বিজেপির ভারতে নতুন পাঠ্যবই: আকবরকে সহিষ্ণু তবে বর্বর, বাবরকে নির্মম বলে উল্লেখ

এনসিইআরটির উদ্যোগে অষ্টম শ্রেণির নতুন ইতিহাস বই প্রকাশিত হয়েছে।

ইতিহাসের আলোয় মোগল সম্রাট আকবর এতকাল যেভাবে পরিচিত হয়ে এসেছেন, ভারতে বিজেপি সরকারের এই আমলে এবার তার বদল ঘটতে চলেছে। এনসিইআরটির উদ্যোগে প্রকাশিত অষ্টম শ্রেণির নতুন ইতিহাস বইয়ে আকবরের পরিচয় আর শুধু ‘মহামতি’ নয়, তিনি একই সঙ্গে ‘সহনশীল’ ও ‘বর্বর’। এবার থেকে তিনি ও তাঁর শাসনকাল পরিচিত হবে এই দুই বিপরীতধর্মী বিশেষণে।

আর নতুন ইতিহাস বইয়ে বাবরের পরিচয় ‘নিষ্ঠুর নির্মম বিজেতা, যিনি শহরের সমগ্র মানুষজন হত্যা করেছিলেন’। অন্যদিকে আওরঙ্গজেব ছিলেন এক ‘নির্দয় সামরিক শাসক, যিনি একের পর এক মন্দির ও গুরুদ্বার ধ্বংস করে গেছেন’।
অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে মোগল সম্রাটেরা একে একে এভাবেই পরিচিতি পেয়েছেন। এনসিইআরটির পাঠ্যক্রমের এই বই, ‘এক্সপ্লোরিং সোসাইটি: ইন্ডিয়া অ্যান্ড বিয়ন্ড’ চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছে। মোগল ছাড়াও দিল্লি সুলতানি পর্ব, মারাঠা এবং ঔপনিবেশিক যুগের সঙ্গেও শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

নতুন এই পাঠ্যবইয়ের শুরুর দিকের এক অধ্যায়ের শিরোনাম, ‘নোট অন সাম ডার্কার পিরিয়ডস ইন হিস্ট্রি’। অর্থাৎ ইতিহাসের অন্ধকারাচ্ছন্ন অধ্যায় সম্পর্কে কিছু তথ্য। সেখানে যুদ্ধ ও রক্তপাতের মতো সংবেদনশীল ও সহিংস ঘটনাগুলো অন্তর্ভুক্ত করার প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে।

এই অধ্যায়ে শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে, ‘নিষ্ঠুর সহিংসতা, অসম্মানজনক অপশাসন ও ক্ষমতার উচ্চাকাঙ্ক্ষার ঐতিহাসিক উৎপত্তি’ কোথায়। সেই প্রেক্ষাপট লিপিবদ্ধ করার পর বলা হয়েছে, ‘অতীতের এই ঘটনার জন্য আজ কাউকে দায়ী করা ঠিক হবে না।’

প্রথম মোগল সম্রাট বাবরের পরিচয় হিসেবে বলা হয়েছে, তিনি ‘সংস্কৃতিমনস্ক বুদ্ধিজীবী শাসক’ হলেও একই সঙ্গে ছিলেন এক ‘নিষ্ঠুর নির্মম বিজেতা, যিনি শহরের সব মানুষকে হত্যা করেছিলেন, শিশু ও নারীদের দাস করে রেখেছিলেন এবং মৃত মানুষের মাথার খুলি দিয়ে তোরণ নির্মাণ করেছিলেন’।

বইয়ে আকবরের রাজত্বকাল চিত্রিত ‘বর্বরতা অথচ সহনশীলতার’ প্রতিমূর্তি হিসেবে। তিনি প্রশাসনের উচ্চমহলে ‘অমুসলিমদের সংখ্যালঘুতে’ পরিণত করেছিলেন। চিতোরগড় অবরোধ করার সময় তিনি ‘৩০ হাজার নিরস্ত্র মানুষকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন’।

এই বইয়ে ‘জিজিয়া’ করের উল্লেখ রয়েছে। বলা হয়েছে, এই কর অমুসলিম জনসাধারণের ওপর বসানো হয়েছিল তাদের রক্ষার জন্য এবং সৈন্যবাহিনীতে যোগ না দেওয়ার জন্য। তবে ওই কর ছিল অসম্মান আর অপমানের উৎস, যা থেকে বাঁচতে অমুসলিমদের ধর্মান্তরে উৎসাহী করে তোলা হতো।

এই পাঠ্যপুস্তকে ‘নিষ্ঠুরতা, বর্বরতার’ পাশাপাশি স্থান পেয়েছে ‘প্রতিরোধ ও প্রাণোচ্ছলতার’ ইতিহাস। মারাঠা, অহম, রাজপুত ও শিখদের বীরত্ব তুলে ধরা হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে জাট কৃষক, ভিল, গোন্ড, সাঁওতাল ও কোচ উপজাতিদের তেজস্বীয়তার আখ্যান, যাঁরা নিজেদের এলাকা রক্ষার লড়াইয়ে কখনো পিছপা হননি। ছত্রপতি শিবাজি, তারাবাঈ, আহিল্যাবাঈ হোলকারদের ‘দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতা’ হিসেবে বর্ণনা করে বলা হয়েছে, দেশের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নে তাঁদের অবদান অপরিসীম।

আরও পড়ুন

ছত্রপতি শিবাজি বর্ণিত হয়েছেন ‘দুর্দান্ত কুশলী’ হিসেবে যিনি ‘অন্য ধর্মকে সম্মান জানানোর পাশাপাশি হিন্দু মূল্যবোধের ধ্বজা তুলে ধরেছিলেন’।

এনসিইআরটির সমাজবিজ্ঞান পাঠ্যসূচির অন্যতম প্রধান মাইকেল ড্যানিনো এই পাঠ্যবইকে সমর্থন জানিয়ে সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, ‘এই ইতিহাসে মোগলদের দানব হিসেবে চিত্রিত করার কোনো চেষ্টা ছিল না।’

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বি এল ভার্মা বলেছেন, ‘মোগলরা দীর্ঘকাল রাজত্ব করে গেছে। পরবর্তী প্রজন্মের জানা উচিত, সেই সময়কালে কী কী ঘটেছিল। আমাদের সবাইকে সত্য মেনে নিতে হবে।’