মোদিকে কাপুরুষ ও অহংকারী বললেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী

প্রিয়াঙ্কা গান্ধী
ছবি: এএনআই

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ‘কাপুরুষ ও অহংকারী’ আখ্যা দিয়ে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বললেন, ‘চাইলে আপনি আমাকেও গ্রেপ্তার করুন।’

রাহুল গান্ধীর সংসদ সদস্য পদ খারিজের প্রতিবাদে আজ রোববার দিল্লিতে রাজঘাটে কংগ্রেসের ডাকা ‘সংকল্প সত্যাগ্রহ’ আন্দোলনে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘আপনি কাপুরুষ। এ দেশের প্রধানমন্ত্রী কাপুরুষ। আমার বিরুদ্ধে মামলা করুন। জেলে পাঠান। কিন্তু সত্য এই যে এ দেশের প্রধানমন্ত্রী কাপুরুষ। ক্ষমতার আড়ালে তিনি লুকিয়ে রয়েছেন। তিনি অহংকারী।’

প্রিয়াঙ্কা একই সঙ্গে জানিয়ে দেন, ‘এ দেশের বহু পুরোনো পরম্পরা, হিন্দুধর্মের ঐতিহ্যপূর্ণ পরম্পরা—এটাই যে দেশের মানুষ অহংকারী রাজাকে চিনে নেয়। দেশবাসী অহংকারী রাজাকে শাস্তি দেয়।’ তিনি বলেন, ‘আমার পরিবার এই শিক্ষা দিয়েছে যে এই দেশ মনের কথা বলে, মন দিয়ে দশের কথা শোনে। এ দেশ সত্যকে চিনে নেয়। আমার বিশ্বাস, আজ সেই দিন এসেছে। সবকিছু বদলে যাবে।’

সরকারকে আক্রমণ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘আমার ভাই শহিদের ছেলে। তাঁকে আপনারা মির জাফর বলেছেন। আমার মাকে অসম্মান করেছেন। আপনার দলের এক মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন রাহুল তাঁর মায়ের নাম জানেন না। প্রতিদিন আপনি আমাদের পরিবারকে অপমান অসম্মান করে চলেছেন। অথচ কোনো মামলা হয় না! কারও সাজা হয় না!’

বিজেপি প্রচার করছে, ‘মোদি’ পদবি নিয়ে কটূক্তির মাধ্যমে রাহুল দেশের অনগ্রসর সমাজকেই অসম্মান করেছেন। সেই প্রচারের পাল্টা জবাবে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, ‘রাহুল অর্থ পাচারকারী পলাতকদের কথা বলেছিলেন, যারা কালোটাকা হাতিয়ে দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছে। নীরব মোদি কি অনগ্রসর? মেহুল চোকসি অনগ্রসর? ললিত মোদি অনগ্রসর? ওরা সবাই অর্থ পাচারকারী পলাতক।’ এই প্রশ্নে প্রিয়াঙ্কাও বলেন, ‘কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পদযাত্রায় যিনি সবাইকে একজোট হওয়ার কথা বললেন, সৌভ্রাতৃবোধের কথা বললেন, ঐকবদ্ধ হওয়ার কথা শোনালেন তাঁকে কিনা বলা হচ্ছে অনগ্রসরবিরোধী? আরে রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রা ছিল তো এই হিংসার বিরুদ্ধেই?’  

আজ রাজঘাটের সত্যাগ্রহে কংগ্রেসের নেতাদের সঙ্গে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী
ছবি: এএনআই টুইট

কেন রাহুল গান্ধীকে সাংসদ পদ হারাতে হলো, কেন সরকারের এটা এক গভীর চক্রান্ত, রাহুলকে চুপ করিয়ে সরকার কাকে বাঁচাতে চায়, ভাষণে প্রিয়াঙ্কা তা স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘রাহুল কী অপরাধ করেছেন বলুন তো? কয়েকটা প্রশ্ন করেছেন শুধু। সেটাই তো গণতন্ত্র? গণতন্ত্রের নিয়মই তো প্রশ্ন করা? সেই অধিকারটুকুও কেড়ে নেওয়া হলো কেন? কারণ, স্রেফ একজনকে বাঁচাতে।’ প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘দেশের মানুষ কি বুঝতে পারছে না একটা সরকার, সরকারের পুরো মন্ত্রিসভা কেন একটা মানুষকে বাঁচাতে চাইছে? কে এই আদানি, যাঁর নাম শুনলেই সরকার তাঁকে বাঁচাতে উঠেপড়ে লাগছে?’

প্রিয়াঙ্কা বলেন, সরকার বুঝেছে রাহুল সংসদে এই প্রশ্নই বারবার করবেন, যার কোনো জবাব তাদের নেই। যে জবাব সরকার দিতে পারবে না। ভীত সরকার তাই শুরু করল রাহুলের সংসদ সদস্য পদ খারিজের চক্রান্ত। সেই চক্রান্তের চরিত্র স্পষ্ট করে প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘ওরা কী করেছে শুনুন। যে ব্যক্তি সুরাটে রাহুলের বিরুদ্ধে মামলা লড়েছিলেন, গত বছর তিনি নিজেই আদালতে শুনানি স্থগিত রাখার আবেদন করেছিলেন। নিজেই নিজের করা মামলা স্থগিত করে দেন। সেই ব্যক্তি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়ে কবে ফের আদালতে গেলেন? সংসদে মোদি–আদানি সম্পর্ক নিয়ে রাহুল প্রশ্ন তোলার এক সপ্তাহ পরে। কী আশ্চর্য, মামলার স্থগিতাদেশ উঠে গেল! এক মাসের মধ্যে শুনানিও শেষ! রাহুলের দুই বছরের শাস্তিও হয়ে গেল!’ প্রিয়াঙ্কার প্রশ্ন, ‘দেশে কত মামলা বিচারের অপেক্ষায় পড়ে রয়েছে? কত মানুষ ১০ বছর ধরে বিচারের অপেক্ষায় জেলে পচছেন? তাদের শুনানি পর্যন্ত হয় না। অথচ এ ক্ষেত্রে শুনানি, রায় ও সাজা সব পট পট করে হয়ে গেল! পরের দিন বলেও দিল রাহুল গান্ধী আট বছর ভোটে লড়তে পারবেন না!’

রাহুলকে শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি বিরোধী ঐক্যের অনুঘটক হয়ে উঠতে পারে, সেই উপলব্ধি কংগ্রেসের হয়েছে। সংসদ সদস্য পদ খারিজের ঘোষণার পর যেভাবে বিরোধী দলের নেতারা সরকারের বিরোধিতা ও কংগ্রেসের সমর্থনে বিবৃতি দিয়েছেন, তাতে সেই সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। কংগ্রেসও সময় নষ্ট না করে সেদিনই সব বিরোধী দলকে ধন্যবাদ জানায়। পরের দিন রাহুল নিজেও সংবাদ সম্মেলনে বিরোধীদের ধন্যবাদ জানিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াইয়ের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। আজ সংকল্প সত্যাগ্রহের মঞ্চ থেকে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেও সেই প্রসঙ্গের অবতারণার পর প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘আজ সব দল আওয়াজ উঠিয়েছে। প্রত্যেককে আমরা এ জন্য ধন্যবাদ জানাই। আমাদের সবাইকে একজোট হতে হবে। জোটবদ্ধ হতে হবে, কারণ দেশ আজ গভীর বিপদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। দেশের সব সম্পত্তি আজ একজন ব্যক্তিকে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে আর সেই ব্যক্তিকে বাঁচাতে পুরো সরকার এক হয়ে যাচ্ছে। এটা বড় ভুল হচ্ছে। এই ভুল বুঝতে না পারলে দেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাবে।’