মণিপুরের আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে, পুলিশপ্রধানকে আদালতে তলব
মণিপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। তদন্তের কাজও অত্যন্ত শ্লথ। এ অবস্থায় এই সহিংসতার তদন্ত–সম্পর্কিত পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে রাজ্য পুলিশের মহাপরিচালককে (ডিজি) সুপ্রিম কোর্টে তলব করা হয়েছে। আগামী সোমবার এই পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রধান বিচারপতির এজলাসে সব ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো প্রস্তুতি নিয়ে আসতে বলা হয়েছে।
মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আনা বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাব আলোচনার দিন স্থির হয়েছে ৮ ও ৯ আগস্ট। দুই দিন আলোচনার পর ১০ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জবাবি ভাষণ দেবেন ঠিক হয়েছে। ১১ আগস্ট সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন শেষ হবে।
গতকাল সোমবারও সুপ্রিম কোর্টে শুনানির সময় মণিপুর সরকার নাজেহাল হয়েছিল। মঙ্গলবারও প্রবলভাবে ভর্ৎসনা করা হয়। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় সলিসিটর জেনারেলকে বলেন, সব দেখেশুনে মনে হচ্ছে, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা বলে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। তদন্ত চলেছে না চলার মতো; গতি অত্যন্ত শ্লথ। ঘটনা ও এফআইআর দাখিলের মধ্যে ফাঁক রয়েছে বিস্তর। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান সংগ্রহে অহেতুক বিলম্ব হয়েছে। ধরপাকড় করা হয়েছে নামমাত্র অভিযুক্তকে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, নিশ্চিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে রাজ্যের সম্পূর্ণ ছবি জানার জন্য রাজ্য পুলিশের মহাপরিচালকের বক্তব্য শোনা প্রয়োজন। সেই জন্য তাঁকে সবকিছু জেনে-বুঝে সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো প্রস্তুত হয়ে এজলাসে হাজির হতে বলা হয়েছে। আগামী সোমবার পরবর্তী শুনানি হবে।
এ সময়ের মধ্যে ভাইরাল হওয়া ভিডিওর দুই নির্যাতিত নারীর জবানবন্দি রেকর্ড করার অনুমতি কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআইকে দেওয়া হয়েছে।
মণিপুর রাজ্যের হয়ে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জে বি পর্দিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রর বেঞ্চকে জানান, ৩ মে থেকে চলমান সহিংসতায় রাজ্যে ৬ হাজার ৫৩২টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১টি নারী ও শিশুদের ওপর অত্যাচারসংক্রান্ত।
সলিসিটর জেনারেল সহিংসতা সম্পর্কে একটি নথি জমা দিলেও বিচারপতিদের বহু প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। এর ফলে রাজ্য পুলিশের মহাপরিচালককে প্রস্তুত হয়ে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে তদন্ত চলেছে ঢিমেতালে। ঘটনা ঘটা ও অভিযোগ দাখিল হওয়ার মধ্যে কেটে গেছে দীর্ঘ দুই মাস। ধরপাকড় করা হয়েছে নামমাত্র কয়েকজনকে; তা-ও ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর।
বোঝা যাচ্ছে, মে মাসের শুরু থেকে জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা বলে কোনো কিছুই অবশিষ্ট ছিল না।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বোঝাই যাচ্ছে রাজ্য পুলিশ অপদার্থ। সাড়ে ছয় হাজার এফআইআর হয়েছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে মাত্র সাতজনকে! সলিসিটর জেনারেল এ সময় জানান, ভাইরাল ভিডিওর ক্ষেত্রে ওই সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা ২৫০ জন।