্রদায়ের মানুষকে নিয়ে জাতিভিত্তিক বিরোধের বিভিন্ন দিক চিহ্নিত করবে এবং কেন্দ্র সরকারকে সমাধানের প্রস্তাব দেবে।